
জেএসসি পরীক্ষার্থী, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে বাংলা প্রথম প্রত্রের ১০০ নম্বরের মধ্যে ৬০ নম্বর সৃজনশীল অংশে এবং ৪০ নম্বর বহুনির্বাচনি অংশের জন্য বরাদ্দ। তোমার ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে মোট ১১টি গদ্য এবং ১১টি কবিতা পাঠ্য আছে। সঙ্গে আছে ‘আনন্দপাঠ’ নামে দ্রুতপঠন। জেএসসি পরীক্ষায় সৃজনশীল অংশে ‘ক’ বিভাগ (গদ্য) থেকে তিনটি, ‘খ’ বিভাগ (কবিতা) থেকে তিনটি এবং ‘গ’ বিভাগ (আনন্দপাঠ) থেকে তিনটি করে মোট নয়টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকবে। প্রতি বিভাগ থেকে কমপক্ষে একটি করে মোট ছয়টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এবার বহুনির্বাচনি প্রসঙ্গ। সাহিত্য-কণিকা বইয়ের মোট ২২টি গদ্য-কবিতা থেকে ৩০টি (গদ্য থেকে ১৫টি এবং কবিতা থেকে ১৫টি) এবং আনন্দপাঠ থেকে মোট ১০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকবে। এ ৪০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের মধ্যে আবার চিন্তন-দক্ষতার চারটি স্তর অর্থাৎ জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নও থাকবে। সব প্রশ্নেরই উত্তর করতে হবে। বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করার জন্য কোনো বৃত্ত ভরাট করতে হবে না বরং সঠিক উত্তরের বক্সে টিক চিহ্ন দিতে হবে। তোমার সৃজনশীল পরীক্ষার খাতার সঙ্গেই বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরপত্র থাকবে। তুমি ইচ্ছে করলে বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর আগে অথবা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর আগে লিখতে পারো। তবে আমি মনে করি, প্রশ্নপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যতগুলো পারো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর টিক চিহ্ন দিয়ে রেখে তারপর সৃজনশীল অংশে উত্তর করতে যাওয়া ভালো। মনে রাখতে হবে, বহুনির্বাচনি অংশের উত্তরপত্রে কোনো কাটাকাটি বা ঘষামাজা করা যাবে না। অর্থাৎ একটি উত্তর একবার টিক চিহ্ন দিয়ে আবার তা কেটে ঘষামাজা করে বা ফ্লুইড দিয়ে মুছে আরেকটা টিক চিহ্ন দেওয়া যাবে না। মনে রেখো, বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র মিলে গ্রেড নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র মিলে মোট ১২০ নম্বর হলেই A+ হবে।
এবার সৃজনশীল প্রশ্ন-পদ্ধতি বিষয়ে। এটা আসলে কী? সাধারণভাবে কোনো কিছু সৃষ্টি করার নামই সৃজনশীলতা। অর্থাৎ শিক্ষার্থী তার নিজস্ব মেধা-মনন অর্থাৎ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে কোনো প্রশ্ন সম্পর্কে পরীক্ষার খাতায় তার মতো করে যা কিছু লিখবে, তাই সৃজনশীল হওয়ার কথা। শিক্ষার্থী তার ইচ্ছেমতো কোনো কিছু সৃষ্টি করলেই সেটা সৃজনশীল হবে না। সৃজনশীল প্রশ্ন-পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষক সর্বপ্রথম কোনো একটি অধ্যায়ের পাঠের আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক তৈরি করেন। উদ্দীপক তৈরির পর শিক্ষক চার স্তরের চারটি প্রশ্ন করেন। তবে উদ্দীপকে কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকে না বরং উদ্দীপকটি শিক্ষার্থীকে উত্তর প্রদানে সাহায্য করে। অর্থাৎ উদ্দীপকটি শুধু শিক্ষার্থীর উদ্দীপনা জাগায়, শিক্ষার্থীকে ভাবতে শেখায়।
প্রিয় শিক্ষার্থী, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রশ্ন ও উত্তর লেখার বিস্তারিত নিয়ম এখানে দেওয়া হলো। প্রতিটি গল্প-প্রবন্ধ-কবিতার ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তাই লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লে সবগুলো গল্প-প্রবন্ধ-কবিতার ব্যাপারেই সঠিক ধারনা অর্জন করতে পারবে।
