‘বঙ্গবন্ধুর’ বায়োপিক

শেখ হাসিনা চরিত্রে সুযোগ পেয়ে সুমাইয়া 'সারপ্রাইজড'

জান্নাতুল সুমাইয়া। ছবি: সংগৃহীত
জান্নাতুল সুমাইয়া। ছবি: সংগৃহীত
>বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোতে আরও অভিনয় করছেন খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সায়েরা খাতুন), জান্নাতুল সুমাইয়া (বড় শেখ হাসিনা), নুসরাত ফারিয়া (ছোট শেখ হাসিনা), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), নুসরাত ইমরোজ তিশা (ফজিলাতুন্নেছা), প্রার্থনা দীঘি (ফজিলাতুন্নেছা), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), ফেরদৌস আহমেদ (তাজউদ্দীন আহমদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া) ও মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান)।

জান্নাতুল সুমাইয়ার বিনোদন অঙ্গনে পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। মডেলিং দিয়ে শুরু হলেও এখন অভিনয়ে মনোযোগ বেশি। নাটকের পাশাপাশি অভিষেক হয়েছে চলচ্চিত্রেও। অভিনয়জীবনে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার। যখন শুনলেন, বড় পর্দায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। তাও আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে। সুমাইয়ার ভাষায়, ‘সারপ্রাইজড। হঠাৎ করেই অডিশন দেওয়া। চিন্তাও করিনি শেখ হাসিনা ম্যামের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হব।’

শেখ রাসেল জাতীয় প্রতিযোগিতায় নাচে প্রথম স্থান অধিকার করে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন জান্নাতুল সুমাইয়া। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী চিত্র আসবে বড় পর্দায়। ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগালের হাতে নির্মিত হবে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। গত রোববার এই জীবনী চিত্রের জন্য নির্বাচিত অভিনয়শিল্পীদের একটি প্রাথমিক তালিকার আংশিক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। সেই তালিকায় আছেন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের একঝাঁক প্রিয় মুখ। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের খবর ও সংশ্লিষ্ট অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছিল অনেক তারকা শিল্পীর নাম, যাঁরা কিনা অভিনয় করতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী চিত্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছিল এই সিনেমার জন্য অডিশন দেওয়া অভিনয়শিল্পীদের চরিত্রের ছবি। অবশেষে সেসব জল্পনাকল্পনা আংশিক সত্য হয়ে এল। বিএফডিসি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫০ জন অভিনয়শিল্পীর নামের তালিকায় উঠে এল জান্নাতুল সুমাইয়ার নাম, বিনোদন অঙ্গনে যিনি হিমি নামেই পরিচিত।

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের অডিশনের ফাঁকে মা রোকসানা বেগমের সঙ্গে হিমি। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, আবৃত্তি শিখেছেন হিমি। কচি–কাঁচা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে বিটিভির শিশুতোষ অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন তখন থেকেই। এখন ব্যস্ত অভিনয় আর মডেলিংয়ে। নাটক ও সিনেমায় অভিনয়ের পর অংশ নেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায়। ২০১৪ সালে ‘মডেল হান্ট’ নামে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নও হন হিমি।

শেখ রাসেল জাতীয় প্রতিযোগিতায় আবৃত্তিতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন জান্নাতুল সুমাইয়া। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের অডিশন প্রসঙ্গে হিমি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে অভিনয় করতে অভিনয়শিল্পীরা যে অডিশন দিচ্ছিলেন, তা জানতামই না। আমি বিটিভিতে “তোমার নদীটি” শিরোনামের একটি নাটকের শুটিং করছিলাম। তখনই বিটিভির মাহবুবা ফেরদৌস আপা বললেন, হিমি, তুমি অডিশন দিয়ে দেখতে পারো। চলচ্চিত্রে অনেক বড় একটা কাজ হচ্ছে। যদি অডিশন দিয়ে নির্বাচিত হও, তাহলে তো ইতিহাসের অংশ হতে পারবে। এরপর অডিশন দিই।’

৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিভিশন মিলনায়তনে অডিশন দেন হিমি। বলেন, ‘বিটিভিতে আমি শেষ মুহূর্তে অডিশন দিয়েছিলাম। নাটকের শুটিংয়ে অনেকেই বলছিল, তুমি কি অডিশন দিয়েছ। এত বড় একটা প্রজেক্ট যে হচ্ছিল, এটা আমি জানতামই না। সবাই বলছিল, শেষ মুহূর্তের অডিশন চলছে। তুমি কালকে দিতে পারো। আমি বললাম, পরদিন তো পারব না। কারণ আমার ভাইয়ের অপারেশন এবং শুটিংও আছে উত্তরায়। তখন মাহবুবা ফেরদৌস বললেন, তুমি আসলে বুঝতে পারছ না, এটা কত বড় প্রজেক্ট। এভাবে বলার পর শুটিংয়ে যাওয়ার আগে একদম সকাল সকাল অডিশন দিতে যাই। অডিশনের সবাই তখন মাত্র ঢুকছে। শেখ হাসিনা ম্যামের চরিত্রের জন্য আমি অডিশন দিয়েছিলাম। পরিচালক স্যারও সেভাবেই আমাকে অভিনয় করতে বলেছিলেন। সংলাপ বলার ধরন, চেহারার মিল—এসব দেখেছেন।’

নাম ঘোষণার বিষয়টি জানার পর হিমি বলেন, ‘কখনোই ভাবিনি এমন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব। আমি খুবই ভাগ্যবান, শেখ রাসেল জাতীয় প্রতিযোগিতার কারণে দুবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি। জাতীয় পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতায় দুবার গান-নাচ-আবৃত্তিতে প্রথম হয়েছিলাম। ৯ বছর আগে যাঁর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলাম, সেই শেখ হাসিনা ম্যামের চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছি! তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে। ভেবেছিলাম, অডিশন দিয়েছি, কোনো একটা চরিত্র হয়তো পাব। তাই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাবতেই অন্য রকম লাগছে, আমি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি। গতকাল আমার আম্মুর জন্মদিন ছিল। জন্মদিন সেলিব্রেট করার সময় সবাই ফোন করছিল। মায়ের জন্মদিনে এমন খবর পেয়ে আমাদের সবার আনন্দ কয়েক গুণ বেড় গেছে।’
প্রস্তুতির বিষয়ে হিমি বলেন, ‘এখনো চিত্রনাট্য হাতে পাইনি। শুধু সরকারি ঘোষণার কথা শুনেছি।। আমার জানামতে, কেউই এখনো চিত্রনাট্য হাতে পায়নি। সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানতে পারলে, চরিত্রে কোন বয়সটা দেখানো হয়েছে, তা বলতে পারতাম। যদিও জানি আমার অংশটা বড় শেখ হাসিনার। অলরেডি ইন্টারনেট ঘেঁটে শেখ হাসিনা ম্যামের সেই সময়কার ছবি ও ভিডিও দেখে তাঁর সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছি। পরিচালকের সঙ্গে এটা নিয়ে যদি আরও বসতে পারি, তাহলে আরও অনেক বিষয় পরিষ্কার হবে। প্রস্তুতিও ভালো হবে।’

হারিয়ে যাওয়া সময়ের ‘কথা’ নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে চম্পার সঙ্গে হিমি। ছবি: ফেসবুক

বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধু হিসেবে দেখা যাবে চিত্রনায়ক আরিফিন শুভকে। এ মাসের ১৮ তারিখ থেকে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের শুটিং শুরু হবে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোতে আরও অভিনয় করছেন খায়রুল আলম সবুজ (লুৎফর রহমান), দিলারা জামান (সায়েরা খাতুন), জান্নাতুল সুমাইয়া (বড় শেখ হাসিনা), নুসরাত ফারিয়া (ছোট শেখ হাসিনা), সায়েম সামাদ (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), শহীদুল আলম সাচ্চু (এ কে ফজলুল হক), নুসরাত ইমরোজ তিশা (ফজিলাতুন্নেছা), প্রার্থনা দীঘি (ফজিলাতুন্নেছা), রাইসুল ইসলাম আসাদ (আবদুল হামিদ খান ভাসানী), গাজী রাকায়েত (আবদুল হামিদ), ফেরদৌস আহমেদ (তাজউদ্দীন আহমদ), তৌকীর আহমেদ (সোহরাওয়ার্দী), সিয়াম আহমেদ (শওকত মিয়া) ও মিশা সওদাগর (জেনারেল আইয়ুব খান)।

বায়োপিকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এই চলচ্চিত্রের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এই বাজেটের ৬০ ভাগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ ভারত সরকার। বায়োপিকটি নির্মাণে শ্যাম বেনেগালের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। চিত্রনাট্য করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্পনির্দেশনার দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিশ রায়। কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শ্যাম রাওয়াত। বাংলা, উর্দু, হিন্দি ও ইংরেজি—এই চারটি ভাষায় ডাব করা হবে ‘বঙ্গবন্ধু’র বায়োপিক—এমনটাই জানা গেছে।