
আজ খুলনার লিবার্টি সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেলুপি’; ১৪ নভেম্বর থেকে মোহাম্মদ তাওকীর ইসলামের সিনেমাটি দেশজুড়ে প্রদর্শিত হবে।
দেলুপির গল্প পাওয়াকে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে তুলনা করলেন মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। বড়শি ফেলেছিলেন, তবে মাছ টোপ গিলবে কি না, নিশ্চিত ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত মাছটি ধরা পড়ে।
২০২৪ সালের আগস্টে ভদ্রা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। তখন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসেন এলাকার মানুষ—খবরটি দেখে দেলুটিতে ছুটে যান তাওকীর, সঙ্গে আরও পাঁচজন।
খুলনা শহর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ, ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। দেলুটির কালীনগর কলেজে আশ্রয় নেন তাঁরা; ইচ্ছা, দেলুটির ওপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ।
তাওকীর বললেন, ‘তখনো আমাদের মাথায় সিনেমার গল্পটা ছিল না। ধীরে ধীরে দেলুটির মানুষের সঙ্গে মিশতে থাকি, সেখানে থাকা শুরু করি। খুব কাছ থেকে সেখানকার মানুষের জীবন দেখতে শুরু করি। এরই মধ্যে সিনেমার গল্প লিখতে শুরু করি। একই সঙ্গে সিনেমার চরিত্র ও লোকেশনও লক (চূড়ান্ত) করতে থাকি।’
নির্মাতা জানান, দেলুটি ইউনিয়নের নাম থেকে সিনেমার নাম রাখা হয়েছে দেলুপি। সিনেমার গল্প, বেশির ভাগ চরিত্রই ইউনিয়নের মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে।
যে কেউ হজম করতে পারবে
বরাবরই স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেন তাওকীর, এবারও তা–ই ঘটেছে। সিনেমাটিতে দেলুটির মানুষই অভিনয় করেছেন, যদিও আগে তাঁরা কখনোই অভিনয় করেননি। তাঁদের কীভাবে রাজি করালেন? তাওকীর বলছেন, ‘সিনেমাতে আসলে তারাও চরিত্র হয়ে যেতে পারে, গল্প হয়ে যেতে পারে, এটা তো আসলে তাদের ধারণার বাইরে ছিল। তাদের সঙ্গে দিনের পর দিন কাটিয়েছি, ধীরে ধীরে বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি করেছি।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষভাগে দেলুটিতে শুটিং শুরু করেন, অক্টোবরের শেষভাগে শেষ। পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ করেছেন ঢাকায়।
সারা দেশে মুক্তির আগে সিনেমাটি দেলুটির মানুষকে দেখাতে চেয়েছেন তাওকীর। পোস্টপ্রোডাকশনের কাজ শেষ করে আবারও তাই দেলুটিতে ফিরেছেন তাওকীর। গত বুধবার দেলুটি ইউনিয়নের দারুণ মল্লিক প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সিনেমার প্রিমিয়ার শো হয়েছে। সিনেমার শিল্পী ও ১৩ গ্রামের দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন।
তাওকীর বলছেন, দর্শক সিনেমাটি উপভোগ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দর্শক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বসে ছিল। দর্শক হাসছে, কাঁদছে আবার নিজেকে লুকাচ্ছেও। দর্শকদের এই সাড়া আমাকে সাহস দিয়েছে। সিনেমাটি যে কেউ হজম করতে পারবে।’
সিনেমায় কী আছে
সিনেমায় ভালোবাসা আছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, যাত্রাশিল্পীদের সংগ্রাম আছে; সেই সঙ্গে সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতাও আছে। তাওকীর বলছেন, ‘পুরো দুনিয়ায় রাজনৈতিক সিনেমা হয়। এমনকি আমাদের এফডিসিও কিন্তু নানান ধরনের রাজনৈতিক সিনেমা বানিয়েছে। সেটার সংখ্যা পুরো পৃথিবীর চেয়ে কম হলেও সেটার কিন্তু নজির আছে।’ তাঁর ভাষ্য, ‘সিনেমা সোসাইটিকে রিফ্লেক্ট (প্রতিফলন) করে। সেখানে প্রেম–ভালোবাসা যেমন থাকবে, তেমনি রাজনৈতিক অংশও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় সিনেমায় আসাটা খুব জরুরি।’
দর্শক সিনেমাটি কেন দেখবেন? জানতে চাইলে তাওকীর বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে আমরা যেসব অস্থিরতার মধ্যে আছি আর যেসব কোয়েশ্চেন ফেস (প্রশ্ন মোকাবিলা) করছি, যেটার পুরোনো কনসিকোয়েন্সেস (পরিণতি) আছে এবং বর্তমান কনসিকোয়েন্সেস (পরিণতি) আছে, এই দুইটা জিনিসই ছবিটার মধ্যে খুব ভালোমতো আছে।’
সিনেমাটি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন নির্মাতা। এতে যেমন বর্তমানকে আনা হয়েছে, তেমনি অতীতকেও ধরা হয়েছে। সিনেমার গল্প নিয়ে তাওকীর বলেন, ‘এটা আমাদের সবার ইউনিটির (ঐক্য) গল্প, যেখানে সবাই মিলে ইউনিটিটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং ফাইনালি সমস্যাগুলো আমাদের সলভ করতে হবে।’
সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে দেলুটি ইউনিয়নের চিরঞ্জিৎ বিশ্বাস, অদিতি রায়, রুদ্র রায়, জাকির হোসেনসহ অনেকে অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ফুটপ্রিন্ট ফিল্ম প্রোডাকশন।