
বর্তমানে বলিউডের শীর্ষ নায়িকাদের একজন তিনি। গত বছর তাঁর অভিনীত সিনেমা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে। ২০২৪ সালে তাঁর অভিনীত হিন্দি সিনেমা ‘স্ত্রী ২’ প্রায় ৯০০ কোটি রুপি ব্যবসা করে। কেবল অভিনয়ই নয়, শ্রদ্ধা একজন সফল উদ্যোক্তাও। অথচ একসময় বিদেশের শহরে তিনি কফি বানাতেন, স্যান্ডউইচ বিক্রি করতেন। সেই অতীত যেন আজ অবিশ্বাস্যই মনে হয়। তিনি শ্রদ্ধা কাপুর, বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা, আলোচিত খলনায়ক শক্তি কাপুরের মেয়ে।
এখন অনেকেই বলেন যে ওটিটি আসার পর বিনোদনজগতে বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি মনে করি, ওটিটির আগেই এই ঢেউ এসেছে। “নিরজা”র মতো সিনেমা ওটিটি যুগের আগে মুক্তি পেয়েছে। আগেও এমন সব ছবি মুক্তি পেয়েছে, যা নারীকেন্দ্রিক। তাই অনেক সময় মানুষ যখন বলেন যে এসব ওটিটিতেই এটা সম্ভব, আমি পুরোপুরি সহমত নই। গতানুগতিক গল্পের বাইরে ব্যতিক্রম সিনেমা আগেও মুক্তি পেয়েছে, সফলও হয়েছে।শ্রদ্ধা কাপুর
সংগ্রামের শুরু
শ্রদ্ধার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মুম্বাইয়ে। ছোটবেলা থেকেই সিনেমা ছিল তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে রুপালি পর্দার সাফল্যের পথে তাঁর যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। পড়াশোনার জন্য তিনি ভর্তি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিষয় ছিল মনোবিজ্ঞান। কিন্তু প্রথম বর্ষেই তিনি বুঝে যান যে একাডেমিক পড়াশোনা তাঁর মনের জগতে জায়গা করে নিতে পারছে না। বরং সিনেমাই টানছে বেশি।
পড়াশোনা ছেড়ে দেশে ফেরার আগে যুক্তরাষ্ট্রেই শ্রদ্ধা নেমেছিলেন নানা খণ্ডকালীন কাজে। কাজ করেছেন কফি শপে, যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কফি বানিয়ে দিতেন ক্রেতাদের জন্য। আবার স্যান্ডউইচও বিক্রি করেছেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সেই সব দিন তাঁকে আত্মনির্ভরতার শিক্ষা দিয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁকে জীবনের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে, যা পরে অভিনয়জীবনেও কাজে এসেছে।
বলিউডে পথচলা
২০১০ সালে ‘তিন পাত্তি’ ছবির মাধ্যমে শুরু হয় শ্রদ্ধার বলিউড যাত্রা। তবে শুরুটা সহজ ছিল না। ছবিটি খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। কয়েকটি ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের পর ২০১৩ সালে আসে বড় মোড় ‘আশিকি ২’। আদিত্য রায় কাপুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে এই ছবিতেই যেন জন্ম নিলেন এক নতুন নায়িকা। গান, অভিনয় আর গল্প—সব মিলিয়ে ছবিটি হিট হওয়ার পাশাপাশি শ্রদ্ধাকেও পৌঁছে দিল ঘরে ঘরে।
এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক ছবিতে তিনি দেখিয়েছেন নিজের অভিনয়ের সামর্থ্য—‘এক ভিলেন’, ‘ওকে জানু’, ‘হায়দার’, ‘ছিছোড়ে’ কিংবা ‘স্ত্রী’—সবখানেই শ্রদ্ধা প্রমাণ করেছেন নিজেকে। বিশেষ করে ‘ছিছোড়ে’ তাঁকে এনে দেয় ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ, যা সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
