Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্ধু শাহিন আলমকে স্মরণ করলেন চিত্রনায়ক অমিত হাসান

‘কষ্টটা তাড়িয়ে বেড়ায় আমাকে’

চিত্রনায়ক শাহিন আলম মারা গেছেন চলতি বছরের ২১ মার্চ। আজ সোমবার মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিন এই নায়কের। দিনটিতে বন্ধুর কথা স্মরণ করে ঢাকাই ছবির অভিনেতা অমিত হাসান তাঁর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ফেসবুকে অমিত হাসান লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহিন আলম। সুখে-দুঃখে একসঙ্গে অনেক দিন পথ চলেছি। না–ফেরার দেশে ভালো থাকো। বন্ধু, আজ তোমার জন্মদিন। তোমাকে স্মরণ করছি। শুভ জন্মদিন। আল্লাহ তোমাকে বেহেশত নসিব করুক।’

১৯৮৬ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতায় একসঙ্গে বিজয়ী হয়ে চলচ্চিত্রে আসেন অমিত হাসান ও শাহিন আলম। তখন থেকেই দুজনের বন্ধুত্ব। অমিত হাসানের প্রথম ছবি ‘চেতনা’। মুক্তি পায় ১৯৯০ সালে। ১৯৯১ সালে মুক্তি পায় শাহিন আলমের প্রথম ছবি ‘মায়ের কান্না’।

অমিত হাসান জানান, নতুন মুখের প্রতিযোগিতার সময়েই দুজনের বন্ধুত্ব হয়। এরপর সিনেমায় কাজ শুরু। প্রায় তিন যুগের বন্ধুত্ব তাঁদের দুজনের। অথচ সেই বন্ধুত্বের বন্ধন ছিঁড়ে শাহিন না–ফেরার দেশে চলে গেছেন। অমিত বলেন, ‘তবে মনের বন্ধন ছিঁড়তে পারেনি শাহিন। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে দেখলাম, শাহিনের আজ জন্মদিন। বুকের মধ্যে হাহাকার করে উঠল। গত বছরও পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করে দিনটি উদ্‌যাপন করেছে শাহিন। অথচ আজ নেই। আর কোনো দিনও আসবে না। বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে তার ছেলে ফাহিম আলমকে ফোন দিলাম। কথা হলো। এরপর ফেসবুকে বন্ধুকে নিয়ে লিখলাম।’

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চিত্রনায়ক শাহিন আলম

চলচ্চিত্রে অমিত হাসান নিয়মিত কাজ করছেন। শাহিন আলম ২০০৬ সালের পর থেকে কাজ কমিয়ে দেন। একসময় সরে যান চলচ্চিত্রজগৎ থেকে।

স্মৃতিচারণা করে অমিত হাসান বলেন, ‘একসময় চলচ্চিত্রের কাজের প্রতি শাহিনের আগ্রহ কমে যায়। ব্যবসার দিকে নজর দেয়। আগে থেকেই নিউমার্কেটে তার কাপড়ের দোকান ছিল, ওখানে বেশি সময় দিতে লাগল। এখন তার ছেলে দোকানটি চালায়।’ তিনি জানান, চলচ্চিত্রের বন্ধুত্ব ছাপিয়ে একসময় তাঁর পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন শাহিন। অমিত বলেন, ‘সিনেমার বাইরে পারিবারিক কাজের সিদ্ধান্তে বুদ্ধি, পরামর্শ নিতেও শাহিনের সঙ্গে বসতাম। শিল্পী সমিতির একাধিকবার নির্বাচনে আমার জন্য কাজ করেছে, পাশে থেকেছে সে। সত্যিকারের বন্ধুকে হারিয়েছি আমি।’

অমিত হাসান

বন্ধু শাহিন আলমের সঙ্গে ৬০ থেকে ৭০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন অমিত হাসান। তার মধ্যে ‘আশার প্রদীপ’, ‘আত্মসাৎ’, ‘রাস্তা’, ‘যৌথ বাহিনী’ প্রভৃতি ছবি। এই দীর্ঘ জীবনে দুঃখ–সুখের অনেক স্মৃতি আছে শাহিন আলমের সঙ্গে অমিত হাসানের।

একবার পরিচালক শাহিন সুমনের ‘যৌথ বাহিনী’ শুটিং শেষ করে কক্সবাজার থেকে ফিরবেন অমিত হাসান ও শাহিন সুমন। আবহাওয়া খারাপ। বিমানে কক্সবাজার থেকে রওনা হয়েছেন তাঁরা। ঝড় শুরু হয়ে। ঢাকাতে নামতে পারলেন না।

আবার কক্সবাজারে ফিরে গেল বিমান। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে অমিত হাসান বলেন, ‘আমি শাহিনকে বললাম, চল দুজন বাই রোডে চলে যাই। শাহিন আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল, “বিমান তো ঢাকাতে যাবেই। একটু অপেক্ষা করে বিমানেই যাই।”এক ঘণ্টার পর বিমান উড়ল। ওপরে ওঠার পর আবহাওয়া খারাপের কারণে বিমান কাঁপতে লাগল। ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে আমি ওর সঙ্গে খুব রাগ করছিলাম। ইচ্ছেমতো বকাও দিলাম। কোনো কথা বলল না সে। ভয়, শঙ্কা মাথায় নিয়ে ঢাকাতে নামলাম। নেমেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সে আমার খারাপ ব্যবহার ভুলে গিয়ে আপন করে নিল। এই হলো বন্ধু।’

চিত্রনায়ক সালমান শাহর সহ–অভিনেতা শাহিন আলম। ছবি: সংগৃহীত

শাহিন আলমের মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেনি অমিত হাসান। সেই সময় সৈকত নাসিরের ‘মাসুদ রানা’ ছবির শুটিংয়ে কক্সবাজারে ছিলেন তিনি। অমিত হাসান বলেন, ‘শুটিংয়ে থাকার কারণে বন্ধুর লাশ দেখতে পারিনি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত থাকতে পারিনি। কষ্টটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আমাকে।’