
কানাডায় পড়াশোনা শেষে সেখানে কাজ করার লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। তবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট (পিজিডব্লিউপি–PGWP) আবেদনে ছোটখাটো ভুলও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ববিষয়ক সংস্থা (আইআরসিসি) সম্প্রতি কিছু নিয়ম পরিবর্তন করায় আবেদনপ্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়েছে।
পিজিডব্লিউপি হলো একটি ওপেন ওয়ার্ক পারমিট, যা কানাডিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কানাডার যেকোনো নিয়োগদাতার অধীনে কাজ করার সুযোগ দেয়। পড়াশোনার সময়কাল অনুযায়ী এর মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে। এমন দশটি কারণ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর কারণে পিজিডব্লিউপি আবেদন বাতিল হতে পারে—
সব প্রোগ্রাম পিজিডব্লিউপির আওতায় পড়ে না। ২০২৪ সাল থেকে শুধু আইআরসিসি অনুমোদিত Classification of Instructional Programs (CIP) তালিকাভুক্ত প্রোগ্রামগুলোই যোগ্য বলে গণ্য হবে। সম্প্রতি ১১৯টি নতুন বিষয় যুক্ত হলেও ১৭৮টি প্রোগ্রাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের শুরু থেকে।
বিশেষ করে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্সের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রোগ্রামের সিআইপি কোড নিশ্চিত করতে হবে। মাঝপথে প্রোগ্রাম পরিবর্তন করলে নতুন কোড অনুযায়ী যোগ্যতা পুনরায় যাচাই করতে হবে।
পিজিডব্লিউপির জন্য শিক্ষার্থীকে পুরো পড়াশোনার সময় ফুলটাইম এনরোলমেন্ট বজায় রাখতে হয়। শুধু শেষ সেমিস্টারে খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) অনুমোদিত। অন্য সময় পার্টটাইম হলে আবেদন অযোগ্য হতে পারে।
শিক্ষা পারমিটে নির্ধারিত শর্ত মেনে কাজ করতে হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা অফ-ক্যাম্পাসে কাজ করতে পারেন। অনুমোদন ছাড়া কাজ করলে স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস বাতিল হতে পারে এবং পিজিডব্লিউপি আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
কোভিড সময়ে অনলাইনে পড়াশোনার অংশকে পিজিডব্লিউপি যোগ্যতার মধ্যে ধরা হতো, কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর শুরু হওয়া প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আর প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ এখন পড়াশোনা কানাডায় উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করতে হবে।
২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ন্যূনতম মানদণ্ড:
—কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য: সিএলবি–৫ (CLB 5)
—ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা পিএইচডি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য: সিএলবি-৭ (CLB–7)
পরীক্ষার ফলাফল দুই বছরের বেশি পুরোনো হলে গ্রহণযোগ্য হবে না।
প্রোগ্রাম সম্পন্নের প্রমাণ পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে পিজিডব্লিউপি (PGWP) আবেদন জমা দিতে হয়। সময়সীমা পার হলে আবেদন সাধারণত বাতিল হয়ে যায়।
পিজিডব্লিউপি অনলাইনে জমা দিতে হয়। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:
—প্রোগ্রাম সম্পন্নের প্রমাণ (ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা ট্রান্সক্রিপ্ট)
—ফুল-টাইম এনরোলমেন্টের প্রমাণ
—ভাষা পরীক্ষার ফলাফল
—অনুমোদিত প্রোগ্রামের প্রমাণ
—প্রয়োজনে মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল
পিজিডব্লিউপির মেয়াদ পাসপোর্টের মেয়াদের চেয়ে বেশি হতে পারে না। পাসপোর্টের মেয়াদ আগে শেষ হলে ওয়ার্ক পারমিটও কম সময়ের জন্য দেওয়া হবে। তাই আবেদন করার আগে পাসপোর্ট নবায়ন করাই উত্তম।
আবেদনকারীকে দেখাতে হয় যে তিনি পারমিট শেষ হলে কানাডা ত্যাগ করবেন। যদিও পরবর্তী সময়ে স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছা থাকতে পারে, আবেদনকালে সাময়িক আবাসনের ইচ্ছা প্রদর্শন করা জরুরি। পারিবারিক সম্পর্ক, নিজ দেশে সম্পত্তি বা চাকরির প্রমাণ এই ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
চিকিৎসাগত সমস্যা, অপর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সামর্থ্য, অপরাধমূলক রেকর্ড, নিরাপত্তাঝুঁকি বা ভুল তথ্য প্রদানের কারণে কেউ কানাডায় অযোগ্য ঘোষিত হতে পারেন। এমনকি পরিবারের কোনো সদস্যের অযোগ্যতা আবেদনকে প্রভাবিত করতে পারে।