১৫ হাজারের বেশি খাতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের নম্বরে গরমিল। এখন খাতা দেখছেন তৃতীয় পরীক্ষক।
৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল প্রায় ১১ মাস আগে; কিন্তু এখনো ফল প্রকাশ করা হয়নি। প্রায় ১৫ হাজার খাতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরে গরমিল পাওয়া গেছে। নিয়মানুযায়ী সেগুলো তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ জন্য লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে বলে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সূত্রে জানা গেছে।
পিএসসি সূত্র বলছে, প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষক খাতা জমা দেওয়ার পর এগুলো যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ হাজারের বেশি খাতায় ২০ বা তারও বেশি নম্বরের গরমিল ধরা পড়ে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়।
পিএসসির তদন্তে দেখা গেছে, খাতা দেখতে ৩১৮ পরীক্ষক ভুল করেছেন। কেউ কেউ পরীক্ষার্থীর কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বরই দেননি। অনেকে খাতার শেষের উত্তরপত্র এড়িয়ে গেছেন। কোনো কোনো খাতায় পরীক্ষক নম্বরের যোগে ভুল করেছেন।
তৃতীয় পরীক্ষকদের কাছ থেকে খাতা ফেরত আসতে শুরু করেছে। সব পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে।আনন্দ কুমার বিশ্বাস, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পিএসসি
একবছর ধরে লিখিত পরীক্ষার ফলের অপেক্ষায় আছি। প্রতি মাসেই শুনি এ মাসে ফল হবে, ফল আর হয় না। এখন হতাশার চরম পর্যায়ে আছি। এ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চাই।৪১তম বিসিএসের দুই প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন
তদন্তে বলা হয়, পিএসসির নিয়ম অনুসারে ভুল সংশোধন করতে ওই পরীক্ষকদের সরাসরি আসতে হয়েছে। এতে অনেক সময় চলে গেছে। তাঁদের ভুল সংশোধনের পর নম্বর চূড়ান্ত করতে গিয়ে ১৫ হাজার খাতায় বড় ধরনের গরমিল পাওয়া যায়। সেটি চূড়ান্ত করতে আবার খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিএসসির সাবেক সদস্য সমর পাল বলেন, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা প্রথম পরীক্ষক মূল্যায়নের পর তা ঠিক আছে কি না, তা দ্বিতীয় পরীক্ষক যাচাই করে দেখেন। তিনি দেখার পর প্রথম পরীক্ষকের নম্বরের সঙ্গে ২০ বা তার বেশি নম্বরের পার্থক্য হলে নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠাতে হয়। তৃতীয় পরীক্ষক যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটিই চূড়ান্ত। এরপর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়।
এবার লিখিত পরীক্ষায় ফল প্রকাশে এত বেশি দেরির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির এক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একবার সময় গেল ৩১৮ পরীক্ষকের ভুল শোধরাতে। আবার ১৫ হাজার খাতায় ২০ বা তার বেশি নম্বরের গরমিল পাওয়ায় খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দেখছেন। এখানেও সময় যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ফল নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সে জন্য সতর্কভাবে সবকিছু দেখা হচ্ছে।
৪১তম বিসিএসের পরীক্ষার ফল প্রকাশে আর কত দিন লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনন্দ কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় পরীক্ষকদের কাছ থেকে খাতা ফেরত আসতে শুরু করেছে। সব পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। এই বিসিএসে বিভিন্ন পদে ২ হাজার ১৩৫ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কথা।
Also Read: এক বছরে তিন বিসিএস শেষ করবে পিএসসি
লিখিত পরীক্ষার খাতায় এই গরমিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ৪১ তম বিসিএসের দুইজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একবছর ধরে লিখিত পরীক্ষার ফলের অপেক্ষায় আছি। প্রতি মাসেই শুনি এ মাসে ফল হবে, ফল আর হয় না। অনেকে ফলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে পারি না। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন দায়িত্ব অবহেলা হয় বলে আমরা শুনিনি। এ অবস্থা চাই না। এখন হতাশার চরম পর্যায়ে আছি। এ থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চাই।’