
একটি মাত্র ক্যামেরা আমূল বদলে দিয়েছে কলকাতার নিষিদ্ধপল্লির এক কানাগলির অধিবাসী কিশোরের ভাগ্য। ২০০৪ সালে কলকাতার সোনাগাছি যৌনপল্লির ১১ বছর বয়সী সেই কিশোর অভিজিত্ হালদার আজ হলিউডের এক পরিচিত নাম। অভিজিত্ এখন হলিউডের একজন সহকারী পরিচালক।
কাজ মানুষকে বড় করে, সম্মান বয়ে আনে। কলকাতার সোনাগাছি যৌনপল্লির ছেলে অভিজিত্ হালদার তাঁর কাজ দিয়ে নিজেকে বড় করে তুলেছেন। কে জানত, মাদকাসক্ত বাবা আর যৌনকর্মী পরিবারের এই পড়ে থাকা ছেলেই একদিন হলিউডের ছবি বানাবে!
জন্ম যেখানেই হোক, শুধু কর্মগুণে বড় হয়েছেন এমন উদাহরণ খুঁজলে অনেক মিলবে। অভিজিত্ সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলেই ছুঁয়েছেন তাঁর আরাধ্য স্বপ্নের চূড়া। অভিজিত্ হালদার আজ হলিউডের পেশাদার ও প্রতিষ্ঠিত একজন সহকারী পরিচালক।
নিজের অতীত নিয়ে মোটেও লজ্জা পান না অভিজিত্; বরং আরও বেশি করে শিকড়ের সন্ধান করেন। বাংলা চলচ্চিত্রের মুগ্ধ দর্শক তিনি। ভারতের মিরা নায়ার, দীপা মেহতা ছাড়াও সুজয় ঘোষ, অনুরাগ কাশ্যপ ও সতীশ কৌশিকের গুণমুগ্ধ ভক্ত অভিজিত্।
বর্তমানে অভিজিত্ ‘বাসমতি ব্লুজ’ নামের একটি তথ্যচিত্রের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ডকুফিল্মটিতে অভিনয় করেছেন ডোনাল্ড সাটারল্যান্ড ও ব্রি লার্সনের মতো তারকারা। পরিচালনা করছেন ড্যান ব্যারন।
অভিজিতের এই হলিউডের পথে পাড়ি দেওয়ার বিষয়টা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকে তাঁকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। তাঁর বাবা ছিলেন মাদকাসক্ত। মা অল্প বয়সে মারা যান।
২০০৪ সাল। ব্রিটিশ আলোকচিত্রী জানা ব্রিসকি কলকাতার সোনাগাছির যৌনপল্লির ছবি তুলতে যান। এ সময় তিনি অভিজিত্সহ এখানকার যৌনকর্মীর সন্তানদের ছবি তোলেন। তখন অভিজিতের বয়স ১১ বছর মাত্র। অভিজিতের মতো এখানকার আটজন ছেলেমেয়ের জীবনচিত্র ধারণের জন্য তাদের হাতে ক্যামেরা তুলে দেন জানা ব্রিসকি। পরে এদের নিয়েই জানা ব্রিসকি আর রস কাউফম্যান তৈরি করেন ‘বর্ন ইনটু ব্রোথেল’ নামের অসাধারণ এক তথ্যচিত্র, যা ওই বছর অস্কার জেতে। এরপর অবশ্য অভিজিতের ভাগ্য খুলতে আর খুব বেশি দেরি হয়নি। পড়াশোনার জন্য ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পান অভিজিত। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন এবং এরপর হলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
হলিউডের রুপালি জগতে অভিষিক্ত হলেও পুরোনো জীবনের সেই গল্প আজও ভোলেননি অভিজিত্। এখনো কলকাতায় গেলে তিনি সোনাগাছিতেই থাকেন। এখন কাজ করতে চান সোনাগাছির ফেলে যাওয়া জীবনের স্মৃতিগুলো নিয়ে। বানাতে চান তথ্যচিত্র।
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে অভিজিত্ বলেন জীবনসংগ্রামের কথা। নিজেকে বড় করে তুলতে অবিরাম প্রচেষ্টা থাকার কথা। মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে। সামান্য একটু সহযোগিতা মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে।
নিজের পছন্দের চলচ্চিত্রকার প্রসঙ্গে অভিজিত্ বলেন, পোলিশ পরিচালক কারজাইসতফ কিওলভস্কি, স্ট্যানলি কুবরিক, ইঙ্গমার বার্গম্যান, ওং কার ওয়াই ও রোমান পোলনস্কির চলচ্চিত্র তাঁর ভালো লাগে। হলিউডের চলচ্চিত্রে তিনি শুধু বিনোদন খোঁজেন।
অভিজিত্ বলেন, তাঁর সঙ্গে যাঁরা ক্যামেরা পেয়েছিলেন, সবার ভাগ্য তাঁর মতো হয়নি। সেই ভাগ্যাহতদের জীবনযাত্রা তিনি পর্দায় আনতে কাজ করে যেতে চান।
তথ্যসূত্র: বিবিসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া