ব্লকবাস্টার ‘স্ত্রী ২’
সবশেষে এল ‘স্ত্রী ২’। ২০২৪ সালের এই হরর-কমেডি শুধু বলিউডেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও ঝড় তোলে। ছবিটি বিশ্বজুড়ে আয় করে ৮৮৪ দশমিক ৪৫ কোটি রুপি। এর মাধ্যমে শ্রদ্ধা কাপুর পৌঁছে যান সেই কাতারে, যেখানে কেবল হাতে গোনা কয়েকজন অভিনেত্রী জায়গা করে নিতে পেরেছেন। এই সাফল্য তাঁকে প্রমাণ করে দিয়েছে বলিউডের সবচেয়ে ‘ব্যাংকেবল’ তারকাদের একজন হিসেবে।
অভিনয়ের বাইরেও সাফল্য
কিন্তু শ্রদ্ধা শুধু সিনেমার পর্দায়ই থেমে নেই। নিজের ব্যবসায়ী সত্তাকেও সামনে এনেছেন তিনি। সম্প্রতি অলংকার কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি এই উদ্যোগ তাঁকে ব্যবসায়ী নারীদের তালিকায়ও স্থান দিয়েছে। সিনেমা আর ব্যবসা—দুটি ভিন্ন দুনিয়া একসঙ্গে সামলাচ্ছেন তিনি, যা তাঁকে আজকের প্রজন্মের কাছে এক বড় অনুপ্রেরণা বানিয়েছে।
কী ভাবছেন শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা কাপুর মনে করেন, একটা সিনেমা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি বলেন, ‘এখন অনেকেই বলেন যে ওটিটি আসার পর বিনোদনজগতে বড় পরিবর্তন এসেছে। আমি মনে করি, ওটিটির আগেই এই ঢেউ এসেছে। “নিরজা”র মতো সিনেমা ওটিটি যুগের আগে মুক্তি পেয়েছে। আগেও এমন সব ছবি মুক্তি পেয়েছে, যা নারীকেন্দ্রিক। তাই অনেক সময় মানুষ যখন বলেন যে এসব ওটিটিতেই এটা সম্ভব, আমি পুরোপুরি সহমত নই। গতানুগতিক গল্পের বাইরে ব্যতিক্রম সিনেমা আগেও মুক্তি পেয়েছে, সফলও হয়েছে।’
শ্রদ্ধা স্বীকার করেন যে তাঁর কাছে বেশ কিছু ছবির প্রস্তাব এসেছে, যেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাননি, চরিত্রগুলো গৌণ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি দর্শকের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করি। আমাকে তাঁরা ভালো চরিত্রে দেখতে চান। আমি আগামী দিনে আরও ভালো চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে চাই।’ এই অভিনেত্রী প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর অভিনেত্রী পদ্মিনী কোলহাপুরীর বায়োপিক ছবিতে কাজ করতে চান।
লাভের ভাগও চাই
‘স্ত্রী ২’-এর সফলতার পর নিজের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ বাড়িয়েছেন শ্রদ্ধা, দিয়েছেন অতিরিক্ত কিছু শর্তও। জানা গেছে, একতা কাপুর প্রযোজিত একটি নতুন থ্রিলারধর্মী সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন এই বলিউড অভিনেত্রী। চলতি বছরের শেষ দিকে সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ার কথা। এ সিনেমার জন্য ১৭ কোটি রুপি পারিশ্রমিক দাবি করেছেন শ্রদ্ধা, যেখানে আগে তাঁর পারিশ্রমিক ছিল ৮ থেকে ৯ কোটি রুপির মধ্যে। শুধু তা-ই নয়, সিনেমার লভ্যাংশ থেকেও একটি অংশ দাবি করেছেন তিনি।
শোনা যাচ্ছে, প্রযোজকপক্ষ শ্রদ্ধার এসব শর্তে সম্মতিও জানিয়েছে, যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। সিনেমাটি পরিচালনা করবেন রাহি অনিল বারভে। যদি শ্রদ্ধা কাপুর সত্যিই ১৭ কোটি রুপি পারিশ্রমিক পান, তাহলে তিনিই হবেন বলিউডের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়াডটকম, ইন্ডিয়া টুডে