দেশের প্রায় সব মানুষই কমবেশি সঞ্চয় করে থাকেন। সঞ্চয়ের শুরুটা হয় সাধারণত মাসে মাসে টাকা জমিয়ে। সোজা কথায়, ব্যাংকের ডিপিএসের মাধ্যমে। একপর্যায়ে সেই ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হয়। তখন গ্রাহকের হাতে বেশ কিছু টাকা একসঙ্গে চলে আসে।
এখন সেই টাকা দিয়ে কী করা যায়। পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর বিষয় আছে। সেই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে। শখও পূরণ করতে পারেন। তবে অতি জরুরি প্রয়োজন না হলে সঞ্চয়ের টাকা চটজলদি ব্যবহার না করাই ভালো। এই টাকা দীর্ঘ সময় সঞ্চয় মাধ্যমে রাখা গেলে একসময় বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া সম্ভব।
বিষয়টি হলো বিশেষ প্রয়োজন মেটানোর জন্য মাসে মাসে কিছু টাকা জমিয়ে রাখা গেলে ডিপিএসের টাকায় বা মূল সঞ্চয়ের টাকায় হাত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয় না।
এখন ধরা যাক, ডিপিএস মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর কোনো গ্রাহক হাতে পাঁচ লাখ টাকা পেলেন। এখন সেই টাকা তিনি কোথায় বিনিয়োগ করবেন, সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। দেশে শেয়ারবাজারের যে অবস্থা, তাতে অনেকেই সেখানে বিনিয়োগ করার সাহস পান না। সে ধরনের সাবধানী সঞ্চয়কারীদের জন্য দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ডাবল বেনিফিট স্কিম দিচ্ছে। অর্থাৎ আপনি যত টাকা একবারে রাখবেন, মেয়াদ শেষে তার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত পাবেন।
দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রূপালী ব্যাংকের আছে তেমন একটি স্কিম। এর নাম রূপালী ডাবল বেনিফিট স্কিম। এটি মেয়াদি আমানতভিত্তিক সঞ্চয় প্রকল্প। ন্যূনতম এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ, তিন লাখ, চার লাখ, পাঁচ লাখ বা তার চেয়েও বড় অঙ্কের টাকা একবারে রাখা যায়।
এই স্কিমে গ্রাহক যত টাকা জমা রাখবেন, তা ৬ বছর ৯ মাসে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সেখান থেকে অবশ্য কর কেটে রাখা হয়। সুদের হার ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ। সেই সঙ্গে হিসাবধারীদের জন্য আছে জরুরি ঋণসুবিধা। ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই স্কিম নিতে পারে। মেয়াদ পূর্তির আগে হিসাবধারীর মৃত্যু হলে নমিনি মেয়াদ শেষে সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা আইনগত অভিভাবকের সঙ্গে যৌথভাবে এ হিসাব খুলতে পারবে।
স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) সুবিধা হলো এই স্কিমে টাকা রাখলে প্রথম দিন চুক্তির সময় যে সুদের হারের কথা ব্যাংক বলবে বা যে সময়ে টাকা দ্বিগুণ হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেবে, তার হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই।
রূপালী ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের আরও অনেক ব্যাংক এই ডাবল বেনিফিট স্কিম দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। এই ব্যাংকও ৬ বছর ৯ মাসে টাকা দ্বিগুণ করার সুযোগ দেয়।
ইউসিবির সুবিধা হলো রূপালী ব্যাংকে যেখানে ন্যূনতম ১ লাখ টাকা রাখতে হয়, ইউসিবিতে সেখানে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করা যায়। এখনকার বাস্তবতায় অনেক ছাত্রের পক্ষেও তা করা সম্ভব।
সঞ্চয়পত্র দেশের মানুষের ভরসার বড় জায়গা। এতে যেমন মেয়াদ শেষে পুরো টাকা একবারে ফেরত পাওয়া যায়, তেমনি প্রতি মাসে সুদ পাওয়া যায়। কিন্তু এফডিআর করার বড় সুবিধা হলো যেকোনো সময় এর বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্রে যা পাওয়া যায় না, ফলে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন।
হিসাব খুলতে সাধারণত যেসব কাগজপত্র লাগে, এ ক্ষেত্রেও তা-ই লাগবে। আপনার নিজের ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), নমিনির ছবি ও এনআইডি এবং ওই ব্যাংকে হিসাব আছে, এমন একজন পরিচয়দানকারী। ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে সবার স্বাক্ষর লাগবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক যোগাযোগ করবে, এমন একজনের নাম-ঠিকানাও দিতে হবে।
জীবনে অনিশ্চয়তার শেষ নেই। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। বড় কোনো রোগ বা দুর্ঘটনা মানুষকে সর্বস্বান্ত করতে পারে। সে কারণে বিভিন্ন ভাগে সঞ্চয় করা ভালো। যাঁরা আগেভাগেই পরিকল্পনা করে দায়িত্বশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনা করেন, তাঁরা ভবিষ্যৎ দায়বদ্ধতা ও সংকট মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে বেশি প্রস্তুত থাকেন। পরিকল্পিতভাবে সঞ্চয় করা গেলে আর্থিক নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়।