
গেল ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ‘ইনসাফ’ ছবি দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন শরীফুল রাজ। চরকিতে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ‘দেয়ালের দেশ’। কী করছেন রাজ, সেই খবর নিয়েছেন মনজুর কাদের
বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন এক যুগের বেশি। বড় পর্দায় ১০ বছর হতে চলেছে। ‘আইসক্রিম’ দিয়ে শুরুটা, সর্বশেষ কাজ ‘ইনসাফ’। ১০ বছরে ১০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বেশির ভাগ মুক্তি পেলেও দু–একটি মুক্তির অপেক্ষায়। রাজের ভাষ্য, ‘এখন পর্যন্ত যে কয়টি ছবি মুক্তি পেয়েছে, তার মধ্যে মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা ‘ইনসাফ’–এ আমার অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’ এ ধরনের ছবিতে আরও নিয়মিত হতে চান তিনি।
সঞ্জয় সমাদ্দার পরিচালিত ‘ইনসাফ’ মুক্তির দেড় মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে শরীফুল রাজের সঙ্গে নতুন ছবিতে অভিনয় নিয়ে একাধিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকের কথাবার্তা হয়েছে। জানালেন, ছয়টি ছবির গল্প শুনেছেন; কিন্তু কোনটি দিয়ে শুরুটা করবেন, এখনো সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। রাজ বলেন, ‘পরের সিনেমাটা কী হবে তা নিয়ে আমি এক্সাইটেড আছি। অপেক্ষা করছি, শুটিংয়ে যাওয়ার। আমার কাছে এখন অ্যাকশন সিনেমার গল্পের প্রস্তাব বেশি। ইনসাফ মুক্তির পরই সবাই এমনটা চাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যাদের সঙ্গেই কথা হচ্ছে, সবাইকে বলেছি, ঠিকঠাকভাবে পরিকল্পনা করলে আমি অভিনয়শিল্পী হিসেবে পুরোপুরি তৈরি আছি। কারণ এরই মধ্যে আমি ছোটখাটো একটি ভ্যাকেশন শেষ করে এসেছি। মনে হচ্ছে, কাজের জন্য পুরোপুরি তৈরি।’
ভ্রমণে আনন্দ
সময় পেলে রাজ ঘোরাঘুরি করতে বের হন, এটি তাঁর পরিচিতজনেরা জানেন। দেশের যেকোনো প্রান্তে টানা কয়েক দিন থেকে আবার ফিরে আসেন। আবার কাজে ডুব দেন। এবার রাজ অবকাশযাপনে যান তাঁর ছোট বোনের কাছে। স্বামীসহ ছোট বোন কুয়ালালামপুরে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট বোন প্রথমবার মা হতে যাচ্ছে, আর আমি মামা। সেই আনন্দে এবার ভ্যাকেশন তার সঙ্গে কাটালাম। তিন–চার বছর পর ভাই–বোন মিলে ঘুরলাম। মাঝখানে আমার জীবনটা নানা ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছে, এ কারণে পরিবারের সবাইকে সেভাবে সময় দিতে পারিনি, দেখা–সাক্ষাৎ হয়নি। এবার দুই সপ্তাহ বোনের সঙ্গে ছিলাম। দারুণ সময় কেটেছে। মালয়েশিয়ায় এর আগে দুবার গেছি। এবারের দেখাটা অন্য রকম। আমি তো কুয়ালালামপুরের প্রেমে পড়ে গেছি।’
রাজের মতে, ‘ঘোরাঘুরি নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর জন্য ভালো মেডিসিন। ঘোরাঘুরি নতুনভাবে উজ্জীবিত হতে শেখায়। নানান দেশের সংস্কৃতি ও নানার মানুষ বোঝার সুযোগ হয়। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে যাই।’
ফিটনেসে মনোযোগী
পর্দায় নিজেকে নতুনরূপে উপস্থাপন, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও ফিটফাট থাকতে নিয়মিত জিমে যান শরীফুল রাজ। সপ্তাহে পাঁচ দিন নিয়ম করে ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটান সেখানে। এ সময়টা তার মানসিক প্রশান্তি দেয়। রাজ বলেন, ‘আস্তে আস্তে নতুন কাজের জন্য রেডি হচ্ছি। কাজের জন্য নিজেকে ফিট থাকতে হয়। ফিটফাট মানুষ দেখতেও ভালো লাগে। যেসব তারকা শরীরের যত্ন নেয়, ফিটনেস–সচেতন, তারা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। অনেক ব্যস্ত তারকারাও নিয়মিত ফিটনেসে সময় দেয়। আমিও ভাবি, আমারও দেওয়া উচিত। জিম মানসিক প্রশান্তি দেয়। শারীরিকভাবেও ফিট থাকার জন্য জিম গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজ জানান, অ্যাকশন ছবির ক্ষেত্রে ফিটনেস বেশি কাজে দেয়। সামনে নিজেকে আরও ভালোভাবে অ্যাকশন ছবির জন্য তৈরি করছেন। তাই ফাইটিং প্রশিক্ষণ নিতে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। রাজ বলেন, ‘এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছি। ফাইট প্রশিক্ষণ নিতে চার–পাঁচ মাসের জন্য ব্যাংকক যাব। নতুন ছবির কাজ শেষে উড়াল দেওয়ার ইচ্ছা।’
