
গতকাল প্রচারিত হয়েছে ‘হাবুর স্কলারশিপ’-এর ৩০০তম পর্ব। বৈশাখী টিভিতে প্রতি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ধারাবাহিকটি প্রচারিত হয়। এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাশেদ সীমান্ত। অভিনয়ে হঠাৎ আগমন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম
আজও শুনলাম পুবাইলে শুটিং করেছেন। গ্রামীণ গল্পে আপনাকে বেশি দেখা যায় কেন?
রাশেদ: হ্যাঁ, আজও পুবাইলে শুটিং করেছি। সত্যি বলতে কি, আমার গ্রামকেন্দ্রিক কাজই বেশি হয়েছে। শহরের গল্পেও অভিনয় করি, তবে সেগুলোর বেশির ভাগই চার দেয়ালের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকে। গ্রামের গল্পে একটা প্রাণ আছে, মন খুলে অভিনয় করা যায়। আগামী আড়াই মাসের শিডিউল দেওয়া আছে; বেশির ভাগ কাজই গ্রামের গল্প।
আপনার বেড়ে ওঠা কোথায়?
রাশেদ: আমার জন্ম গুলশানে, আজাদ মসজিদের কোয়ার্টারে। তবে বুঝতে শেখার পরে আমরা টঙ্গীতে চলে আসি। বলা যায়, শহরেই বড় হয়েছি। তবু গ্রামের প্রতি দুর্বলতা সব সময়ই ছিল।
অভিনয়ে এলেন কীভাবে?
রাশেদ: স্কুলে টুকটাক অভিনয় করতাম। আমার ছোট ভাই হাসান মোরশেদ পরিচালক, ওর নাটকে ইনপুট দিতাম। কিন্তু অভিনয়কে পেশা বানাব, এমন কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না। আমি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রিভিউ কমিটিতে সদস্য ছিলাম। প্রচুর নাটক দেখতাম ও মন্তব্য দিতাম। আমার পর্যবেক্ষণ দেখে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষই মনে করলেন, আমাকে দিয়ে অভিনয় হবে! তাদের উদ্যোগেই আমার অভিনয়ে আসা।
প্রিভিউ কমিটির সদস্য হলেন কীভাবে?
রাশেদ: একই টেলিভিশন চ্যানেলে মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করতাম। সেখান থেকেই দায়িত্বটি পাই।
এত শুটিং, আবার অফিস—সামলাতেন কীভাবে?
রাশেদ: সামলাতে পারিনি। গত এক বছর হলো চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। মাসে ২০-২৫ দিন শুটিং হলে অফিস করা সম্ভব ছিল না। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এখন আর অফিশিয়ালি না থাকলেও মানসিকভাবে সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেই আছি।
চাকরি ছাড়ার পর অনিশ্চয়তা মনে হয়নি?
রাশেদ: না, একদমই না। গত এক বছর খুব ভালো গেছে, নিয়মিত কাজ করছি। পরিশ্রম করলে রিজিক আল্লাহ নিজেই দিয়ে দেন। আমি জীবনের সেরা সময় পার করছি, এটাই আমার বিশ্বাস ও শুকরিয়া।
প্রথম অভিনীত নাটক কোনটি?
রাশেদ: ‘যে লাউ সেই কদু’। ২০১৮ সালের ঈদুল ফিতরে প্রচারিত হয়। সহশিল্পী ছিলেন অহনা রহমান। নাটকটি দর্শকপ্রিয় হয়েছিল।
আপনার টার্নিং পয়েন্ট মধ্যরাতের গল্প, এটা কেন?
রাশেদ: মধ্যরাতের গল্পই আমাকে সবচেয়ে বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়। এটি ছিল আমার অভিনীত তৃতীয় নাটক। গল্পে আমি ভাড়ায় মোটরবাইক চালাই; সেই সূত্রে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয়। মেয়েটির চরিত্রে ছিলেন নাজিয়া হক অর্ষা। দর্শক নাটকটি খুব পছন্দ করে।
‘হাবুর স্কলারশিপ’-এ ধারাবাহিকে নাম লেখালেন কেন?
