Thank you for trying Sticky AMP!!

আমাদের গান সহজ, কিন্তু সস্তা না: সুমি

চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠান ‘বাংলাদেশ নাইটস’-এ যোগ দিতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে জনপ্রিয় ব্যান্ড চিরকুট। চিরকুটের এটাই প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের সায়েন্স থিয়েটারে গত শনিবার সন্ধ্যায় গান গেয়েছে চিরকুট। এর ফাঁকে নানা সাফল্যগাথা আর অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন চিরকুটের অন্যতম সদস্য সুমি।

সিডনিতে প্রথম এসেছেন। কেমন লাগছে?
সব মিলিয়ে খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ভালো লেগেছে ‘বাংলাদেশ নাইটস’–এর আয়োজকদের পেশাদারি মনোভাব।

সিডনির ভক্তদের কাছ থেকে কেমন ভালোবাসা পেলেন?
দর্শকেরা খুব প্রাণবন্ত ছিল। তবে প্রবাসীদের ভালোবাসা কোনো কিছু দিয়ে মাপার যোগ্যতা আমাদের নেই।

প্রবাসেও দেশীয় সংস্কৃতি ধারণ করছে বাংলাদেশিরা।
চিরকুটের যাত্রা খুব বেশি দিনের না। এই কম সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনসার্ট করেছি। অস্ট্রেলিয়াসহ সব দেশের প্রবাসীরা যখন আমাদের নতুন–পুরোনো সব গানই গলা ছেড়ে আমাদের সঙ্গে গায়, এটা আমাদের জন্য কত বড় অনুপ্রেরণা! তখন বোঝা যায়, তারা বাংলা গান শুনতে ভালোবাসে। কারণ, দেশ থেকে দূরে থেকেও তারা দেশকে ভালোবাসে। এতে আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। আরও ভালো ভালো গান করার চাপ অনুভব করি।

সিডনিতে চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা

এই যে চিরকুটের আজকের অবস্থান, এর পেছনে কোনো অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি কাজ করে?
আমাদের একসঙ্গে যাত্রা অনেক বছরের। আজ আপনারা চিরকুটকে যেমন দেখছেন, তেমনটা তো আর এক দিনে তৈরি হয়নি। আমরা সবাই এমন ছিলাম না। আমরা ঐক্যে বিশ্বাস করি। আর গানের মান নিয়ে আমরা কেউই কখনো ছাড় দিই না। আমাদের ইমন, পাভেল, দিদার আর নীরব—তাঁরা প্রত্যেকের জায়গা থেকে খুবই মেধাবী। আর সাফল্যের আরেকটা বড় কারণ ছিল আমাদের দলের সবার ‘মিউজিক্যাল টেস্ট’ একই রকম। আজ একটা কালকে আরেকটা, এমন করলে কিন্তু গানের মান আর বের হয় না। তাই একটা জায়গায় সবার মতের মিল রেখে এগিয়ে চলেছি। এসব কারণেই আজ দেশে-বিদেশে সবাই আমাদের গান শুনছে।

বাংলাদেশে লিজেন্ড অনেক ব্যান্ড আছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের অনন্য অবস্থান তৈরি করেছেন। এর পেছনের গল্পটা কী?
‘পাল্লা দিয়ে’ শব্দটা আসলে আমার কাছে খুব সুন্দর শব্দ না। পাল্লা না, বরং আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। কারও পেছনে পড়ে আছি, কারও আগে যেতে হবে, সেদিকে আমাদের কারও কোনো মনোযোগ নেই। কাল আমাদের গান কেউ না শুনলেও আমরা আমাদের ভালোবাসা দিয়ে কাজ করে যাব। আর এর পেছনের গল্পটা যদি শুনতে চান, এর পুরোটাই আসলে কঠিন পরিশ্রমের গল্প, লেগে থাকার গল্প, ত্যাগের গল্প। ব্যক্তিগতভাবে চিরকুটের সব সদস্যই জীবনে লোভনীয় অনেক অফার পেয়েছে। তবে আমরা ব্যান্ডের জন্য সেগুলো ত্যাগ করেছি। চিরকুটের যাত্রার প্রতিটা মুহূর্তে ত্যাগের গল্প। আর যেখানেই যাই, যা-ই করি, আমরা চেষ্টা করেছি দেশের প্রতি ভালোবাসা, ভালো লাগা আর সম্মানটা সবার আগে রাখতে। এই তো। ভালো পথের গল্পগুলো এমনই, খুব মসৃণ হয় না সে পথ।

চিরকুটের গানের কথা-সুর অন্য রকম। এই ভিন্নতার কারণ কী?
চিরকুটের মজা কী জানেন, আমাদের গানগুলো সহজ, কিন্তু সস্তা না। আমাদের গানগুলোর মধ্যে মানুষ বুঝতে পারবে তেমন শব্দ যেমন আছে, তেমন মানুষ অনুভব করবে, তেমন শব্দও আছে। আমরা গান করি মানুষের জন্য, মানুষের অনুভূতির জন্য। এটা একটা আশীর্বাদ, মানুষ আমাদের গান অনুভব করতে পারে।

সিডনিতে কিংসফোর্ড স্মিথ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আয়োজকদের সঙ্গে চিরকুটের সদস্যরা

সম্প্রতি ‘আহারে জীবন’ গানের জন্য ভারতের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে তিনটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল চিরকুট।
সত্যি কথা, আমরা সেটার কিছুই জানতাম না। যশোর থেকে একটা কনসার্ট করে ফেরার পথে একজন ফোন করে বললেন, অভিনন্দন, আপনারা তো ফিল্মফেয়ার কাঁপিয়ে দিয়েছেন। আমরা সত্যিই শুনে অবাক হয়েছি তখন।

যদি ভক্তদের দিক থেকে বলি, তাহলে চিরকুট মানেই সুমি। একজন নারী হিসেবে এ সাফল্যকে আপনি কীভাবে দেখেন?
প্রথমত, চিরকুট মানেই সুমি, এটা আমি একদমই মানব না। প্রত্যেকের সমান অবদানেই আজকের এই চিরকুট। আমরা কেউ সে কথা ভুলতে চাই না, আর ভোলার সুযোগও নেই। দ্বিতীয়ত, আমি কাজ করে গেছি এবং এখনো করছি একজন মানুষ হিসেবে। একজন মানুষ হিসেবে যতটুকু শ্রম নিয়ে, আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করে যাওয়া উচিত, আমি সেভাবেই করছি। আমি মনে করি, আমাদের সমাজে নারীদেরও ঠিক একই ভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

নতুন কী নিয়ে কাজ করছে চিরকুট?
নতুন বেশ কিছু কাজ আছে হাতে। কিছু সিনেমার গানের কাজ চলছে। দেশে-বিদেশে কিছু কনসার্টের আমন্ত্রণ আছে। এদিকে বাংলাদেশে মেয়েদের ব্যান্ড নিয়ে একটা গানের রিয়্যালিটি শো শুরু হবে শিগগিরই। সেখানে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব আমরা।