
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা আগামী বছরের ২ জানুয়ারি একযোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ায় এবার প্রার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। প্রায় ১১ লাখ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
প্রথম ধাপে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগ এবং দ্বিতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে প্রতিটি পদের জন্য প্রায় ৭৩ জন ও দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি পদের জন্য ৮০ জনের বেশি প্রার্থী লড়বেন। তাই প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে সঠিক কৌশল অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
পরীক্ষার মানবণ্টন ও নিয়ম
যাঁরা এবারই প্রথম শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের পরীক্ষার মানবণ্টন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
পরীক্ষার ধরন নম্বর সময়
লিখিত (এমসিকিউ) ৯০ নম্বর ৯০ মিনিট
মৌখিক পরীক্ষা ১০ নম্বর
লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কাটা যাবে। তাই নিশ্চিত না হয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবে, লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক নম্বর
বাংলা: ২৫ নম্বর
ইংরেজি: ২৫ নম্বর
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক): ২০ নম্বর
গণিত ও বিজ্ঞান: ৩০ নম্বর (এখানে গণিত, বিজ্ঞানসহ অন্যান্য মৌলিক প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত)
প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের পরামর্শ
চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য বিগত বছরের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (২০০৯-২৩), প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, এটিইও, টিইও ও পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে পড়ুন। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও যথাযথ অনুশীলন করতে হবে। সেই আলোকে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন।
বাংলা
কারক, সন্ধি, সমাস, বাগ্ধারা, বিপরীত শব্দ, প্রতিশব্দ, বাক্য সংকোচন—এগুলো নিয়মিত চর্চা করুন। সাহিত্য অংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জীবনানন্দ দাস, শামসুর রাহমান রহমান, আল মাহমুদ, জহির রায়হানসহ গুরুত্বপূর্ণ কবিদের কবিতা ও রচনাগুলো ভালোভাবে পড়ুন। সহায়ক বই হিসেবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির এনসিটিবির বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য বইটি পড়তে পারেন।
ইংরেজি
ইংরেজি সাহিত্যের মৌলিক বিষয়গুলো অনুশীলন করতে হবে। গ্রামার অংশে Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Preposition, Correction, Synonym-Antonym, Idioms-Phrase—এগুলোর অনুশীলন জরুরি। এনসিটিবি গ্রামার বই ও নামকরা লেখকদের গ্রামার প্র্যাকটিস বই এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ওপর জোর দিন।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি: ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্থাপনা, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, প্রশাসনিক কাঠামো, জাতীয় দিবস ও প্রাথমিক শিক্ষা-সম্পর্কিত মৌলিক প্রশ্ন।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: ভৌগোলিক সীমারেখা, প্রণালি, দ্বীপ, চুক্তি, সংগঠন (যেমন জাতিসংঘ), আন্তর্জাতিক দিবস, খেলাধুলা ও পুরস্কার।
সহায়ক বই: এনসিটিবির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও অর্থনীতি বইগুলো পড়লে বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরও নিয়মিত দেখতে হবে।
গণিত ও বিজ্ঞান
গণিত বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে অধিক অনুশীলনে বেশি নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গণিতকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করে প্রস্তুতি নিন—পার্টিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি।
পার্টিগণিত: লাভ-ক্ষতি, সুদকষা, গড়, শতকরা, ঐকিক নিয়ম, লসাগু ও গসাগু। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির এনসিটিবির গণিত বোর্ড বই অনুশীলন করতে পারেন।
বীজগণিত: মাননির্ণয়, উৎপাদক বিশ্লেষণ, সরল সমীকরণ, সূচক ও লগারিদম, সেট ও ফাংশন। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির গণিত বোর্ড বই সহায়ক।
জ্যামিতি: রেখা ও কোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত, ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির জ্যামিতিক অংশ বোর্ড বই অনুশীলন কাজে দেবে।
গণিতের পাশাপাশি বিজ্ঞানের প্রশ্নও আসবে। বিজ্ঞান অংশে পদার্থের অবস্থা, মৌলিক কণা, চুম্বকত্ব, শক্তি, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ, রক্ত সঞ্চালন, রোগজীবাণু, খাদ্য ও পুষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে আইসিটি বিষয়েও মৌলিক ধারণা থাকা আবশ্যক। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির এনসিটিবির গণিত ও বিজ্ঞান বই সহায়ক।
প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে যা মনে রাখবেন
নিয়মিত অধ্যয়ন করুন। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ ও মডেল টেস্ট অনুশীলনই সাফল্যের চাবিকাঠি।
লেখক: বিশ্বজিৎ সুর, সহকারী শিক্ষক, গোয়ালনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোতোয়ালি, ঢাকা