রাশেদ: অনেক একক নাটক করেছি, কিন্তু ধারাবাহিকে আসার কারণ এর গল্প। ঈদের ধারাবাহিক হিসেবে প্রচারের পরই দর্শক সাড়া মেলে। পরে নিয়মিত ধারাবাহিক করার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা দেখাতে চেয়েছি দেশের সেরা মেধাবীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা শেষে আর দেশে ফেরেন না; এতে মেধাশূন্যতা তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের হাবু চরিত্রে যা আমি করেছি, ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ফ্যাকাল্টি হওয়ার অফার পেয়েও দেশে ফিরে আসে। কৃষিকাজে পরিবর্তন আনে, বেকারত্ব কমায়, গ্রামের উন্নয়ন ঘটায়। আমরা অস্ট্রেলিয়ার কৃষি ফার্মের মডেলও দেখিয়েছি, যা দর্শকের সঙ্গে ভালো কানেক্ট করেছে। গল্পের লেখাটাও আমার।
কিন্তু নাটকের টাইটেলে আপনার নাম থাকে না?
রাশেদ: আমি আমার নামে লিখি না। আমার মেয়ের নামে লিখি—সুবাতা রাহিক জারিফা। ওর বয়স ৯ বছর।
অহনা রহমানের সঙ্গে আপনাকে বেশি কাজ করতে দেখা যায়, কেন?
রাশেদ: অহনা ছিল আমার প্রথম নাটকের সহশিল্পী। আমাদের কেমিস্ট্রি ও বোঝাপড়া ভালো। দর্শকও গ্রহণ করেছে। এটাকে আমি আশীর্বাদ মনে করি। অর্ষার সঙ্গে, তানজিকা আমিনের সঙ্গেও একাধিক জনপ্রিয় নাটক করেছি।
কিছু নাটকে আপনার চরিত্র আলাদা করে চেনা যায় না, এমন মন্তব্যও আছে…
রাশেদ: আমি সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে, এমন গল্প বেছে নিতে চেষ্টা করি। সেই জায়গায় কিছু মিল থাকতেই পারে। ভবিষ্যতে গল্প বাছাইয়ে আরও সতর্ক থাকব।
বিনোদনজগতে অন্য পটভূমি থেকে আসায় কখনো মনে হয়েছে, অবহেলার শিকার হয়েছেন?
রাশেদ: সব জায়গায় প্রতিযোগিতা থাকে। ক্লাসে ফার্স্ট বয় ভালো করলে সবাই সাপোর্ট করে না, এটা স্বাভাবিক। আমি এগুলো নিয়ে ভাবি না। সৎভাবে কাজ করি। যে নাটক মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দেখা যায়, সেসব গল্পই করি। নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন গল্প বহুবার ফিরিয়ে দিয়েছি।
এত বছরে সহকর্মীদের কাছ থেকে সবচেয়ে কী শুনেছেন?
রাশেদ: সবাই বলে, আমি সময়মতো শুটিং লোকেশনে থাকি। সময়মতো শুটিং শেষ করে বাড়ি ফিরি। রাত ৯-১০টার পর শুটিং করি না। আমি চাই প্রোডাকশন হিরোদের (বয়, লাইটম্যান, শুটাররা) রাত ৩-৪টা পর্যন্ত কাজ করতে না হোক। সবাই যেন ১০টার মধ্যে বাসায় ফিরতে পারে।
কদিন আগে আপনাকে ইউরোপে ঘুরতে দেখা গেল…
রাশেদ: আমার এক ভক্ত আছেন নিউইয়র্কে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলছিলেন আমাকে নিয়ে ঘুরতে চান। পরিচয় প্রকাশ করতে চান না। তিনিই আমাকে ইউরোপ ঘুরিয়েছেন।
এখন কী নিয়ে ব্যস্ত?
রাশেদ: এখন একক ও ঈদের বিশেষ নাটকের শুটিং চলছে। ঈদে প্রায় ১৫টি নাটকে অভিনয় করব। দ্বিতীয় ধারাবাহিক ‘পাঙ্খা’ গত মাস থেকে প্রচার শুরু হয়েছে, এখানে পাঙ্খা চরিত্রে অভিনয় করেছি। একক ও ধারাবাহিক নাটক নিয়েই ব্যস্ত আছি। সিনেমা বা ওটিটির কাজ ভবিষ্যতে করব কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। আমি ধৈর্য ধরতে চাই, কাজ নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চাই না।