Thank you for trying Sticky AMP!!

এক দশক পরও রয়ে গেল নিরাপত্তা ত্রুটি 

পশ্চিমা অনেক পোশাক ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেনি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)

বাংলাদেশের সাভারের রানা প্লাজা ধসের এক দশক পরও পোশাক খাতে ত্রুটি রয়ে গেছে। এই সময়ে পশ্চিমা বহু পোশাক ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পোশাক ও বস্ত্র খাতে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেনি, অর্থাৎ অ্যাকর্ড জোটে যোগ দেয়নি। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ব্র্যান্ড এই জোটে আসেনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে।

এইচআরডব্লিউর অ্যাসোসিয়েট করপোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি ডিরেক্টর অরুণা কাশ্যপ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে শ্রমিকদের অগ্নিকাণ্ড ও ভবন দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে অ্যাকর্ড জোটের সদস্য ব্র্যান্ডগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি হচ্ছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ব্র্যান্ডগুলোর সবচেয়ে জোরালো উদ্যোগ। প্রায় ২০০টি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড অ্যাকর্ডের সদস্য এবং অন্যদেরও এই জোটকে অনুসরণ করা দরকার।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে শ্রমিকদের অগ্নিকাণ্ড ও ভবন দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে অ্যাকর্ড জোটের সদস্য ব্র্যান্ডগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি হচ্ছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে ব্র্যান্ডগুলোর সবচেয়ে জোরালো উদ্যোগ। প্রায় ২০০টি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড অ্যাকর্ডের সদস্য এবং অন্যদেরও এই জোটকে অনুসরণ করা দরকার।
অরুণা কাশ্যপ, পরিচালক, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

অ্যাকর্ড হলো বাংলাদেশি পোশাকের ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট। কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা ও ভবনের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ সমর্থনকারী ব্র্যান্ডগুলো এই জোটের সদস্য। রানা প্লাজা ধসের বছরে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে অ্যাকর্ড জোটি গঠিত হয়। তখন এ–সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করে ২২০টির বেশি ব্র্যান্ড। একইভাবে ২০১৩ সালে উত্তর আমেরিকার ব্র্যান্ডগুলোকে নিয়ে গঠিত হয় অ্যালায়েন্স। তবে অ্যালায়েন্স জোট কার্যক্রম গুটিয়ে নিলে উত্তর আমেরিকা তথা যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলোর জন্য অ্যাকর্ডে যোগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন পোশাককর্মী নিহত ও দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হন। এরপর দেশের পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের জন্য কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে একই বছরে ব্র্যান্ডগুলোকে নিয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স জোট গঠিত হয়। তা গঠিত হয় স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে। আর এটি ছিল মূলত পোশাকের ব্র্যান্ড ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে একটি আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি, যার আওতায় কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা, ভবনের সুরক্ষা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অগ্নি, ভবন, বৈদ্যুতিক ও বয়লারসংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে পরিদর্শন ও প্রতিকারমূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়।

ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গোটানোর কারণে মাঝারি ও বড় প্রায় দুই হাজার কারখানার সংস্কারকাজে ধাক্কা লাগে। যদিও তার আগেই ৯০ শতাংশের বেশি সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর তাদের অধীনে থাকা কারখানাগুলো তাদরকিতে নিরাপন নামের একটি সংস্থা গঠিত হলেও সেটি এখন নেই। আর অ্যাকর্ডের কারখানাগুলো ২০২০ সালের ৩১ মে থেকে আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (আরএসসি) তদারকি করছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে অ্যাকর্ড তার কার্যক্রমের পরিধি বাড়ায়। তাতে পাকিস্তানের পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলোকে অ্যাকর্ডের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

বাংলাদেশে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাকর্ডের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯৫। পাকিস্তানে অ্যাকর্ডের সদস্য হয়েছে ৪৫টি ব্র্যান্ড। অন্য অনেক ব্র্যান্ড, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ব্র্যান্ড এখনো এই জোটে যোগ দেয়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অ্যাকর্ড একটি অনন্য উদ্যোগ। কারণ, এর মাধ্যমে কারখানার ইউনিয়নের সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতে ব্র্যান্ডগুলোর চুক্তি সম্পাদনের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অ্যাকর্ডের অধীনে তৈরি নিয়মকানুনগুলো পোশাক কারখানা ও ব্র্যান্ডগুলোকে অনুসরণ করতে হয়।

অ্যাকর্ডের অধীনে পরিচালিত পরিদর্শন কার্যক্রমে অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ঝুঁকি এবং ভবনের নিরাপত্তায় কোনো ফাঁক বা দুর্বলতা শনাক্ত হলে কোনো ব্র্যান্ডই সংশ্লিষ্ট পোশাক কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক যখন–তখন ছিন্ন করতে পারে না। বরং এ রকম পরিস্থিতিতে ব্র্যান্ডগুলোকে ওই কারখানায় নিরাপত্তাঝুঁকি প্রশমনে যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। শুধু অ্যাকর্ডের সচিবালয় যদি কোনো কারখানায় নিরাপত্তাসংক্রান্ত অগ্রগতি হয়নি বা এই কার্যক্রম বারবার বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানায়, তখনই ব্র্যান্ডগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারবে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ব্র্যান্ড বা খুচরা বিক্রেতারা বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম নির্ধারণে মানবাধিকার মেনে চলে কি না, তা নিশ্চিতে সরকারকে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে আইন প্রয়োগকারীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্র্যান্ড চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। এমনকি তাদের সমর্থনকারী অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।