
বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবগুলোর একটি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এই উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'গোল্ডেন বিয়ার'। প্রতিযোগিতা বিভাগের সেরা ছবিকে দেওয়া হয় এই সম্মাননা। ১৯৫১ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রাচীন চলচ্চিত্র উৎসবে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন নারী নির্মাতা জয় করেছেন গোল্ডেন বিয়ার। করোনার এই সময়ে ঘরে বসে দেখতে পারেন ছয় নারী নির্মাতার ছবি।
হাঙ্গেরির সমাজকে উপেক্ষা করে বানানো ১৯৭৫ সালের ছবি অ্যাডপশন। একজন ৪৩ বছর বয়স্ক বিধবা নারীর মা হতে চাওয়ার বাসনা নিয়েই তিনি জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। প্রেমিক এটা জানতে পেরেই দূরে সরে যায়। একাকী নারীর সংগ্রাম নিয়ে ধীর লয়ে এগিয়ে চলে ছবির গল্প। ছবিটি প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে মারতা মেসজারসকে এনে দেয় গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার।
এর দুই বছর পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে গোল্ডেন বিয়ার জয় করেন লারিসা শেপিতকো। তাঁর নির্মিত দ্য আসেন্ট ১৯৭৭ সালে মুক্তি পায়। ছবিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের দুজন সৈন্যের গল্প নিয়ে। যারা যুদ্ধের সময় অবস্থান করেন বর্তমান রাশিয়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে। সেখানে হঠাৎ খাবারের সংকট দেখা দিলে এই দুই সৈন্য খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। পরে তারা ক্যাম্পে ফিরে এসে দেখতে পান, তাদের জায়গা প্রতিপক্ষের সৈন্যরা দখল করে নিয়েছে। জীবন বাঁচাতে তারা দুজন তুষারের মধ্যে দিয়ে চলতে শুরু করে। যেখানে জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ ছাড়াই তাদের প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়।
বসনিয়া যুদ্ধের পর সিঙ্গেল মাদার এবং তার মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও সংকটের গল্প নিয়ে ছবিটি তৈরি। যুদ্ধের পর বসনিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। স্কুল থেকে ভ্রমণে যাওয়ার খরচ দিতে পারেন না মা। মেয়ে চায় বাবার যুদ্ধের সার্টিফিকেট জমা দিতে, তাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভ্রমণ খরচ বাবদ কিছুটা টাকা কমাবে। এতে রাজি হন না মা। এভাবেই এগিয়ে চলে গারবাভিচা ছবির গল্প। এটি বানিয়েছেন যাচমিলা যাবানিক। ছবিটি বার্লিন উৎসবে তিনটি শাখায় পুরস্কার পায়। এটাই ছিল যাচমিলা যাবানিকের প্রথম নির্মাণ।
নারী নির্মাতা হিসেবে পেরু থেকে প্রথমবারের মতো বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ারের জন্য মনোনয়ন এনে দেন ক্লাউডিয়া লোসা। ২০০৯ সালে তার নির্মিত দ্য মিল্ক অব সরো ছবিটি সেই বছর অস্কারের সেরা বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে মনোনীত হয়। ছবিটির গল্প ফ্রাউস্টাকে নিয়ে। সে জানে না কে তার বাবা। তার মা গেরিলা দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হলে তার জন্ম হয়। এটা জানার পর ফ্রাউস্টা সমাজের কোনো পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারে না। মানসিকভাবে সে দিন দিন ভেঙে পড়ে।
নির্মাতা হিসেবে ইডিকো এনিয়েদির প্রায় চার দশক ধরে বিচরণ হাঙ্গেরির চলচ্চিত্র পাড়ায়। এই নির্মাতা ১৯৯৯ সাল থেকে ছবি বানানোয় বিরতি দেন। পরে দীর্ঘ ১৮ বছরের বিরতি ভেঙে ২০১৭ সালে তৈরি করেন অন বডি অ্যান্ড সৌল। এটি বার্লিনে সেরা ছবি হয়। ছবির গল্পে দেখা যাবে, একজন নারী ও পুরুষ একটি হরিণকে নিয়ে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে থাকে। দুজনের স্বপ্নই একই রকম। এই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলে দুজনের কাছে আসা এবং প্রেমে পড়ার গল্প। ছবিটি অস্কারেও বিদেশি ভাষার ছবিতে মনোনয়ন পায়।
রোমানিয়ার নারী নির্মাতা আদিনা পিন্টিলির গল্পটাও আলাদা। রোমানিয়ার একটি সাদামাটা গল্প পর্দায় দেখাতে চেয়েছিলেন এই নির্মাতা। ছবিটির সেই অর্থে কোনো চিত্রনাট্যও করেননি। শুটিংয়ে ১০ সপ্তাহ সময় লাগলেও পুরো ছবি শেষ করতে ২ বছর লেগে যায়। সম্পাদনা করার পর বুঝতে পারেন এই ছবি তাঁর ভাগ্য বদলে দেবে। ২০১৮ সালে সেটাই ঘটে। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি দিয়েই এই নারী নির্মাতা বাগিয়ে নেন গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার। ছবিটির নাম টাচ মি নট। গল্পে দেখা যাবে, একজন নির্মাতা তার গল্পের চরিত্রগুলোর গভীর সম্পর্ক নিয়ে ব্যক্তিগত গবেষণা করতে থাকেন।