দেশ–বিদেশে যত প্রিয়রাজ বই পড়েন। সিনেমা–সিরিজও দেখে। ক্ল্যাসিক ছবি তাঁকে বেশি টানে। তাঁর মতে, ‘আমি র্যানডম পড়ি।’ বললেন, ‘এই তো দুদিন আগে পুরোনো একটি ছবি আবার দেখলাম। আল পাচিনো ও রবার্ট ডি নিরোর হিট দেখে আবারও মুগ্ধ হয়েছি। তাঁরা দুজনেই আমার সব সময়ের প্রিয় তারকা। এর বাইরে জনি ডেপ, ডেনজেল ওয়াশিংটন ও ব্র্যাড পিট পছন্দের।’ শুধু নায়কদের কথা বলছেন, প্রিয় তালিকায় কোনো নায়িকা নেই বুঝি? এমন প্রশ্ন শুনে হাসলেন রাজ। বললেন, ‘সব নায়িকাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। কাকে রেখে যে কার কথা বলি। নাটালিয়া পোর্টম্যান আমার ভালো লাগার। অনেক বেশি ভক্ত ডেমি মুরের। আই উইশ, তিনি যদি আমার স্বপ্নে কোনো একদিন আসতেন। ডেমি মুরের এমন কোনো ছবি নেই, যা দেখা হয়নি আমার। ইদানীং তো আমার দীপিকা পাডুকোন ও আলিয়া ভাটকে খুব ভালো লাগে।’হলিউড থেকে বলিউড, এরপর ঢালিউডের তালিকা কি জানা যাবে? কৌশলে উত্তর দিলেন রাজ। বললেন, ‘যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তারা সবাই ফ্যান্টাস্টিক। অল আর বিউটিফুল—মিম, নাজিফা তুষি, শবনম বুবলী আর সম্প্রতি ফারিণের সঙ্গে কাজ করেছি। ফারিণ তো দুর্দান্ত, আমার মনে হয় বাণিজ্যিক সিনেমায় আরও বেশি কাজ করা উচিত। সাবিলা নূরকেও দেখলাম সিনেমায়। সে–ও দারুণ করেছে। সবাই খুব ভালো করছে। আমার সহশিল্পীরা সবাই দারুণ অভিনেত্রী হয়ে উঠছে। তাদের সবার নিজেদের অবস্থানও তৈরি হয়েছে। মন্দিরাও চমৎকার শিল্পী, একসঙ্গে “কাজলরেখা” করেছি, দারুণ অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করছে। সত্যি বলতে, সবাই খুবই চমৎকার।’
সংগ্রামে ঢালিউড প্রেরণা
১৩ বছর ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন। এর মধ্যে ১০ বছর ঢালিউডে কাটছে। রাজের মতে, এখনো সংগ্রাম করে চলছেন। তিনি নিজে একজন সংগ্রামী শিল্পী। এই ইন্ডাস্ট্রির সংগ্রামী শিল্পীরাও তাঁকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেন। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই রাজ বলেন, ‘আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেন আমাদের শাকিব খান। দীর্ঘ সময় ধরে জার্নি করছেন, তারপরও একের পর এক দারুণ দারুণ কামব্যাক হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি যেভাবে অবদান রাখছেন, এটা অনেক বেশি অনুপ্রেরণার। যখন মডেলিং থেকে সিনেমায় আসি, তখন আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে আরিফিন শুভ। সিয়ামও আমার ভীষণ অনুপ্রেরণার। যখন আমি সিনেমা করিনি, তখন সে সিনেমায় কাজ করত। “বলত, সিনেমা কর, সিনেমা কর।” আমার আশপাশের সবাই আমার কাজের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করেছেন। রায়হান রাফি, মেজবাউর রহমান সুমন, রেদওয়ান রনি, গিয়াসউদ্দিন সেলিম—সবাই একটা না একটা সময় আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁদের সবার অনুপ্রেরণায় প্রতিনিয়ত কাজের প্রেরণা পেয়েছি।’কথা শেষ করতে হবে, রাজকে যেতে হবে জিমে। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, নিজেকে একজন সফল অভিনয়শিল্পী হিসেবে দেখতে চান। সেভাবেই পরিল্পনা করে এগোচ্ছেন তিনি।