বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস নিজস্ব রকেটে চড়ে ২০ জুলাই মহাকাশে পাড়ি দেবেন। আরেক শীর্ষস্থানীয় ধনী রিচার্ড ব্র্যানসনের গতকালই মহাকাশের উদ্দেশ্যে উড়াল দেওয়ার কথা। দুজনেই নিজেদের সঙ্গে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। একই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।

গোটা পৃথিবী যখন কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, তখন বিশ্বের দুজন অতিধনী মহাশূন্যে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস ও ৫৭৯তম ধনী রিচার্ড ব্র্যানসন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ী, লেখক ও বহুজাতিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের গতকাল রোববারই মর্ত্য থেকে মহাকাশে উড়াল দেওয়ার কথা। তাঁকে মহাকাশে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর ভার্জিন গ্যালাকটিক হোল্ডিংসের ভার্জিন স্পেসশিপ ইউনিটি বা ভিএসএস ইউনিটি রকেট।
আর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ২০ জুলাই পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের এলএলসি রকেটে চড়ে মহাকাশে যাবেন তিনি।
রিচার্ড ব্র্যানসনের বিমান পরিবহন, ক্রুজশিপ বা ভ্রমণজাহাজ, হোটেল ও জিমের ব্যবসা রয়েছে। এসব ব্যবসাও এখন করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। ভার্জিন গ্যালাকটিক হোল্ডিংস (ভিজিএইচ) নামে তাঁর একটি স্পেস ট্যুরিজম বা মহাশূন্যে ভ্রমণ আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানই তাঁর জন্য মহাশূন্যে ওড়ার ব্যবস্থা করেছে। এটিই হলো ভিজিএইচের প্রথম মহাকাশযাত্রা। আর ভিজিএইচের এ আয়োজনই হচ্ছে অর্থের বিনিময়ে, অর্থাৎ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মহাকাশে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার প্রথম ঘটনা। ভার্জিন গ্যালাকটিক জানিয়েছে, তারা এবার যাত্রীদের কাছে প্রতিটি টিকিট আড়াই লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করেছে, যা বাংলাদেশের ২ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)। টিকিট বিক্রি ও আমানত মিলিয়ে তারা পেয়েছে ৮ কোটি ডলার। ব্লু অরিজিন প্রতিটি টিকিট বিক্রি করেছে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে।
ভার্জিন গ্যালাকটিকের সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও বর্তমানে ইউকেস্পেসের প্রেসিডেন্ট উইল হোয়াইটহর্ন বলেন, এই উড়ানে স্বয়ং রিচার্ড ব্র্যানসন থাকায় আগ্রহী ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে মহাকাশে যাওয়াকে নিরাপদ ভ্রমণ বলে মনে করবেন।
তবে মহাকাশযাত্রা ঝুঁকিমুক্ত ভ্রমণ নয়। সে জন্য জেফ বেজোস ও রিচার্ড ব্র্যানসন দুজনেই মহাকাশে মানুষ নিয়ে যাওয়ার উচ্চাভিলাষ পূরণে দু-তিন দশক সময় নিয়েছেন, যাতে এ নিয়ে ভালোভাবে কাজ করা যায়। ২০০০ সালে ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন বেজোস। এর চার বছর পর ২০০৪ সালে ভার্জিন গ্যালাকটিক হোল্ডিংস প্রতিষ্ঠা করেন রিচার্ড ব্র্যানসন। এ জন্য তাঁদের প্রচুর সময় ব্যয়ের পাশাপাশি উচ্চহারে কর পরিশোধ করাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে। বিলিয়নিয়ার (১০০ কোটি ডলার থেকে বেশি পরিমাণ অর্থের মালিক) বা অতিধনীদের মধ্যে তাঁরা দুজনেই অন্য সবার আগে নিজস্ব রকেটে মহাকাশে যাচ্ছেন। ব্র্যানসনের মহাকাশযাত্রা সরাসরি সম্প্রচারের কথা।
মহাকাশযাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার বা ৬২ মাইল ওপরে জেফ বেজোসকে নিয়ে উড়বে ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেট। আর রিচার্ড ব্র্যানসনের ভার্জিন গ্যালাকটিকের রকেট উড়বে প্রায় ৫০ মাইল ওপরে। বেজোসের রকেট ভার্টিক্যালি বা উল্লম্বভাবে মহাকাশপানে ছুটে যাবে। অন্যদিকে, ব্র্যানসনের রকেট সাধারণ বিমানের মতো সমান্তরাল পথে ছুটে তারপর শূন্য উড়ে যাবে। এর আগে ভার্জিন গ্যালাকটিকের রকেট নিয়ে তিনবার, অন্যদিকে ব্লু অরিজিনের রকেট অন্তত ১৫ বার উড়েছে। অর্থাৎ মহাকাশে ঘুরে এসেছে। তবে ওই সব উড়ানের কোনোটিতে পাইলট ছাড়া কোনো যাত্রী ছিল না।
তবে দুজনেই অতিধনী হলেও জেফ বেজোস আর রিচার্ড ব্র্যানসনের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য বিশাল। এ ক্ষেত্রে বেজোসের তুলনায় ব্র্যানসনকে নিছক গরিবই মনে হতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী গতকাল বিশ্বের এক নম্বর ধনী বেজোসের সম্পদের নিট মূল্য দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, বিশ্বের ৫৭৯তম ধনী রিচার্ড ব্র্যানসনের সম্পদের মূল্য ছিল ৫৯০ কোটি ডলার।
ব্লু অরিজিনে অর্থের জোগান দিতে বেজোস প্রতিবছর তাঁর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের ১০০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। রিচার্ড ব্র্যানসন জানিয়েছেন,তিনি তাঁর ভার্জিন গ্যালাকটিকে বছরে ২৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এ জন্য তিনি দফায় দফায় ভার্জিন গ্যালাকটিকের শেয়ার বিক্রি করেন। ব্র্যানসনের মহাকাশযাত্রা সফল হলে শিগগির ভার্জিন গ্যালাকটিকের শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। তখন কোম্পানিটি মূলধন সংগ্রহের জন্য শেয়ার বিক্রি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা, ক্লিজ এনার্জি কোম্পানি টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কও মহাকাশ পর্যটন তথা ভ্রমণ আয়োজনের ব্যবসায় নেমেছেন। তাঁর কোম্পানির নাম স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস করপোরেশন, যা স্পেস এক্স নামেই সমধিক পরিচিত। মাস্ক তো বেজোস ও ব্র্যানসনের চেয়ে আরও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাতে চান। ইলন মাস্ক ১৬ হাজার ২৮০ কোটি ডলার মূল্যের ধনসম্পদের মালিক।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, স্পেসডটকম, রয়টার্স।