বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে উৎপাদন খাতের পাশাপাশি সেবা খাতের কোম্পানিও আছে। সেবা খাতের মধ্যে রেস্তোরাঁও এখন অনেক বড় খাত। বিশ্বজুড়ে নগরায়ণের ফলে রেস্তোরাঁ খাতেরও বিকাশ হয়েছে।
ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় মানুষ বাড়িতে রান্না করতে না পারেন না, তাই রেস্তোরাঁয় খাচ্ছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই প্রবণতা বাড়ছে। আবার সামাজিকতা ও সময় কাটানোর অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। ফলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির কাতারে রেস্তোরাঁও উঠে আসছে। অনেক রেস্তোরাঁর বাজার মূলধন শত শত কোটি ডলার।
বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেস্তোরাঁ এখন মার্কিন ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস। এবার নেওয়া যাক, বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ১০টি রেস্তোরাঁ কোনগুলো।
ম্যাকডোনাল্ডস করপোরেশন বিশ্বের বৃহত্তম ফাস্ট ফুড চেইন। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির বিশ্বজুড়ে দোকান আছে মোট ৪১ হাজার ৮০০টি। হ্যাম বার্গার, ফ্রাই (ভাজা মাংস) ও কোমল পানীয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে এর খ্যাতি। সারা বিশ্বে যত দোকান আছে ম্যাকডোনাল্ডসের, এর বেশির ভাগের মালিকানা ম্যাকডোনাল্ডসের নিজের। তবে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে তাদের। এই বিপুল সরবরাহ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রয়োজন হয় তাদের। তাদের কর্মীর সংখ্যা ১৯ লাখ। স্থানীয় মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাবারের স্বাদ পাল্টায় তারা। মাংসের পাশাপাশি এখন তারা উদ্ভিদভিত্তিক খাবার ম্যাক প্ল্যান্ট বিক্রি করছে। পুরোনো কোম্পানি হলেও তাদের উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।
এই কোম্পানির বয়স তেমন একটা বেশি নয়। ১৯৯৩ সালের প্রতিষ্ঠিত এই মেক্সিকান রেস্তোরাঁ এখন বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এই রেস্তোরাঁ মেক্সিকান খাবার বিক্রি করে। এটি ফাস্ট ক্যাজুয়াল রেস্তোরাঁ হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ যে রেস্তোরাঁয় দ্রুত খাবার দেওয়া হয়, কিন্তু মান ও স্বাদের সঙ্গে তারা আপস করে না। মূলত, সেদিকে তাদের বেশি গুরুত্ব থাকে। এখানে প্রধানত বুরিটো, বাওল, টাকো, সালাদ ইত্যাদি মেক্সিকান খাবার পাওয়া যায়।
ইয়াম ব্র্যান্ডসের নাম হয়তো অতটা পরিচিত নয়। কিন্তু এই ব্র্যান্ডের অধীনে যেসব রেস্তোরাঁ পরিচালিত হয়, সেগুলো বিশ্বখ্যাত। সেই নামগুলো হলো কেএফসি, টাকো বেল, পিৎজা হাট, হ্যাবিট বার্গার অ্যান্ড গ্রিল। ইয়াম ব্র্যান্ডস মূলত পেপসিকোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হিসেবে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ১৫৫টি দেশে ৬০ হাজারের বেশি দোকান আছে এই কোম্পানির। তারা মূলত ফ্র্যাঞ্চাইজির ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের দোকানের ৯৮ শতাংশই ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া। অর্থাৎ তারা নিজেরা সরাসরি দোকান খোলে না। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রসারণের ভিত্তিতে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রেখেছে তারা। এআই ব্যবহার ও উদ্ভাবনের বদৌলতেও তাদের ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ হচ্ছে। এই কোম্পানির মুনাফার মূল উৎস কেএফসি ও টাকো বেল। সেই সঙ্গে আছে পিৎজা হাট। তবে পিৎজার বাজারে আরও অনেক ব্র্যান্ড আছে।
এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দ্রুত সেবা দেওয়া রেস্তোরাঁ কোম্পানি। তাদের বার্ষিক বিক্রি ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশে ৩২ হাজার রেস্তোরাঁ আছে তাদের। এই কোম্পানির বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে বার্গার কিং, টিম হরটন্স, পোপেইস ও ফায়ার হাউস সাবস। অন্যান্য বড় রেস্তোরাঁ কোম্পানির মতো তারাও ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাভিত্তিক এই কোম্পানি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেস্তোরাঁ কোম্পানি। অলিভ গার্ডেন, লংহন স্টেক হাউস, রুথস ক্রিস স্টেক হাউস নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে তারা। ১৯৩৮ সালের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি শুরুতে একটি ব্র্যান্ড দিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীকালে একাধিক ব্র্যান্ডের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা ২০ হাজার।
ইয়াম চায়না চীনের বৃহত্তম রেস্তোরাঁ চেইন। ১ হাজার ৯০০ শহরে তাদের মোট ১৪ হাজার রেস্তোরাঁ আছে। ইয়াম চায়না একসময় ইয়াম ব্র্যান্ডসের অংশ ছিল। ২০১৬ সালে বেরিয়ে এসে তারা স্বতন্ত্রভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। চীনের মূল ভূখণ্ডে তারা কেএফসি, পিৎজা হাট ও টাকো বেলের মতো রেস্তোরাঁ ব্র্যান্ড পরিচালনা করছে। তারা মূলত স্থানীয় মানুষের চাহিদায় প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তারা যেমন নিজেরাও রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে, তেমনি অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজিও দিয়েছে। এই কোম্পানির কর্মীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজার। এটি মূলত মার্কিন-চীন যৌথ মালিকানাধীন ফাস্ট ফুড চেইন। এর প্রধান কার্যালয় চীনের সাংহাইয়ে।
পিৎজাহাটের মতো আরেকটি জনপ্রিয় পিৎজা ব্র্যান্ড হলো ডমিনোস পিৎজা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে। ডমিনোসের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ইয়াম বা ইয়াম চায়নার মতো হরেক রকম খাবার পরিবেশন করে না। তারা মূলত দ্রুত পিৎজা সরবরাহে পারদর্শী। ২০২৪ সালে এই কোম্পানির আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৪৭০ কোটি ডলার। বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে ডমিনোস পিৎজার কার্যক্রম আছে। দোকান আছে প্রায় ২১ হাজার। এই কোম্পানির নিজস্ব কর্মী ৯ হাজার। এ ছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে আরও হাজার হাজার কর্মী কাজ করেন।
টেক্সাস রোডহাউস মূলত স্টেকের জন্য বিখ্যাত। তাদের স্টেকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় স্বাদের মিশ্রণ ঘটেছে—সেটাই তাদের বিশিষ্ট করেছে। এই কোম্পানির প্রধান কার্যালয় কেনটাকি লুজ ভিলে। তারা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। তাদের প্রায় ৮০০ দোকান আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই আছে ৬৭৬টি। এ ছাড়া আরও ১১টি দেশে তাদের ৭০টি আন্তর্জাতিক দোকান আছে। তারা যেমন নিজেরাই শাখা খুলে ব্যবসা পরিচালনা করে, তেমনি ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমেও ব্যবসা করে। তাদের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৯৫ হাজার।
এটি চীনের হটপট রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে একটি। মূলত উচ্চ মানের সেবা ও গ্রাহকদের ভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। সারা বিশ্বে তাদের প্রায় ১ হাজার ৬০০টি রেস্তোরাঁ আছে। তার বেশির ভাগই চীনে। এ ছাড়া ১৩টি দেশে ১২২টি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করে তারা। সেই দেশগুলোর মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরও বেশ কয়েকটি দেশে তাদের শাখা আছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা ২০ হাজার।
জাপানের এই রেস্তোরাঁ চেইনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে গরুর মাংসের বিভিন্ন পদ। জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের প্রায় ১৫ হাজার ৪০০টি রেস্তোরাঁ আছে। তাদের কর্মীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৪২ জন। এই রেস্তোরাঁ চেইনটি পরিবেশবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য, চলতি বছরের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২০ শতাংশ কমিয়ে আনা। মেন্যুতে সব সময় তারা নিত্যনতুন পদ নিয়ে আসার চেষ্টা করে।
সূত্র: কোম্পানিজ মার্কেট ক্যাপ ডটকম।