নকশীকাঁথার জমিন চলচ্চিত্রের দৃশ্যে জয়া আহসান ও সেঁওতি।
নকশীকাঁথার জমিন চলচ্চিত্রের দৃশ্যে জয়া আহসান ও সেঁওতি।

দুই বোনের সংগ্রাম ও বেদনার আখ্যান

একাত্তরে প্রান্তিক দুই নারীর সংগ্রামের গল্প ‘নকশীকাঁথার জমিন’। সিনেমায় সংলাপ কম, নীরবতার ভেতর দিয়েই যাতনা থেকে দ্রোহ, বিপরীত বহু ভাবকে পর্দায় বাঙ্‌ময় করে তুলেছেন আকরাম খান। গত বুধবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায় ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে।

ঢাকায় স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, সনি স্কয়ার, চট্টগ্রামের বলি আর্কেড শাখা আর কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাসে আজ মুক্তি পাচ্ছে ‘নকশীকাঁথার জমিন’।

নকশীকাঁথার জমিন চলচ্চিত্রের দৃশ্যে জয়া আহসান ও সেঁওতি।

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের গল্প ‘বিধবাদের কথা’ থেকে তৈরি হয়েছে নকশীকাঁথার জমিন। কেন এ গল্পই বাছলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আকরাম খান বললেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় প্রান্তিক নারীর কণ্ঠস্বর খুব একটা উঠে আসে না। আমরা সাধারণত পুরুষদের বীরত্বের গল্পই জানি। সারা পৃথিবীতে যেখানেই যুদ্ধ চলছে, সেখানেই নারীদের সংগ্রাম, লড়াই রয়েছে। কিন্তু নারীরা স্বীকৃতি পায় না। যাদের কণ্ঠ আমরা শুনতে পাই না, তাদের কথা তুলে ধরার প্রতি আমার আলাদা আগ্রহ রয়েছে। আমি মনে করি, কোনো না কোনোভাবে চলচ্চিত্রে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সারা পৃথিবীর যুদ্ধের প্রতিবিম্ব এই গল্পের মধ্যে আছে। এ কারণে এটা করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।’

পরিচালক আকরাম খান

নীরবতা–গভীরতা দুই বোন বলে কথা

আকরাম খানের এটি তৃতীয় সিনেমা। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় হাত দেওয়ার আগে বানিয়েছেন ঘাসফুল ও খাঁচা। আকরাম খান বলেন, ‘ভেবেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্রটা একটু পরিপক্ব না হলে করতে পারব না। ফলে তৃতীয় সিনেমায় এসে নির্মাণ করলাম। চলচ্চিত্র একটি সম্মিলিত শিল্পমাধ্যম। সবাই মিলে কাজটা করেছি। আমার ইউনিট মেধাবী ও সৃজনশীল। প্রত্যেকের অবদানে ছবিটি নির্মিত হয়েছে।’

আকরাম খানের আগের দুই চলচ্চিত্রেই সংলাপের বাহুল্য নেই। নকশীকাঁথার জমিন-এও অনেক নীরব দৃশ্য রয়েছে। এটিকে নির্মাতার ‘সিগনেচার স্টাইল’-ও বলা যায়। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে আকরাম খান বললেন, ‘অনেক সংলাপ দিয়ে গল্প বলে দেওয়ার চেয়ে ইঙ্গিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পছন্দ করি। ফলে আমার সিনেমায় নীরবতা বেশি থাকে। মুখের অভিব্যক্তি ছাড়াও হাত, পায়ের মতো অঙ্গের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছি।’

নকশীকাঁথার জমিন সিনেমায় আলাদা করে নজর কেড়েছে রাহেলা। চরিত্রটিকে প্রাণ দিয়েছেন জয়া আহসান। মুখে কোনো কথা নেই, চোখের ভাষাতেই বহু কথা বলেছেন অভিনেত্রী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চরিত্রটার চোখের পাতা খুব একটা পড়ে না। দুঃখ ভারাক্রান্ত থাকে, চরিত্রটাই সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।’ রাহেলার বোন সালেহা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেঁওতি। দুই ভাইয়ের চরিত্রে ইরেশ যাকের ও রওনক হাসানকে দেখা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ দুই চরিত্রে আছেন দুই ভাই দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি।

হাসান আজিজুল হক

দেখে যেতে পারলেন না

হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে আকরাম খানের দীর্ঘদিনের সখ্য। তাঁর গল্প থেকে এর আগে খাঁচা নির্মাণ করেন নির্মাতা। লেখকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মহামারিকালে নকশীকাঁথার জমিন-এর শুটিং শুরু করেন নির্মাতা। সিনেমার দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার আগেই ২০২১ সালের নভেম্বরে মারা যান হাসান আজিজুল হক।

মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিয়মিত ছবিটির খোঁজখবর নিয়েছেন। রাহেলা ও সালেহা চরিত্রে কে অভিনয় করছেন, আরও কারা থাকছেন—এসব নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। নির্মাতা বলেন, ‘উনি দেখে যেতে পারলেন না, এটা আমার কাছে দুঃখের, আফসোসের।’