# শিক্ষক কীভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করেন?
শিক্ষার্থীরা চলো আমরা কল্পনায় একটা গোপন ক্যামেরা নিয়ে একজন শিক্ষকের সৃজনশীল প্রশ্ন করার দৃশ্যগুলো ধারণ করতে থাকি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কীভাবে উদ্দীপক তৈরি করছেন, কীভাবে জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ আর উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন করছেন ইত্যাদি দৃশ্যই আমরা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করব। আর একবার যদি প্রশ্ন করার দৃশ্যগুলো বুঝতে পারি তাহলে আমাদের উত্তর করা একদম সহজ হয়ে যাবে। কারণ, আমরা জানি, কোনো জিনিস যে তৈরি করতে পারে, সেটা সে ভাঙতেও পারে সহজে। তাই সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করার নিয়মকানুন জানলে, সেটার যথার্থ উত্তর দেওয়াও আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর দেরি নয়, চলো আমরা এবার বাংলা বিষয়ের শ্রদ্ধেয় ‘ক’ স্যারকে অনুসরণ করি। দেখি, স্যার কী কী করছেন।
দৃশ্য-১
আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের শ্রদ্ধেয় ‘ক’ স্যার অষ্টম শ্রেণির বাংলা প্রথম পত্র বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য ‘সাহিত্য কণিকা’ বইটি নিয়ে পড়ার টেবিলে বসলেন। পাশে ডায়েরি, কলম, পেনসিল আর গরম এক কাপ চা। প্রথমে তিনি পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা উল্টিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘নারী’ কবিতাটি বের করলেন। ভালোমতো কয়েকবার কবিতাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন। এরপর তিনি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা করলেন অর্থাৎ কবিতার ভাববস্ত্ত খোঁজার চেষ্টা করলেন। তিনি দেখলেন যে কবির চোখে পুরুষ-নারী কোনো ভেদাভেদ নেই। কারণ, নারী ও পুরুষের সমান অবদানের ফসল আজকের এ আধুনিক সভ্যতা। এ বিশ্বে ভালো বা মন্দ যা কিছুই ঘটেছে তা নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসেরই ফসল। কিন্তু সুদীর্ঘকাল ধরে নারীরা অধিকারবঞ্চিত হয়ে আসছে অর্থাৎ সমাজ, সংসার বা সভ্যতার ইতিহাসে নারীর অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত হয়নি। পুরুষের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে কিন্তু নারী হয়েছে অবহেলিত, অবমূল্যায়িত। কবির মতে, এখন সাম্যের যুগ, মানবতার যুগ। তাই এখন আর নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। যদি এখনো কোনো পুরুষ নারীর সমঅধিকার না দেয় বা নারীর অবদান অস্বীকার করে, নারীকে শোষিত-বঞ্চিত করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে সেই সব পুরুষ নিজেদের তৈরি কারাগারে নিজেরাই বন্দী হয়ে মরবে। কবিতার বক্তব্য বোঝার পর স্যার তাঁর টেবিলের পাশে রাখা এনসিটিবি প্রণীত বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ম্যানুয়েল বের করলেন।
সেখান থেকে ‘নারী’ কবিতাটি পাঠ্য করার উদ্দেশ্য ও শিখনফল দেখে নিলেন। স্যার দেখলেন, কবিতাটি পাঠ্য করার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীরা যাতে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং সভ্যতার উন্নয়নে নারীর অবদান যে পুরুষের চেয়ে কম নয়, তা জেনে নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।
# বাকি অংশ ছাপা হবে আগামীকাল
মাস্টার ট্রেইনার, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি
প্রভাষক, সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা