প্রতারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিএসইসি, ডিএসইর লোগো। ডিএসই বলছে, এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রতারকেরা দিচ্ছে মুনাফার নিশ্চয়তা। ডিএসই বলছে, লাভের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।
বিনিয়োগ করলে কয়েক দিনে অস্বাভাবিক লাভ—এমন প্রলোভনে হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলছে প্রতারক চক্র। এরই মধ্যে এই প্রতারক চক্রের অনেকে কিছু বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে এ ধরনের বেশ কিছু প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতারক চক্রের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছে সংস্থাটি। এখন বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাজধানীর পল্টনে পুঁজিবাজার-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন সিএমজেএফ কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসাদুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) শফিকুর ইসলাম ভূঁইয়া ও উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপে একাধিক প্রতারক চক্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। তাতে দেখা যায়, শেয়ার কিনলে কয়েক দিনের মধ্যে অস্বাভাবিক মুনাফার কথা বলে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে এ ধরনের মুনাফার নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই। অনেক বিনিয়োগকারী এ ধরনের প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পড়ে অর্থ খুইয়েছেন বলেও জানতে পেরেছে ডিএসই। তবে এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ পায়নি সংস্থাটি।
যেভাবে প্রতারণা
হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে প্রতারক চক্র নিজেদের শেয়ারবাজারের লেনদেনকারী পরিচয় দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বার্তা পাঠায়। যেখানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) নাম ও লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সহজে এসব প্রতারককে বিশ্বাস করেন। অনেক বিনিয়োগকারীকে একটি গ্রুপভুক্ত করে তাতে নানা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে নানা বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রলোভনে পড়ে কেউ কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, শুরুতে অল্প কিছু টাকার বিনিয়োগ নিয়ে আস্থা স্থাপন করা হয়।
ডিএসই বলছে, সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।
যেমন শুরুতে কারও কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয় নির্দিষ্ট একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগের কথা বলে। ওই টাকা নেওয়ার পরদিন মুনাফা হিসেবে কয়েক হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তাতে ওই বিনিয়োগকারী আরও প্রলোভনে পড়ে বাড়তি টাকা বিনিয়োগ করেন। এভাবে একজন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারে ডিএসই। ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ওই বিনিয়োগকারী প্রতারক চক্রের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এভাবে বেশ কিছু গ্রুপ এ ধরনের প্রতারণা করছে বলে জানিয়েছে ডিএসই। এখন পর্যন্ত ডিএসই ব্যক্তি ও গ্রুপ মিলিয়ে সাতটি প্রতারক চক্রের হদিস পেয়েছে।
আইনি ব্যবস্থা ও সচেতনতা
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডিএসই ও সিএসইর অনুমোদিত স্টক ব্রোকার ও ডিলারদের বাইরে শেয়ার লেনদেন করার আইনগত বৈধতা কারও নেই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনগতভাবে শাস্তিমূলক অপরাধ। তাই এ ধরনের কয়েকটি প্রতারক চক্রের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা হয়েছে বলে ডিএসইর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এ বিষয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থাকেও সময়ে সময়ে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ সম্পর্কে আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করেছে বলে তথ্য রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রতারণা থেকে দূরে থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানায় ডিএসই।
আসাদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি দেখা যাচ্ছে। সে কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহও বাড়ছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপে নিত্যনতুন গ্রুপ খুলে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ ধরনের প্রতারকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা ছাড়া এ ধরনের প্রতারণা তাৎক্ষণিকভাবে রোধ করা কঠিন। তবে যখনই ডিএসই এ ধরনের বিষয় জানতে পারছে, তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ডিএসইসহ শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হচ্ছে এ ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকা। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে লেনদেন করা। কারণ, এ তিন সংস্থার অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসের বাইরে আর কারও শেয়ারবাজারে লেনদেনের আইনগত বৈধতা নেই।