
সাহিত্যজগতে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচয় হলো, তিনি আগে কবি, পরে নাট্যকার। তাঁর লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’। মোহিত চট্টোপাধ্যায় যখন ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটকটি লেখেন, তখন তাঁকে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তাঁকে পলায়নবাদীও বলেছিলেন কেউ কেউ। সমাজের সঙ্গে কোনো সংস্পর্শ না থাকার অভিযোগ এনে অনেকে তাঁকে সজাগ ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সাত বছর আগে এই নাটক ঢাকার মঞ্চে এনেছিল নাট্যদল তীরন্দাজ রেপার্টরি। সে সময় নাটকটি সাড়া ফেলেছিল। সাত বছর পর মঞ্চে ফিরছে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’।
‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ তীরন্দাজের ষষ্ঠ প্রযোজনা। আগামী শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে পাঁচটা ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হবে। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন দীপক সুমন। মঞ্চসজ্জা ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফয়েজ জহির। ‘আগন্তুক’ চরিত্রে অভিনয় করবেন দীপক সুমন আর ‘চিকিৎসক’ চরিত্রে কাজী তৌফিকুল ইসলাম।
নাটকটির বুনট মূলত একটি পৌরাণিক কাহিনিকে মাথায় রেখে। নাটকটির ভাবনাও বেশ উদ্ভট ও অদ্ভুত। এই নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে এক আগন্তুককে ঘিরে। একদিন সেই আগন্তুক এক চিকিৎসালয়ে এসে বলে, তার কণ্ঠনালিতে সূর্য আটকে গেছে। বহুকাল ধরে সে তা বহন করছে। সে সূর্যটি বের করতে চায় বা চিরকালের জন্য হৃৎপিণ্ডে রেখে দিতে চায়। এমন অদ্ভুত সমস্যার কথা আগে শোনেনি কেউ। তাই আগন্তুককে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে থাকে চিকিৎসালয়ে আসা অন্য দুই চরিত্র মিলু ও সমীর। তবে আগন্তুক তাতে দমে না গিয়ে নিজের কণ্ঠনালিতে আটকে থাকা সূর্যের একটা ফয়সালা করতে চায়। এভাবেই গল্পটা এগিয়ে যায়।
প্রথমবার মঞ্চে আসার পর ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ মঞ্চে সাড়া ফেলেছিল। মাঝখানে এত বছর মঞ্চে অনুপস্থিত, কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা ও নির্দেশক দীপক সুমন বিষয়টিকে নাটকের গল্পের সঙ্গে তুলনা করেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এই নাটক মঞ্চায়নের ঠিক আগমুহূর্তে হলের বরাদ্দ বাতিল করে “বাগবিতণ্ডা” শিরোনামে সুন্দরবন নিয়ে একটি থিয়েট্রিক্যাল বাহাস আয়োজন করতে চাওয়ার কারণে। আমরা কর্তৃপক্ষের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও, তার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের হল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি এই সাত বছরে।’
তিনি জানান, প্রথম দুই বছর মূলত হলসংকটের কারণে শো করতে পারেননি। শিল্পকলায় হল বরাদ্দ বাতিলের পর নজরুল ইনস্টিটিউটে ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’র দুটি শো করেছিলেন তাঁরা। সেখানে আলোর যথাযথ ব্যবস্থা নেই, পুরোটাই আলাদা ভাড়া করতে হয়। সাউন্ড ভাড়া করতে হয়। নাটক মঞ্চস্থ করতে তিনগুণের বেশি খরচ হয়। খুব বেশি দিন এভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এত বছর শিল্পকলা একাডেমিতে বরাদ্দ না পেয়ে শেষে বাধ্য হয়ে মহিলা সমিতিতে নাটকটি মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে তীরন্দাজ। এখন থেকে নিয়মিত নাটকটি মঞ্চায়নের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।