অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত পেলেও এবার ‘ইত্যাদি’তে গান গেয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। তাঁর অভিনীত ঈদের দুটি নাটক ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে। ঈদ না শেষ হতেই শুরু করেছেন শুটিং। সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে রবিবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

আপনাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না...
আমার ঈদ শেষ। এখন আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। শুটিংয়ে থাকার কারণে ফোন দেখারই সময় পাইনি।
ঈদে তো অনেকেই ঘুরছেন....
আমি এবার আর ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা করতে পারিনি। আগে থেকেই শিডিউল দেওয়া ছিল। তারপরও ভালোই সময় পেয়েছি। পরিবার, বন্ধু, কাজিনদের সঙ্গে কিছুটা ঘুরেছি, আড্ডা দিয়েছি। আমার পশুপাখির সঙ্গে ঈদ কেটেছে। পরে হয়তো আলাদা করে সময় বের করে ঘুরতে যাব।
‘ইত্যাদি’র গান নিয়ে প্রতিক্রিয়া কেমন পাচ্ছেন?
সবাই যে অল্প সময়ে আমার গাওয়া ‘তুমি আমায় ভালোবাসো’র এতটা প্রশংসা করবে, ভাবিনি। গানটি নিয়ে আমি খুশি। তবে অনেকেই জানেন না, আমি গানই আগে শুরু করেছিলাম। গায়িকা হতে এসে নায়িকা হলাম (হাসি)। দর্শক আগে আমাকে অভিনয় দিয়ে চিনবে, ভাবিনি।
তাহলে আপনার গান দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু?
আমি শৈশব থেকে গান শিখতাম। ছায়ানট ও কচি কাঁচার আসরে গান শিখেছি। সাধনা মিত্র ম্যাম, ফেরদৌস আরা ম্যামের স্কুলে, বাসায় গান শিখতাম। শৈশব থেকেই গানের নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পেয়েছি। অনেক স্টেজ শো করতাম। পরে অভিনয় নিয়েও আগ্রহ তৈরি হলো। একসময় নিয়মিত অভিনয় করে প্রশংসা পেতে শুরু করলাম। তখন মনে হলো, একসঙ্গে গান ও অভিনয় চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। গানের প্রতিভা ঢাকা পড়ে গেল।
গানের প্রতিভা প্রকাশ পেল কীভাবে?
গান তো আমি সব সময় লালন করি। পেশাগতভাবে গান না গাইলেও গানের চর্চায় থাকা হতো। শুটিংয়ে মাঝেমধ্যে গান গাইতাম। শুটিংয়ে অনেকেই গানের প্রশংসা করত। আমার গানের কথা সহকর্মীরা জানত। এভাবেই প্রথম পরাণ পাখি নামে একটি নাটকে গান করার সুযোগ হয়। অল্প সময়ে গানটি ভাইরাল হয়। কোটি ভিউ হয়। সেই গান দিয়েই দর্শক প্রথম জানতে পারে আমার গানের কথা। সেখান থেকেই আমাকে ডাকা হয় ‘ইত্যাদি’তে গান গাইতে। এটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের ছিল।
‘ইত্যাদি’ ঘিরে কোনো ঘটনা মনে পড়ে?
শৈশব থেকে ‘ইত্যাদি’র দর্শক হিসেবে অনুষ্ঠানটি নিয়ে অনেক আগ্রহী ছিলাম। একসময় ঈদের দ্বিতীয় দিন মানে আগেই টেলিভিশনের সামনে বসে থাকতে হবে, ‘ইত্যাদি’ দেখতে হবে। আমার তো পুরান ঢাকায় বেড়ে ওঠা। সেখানে সবার বাসায় সেই সময়ে টিভি ছিল না। যে কারণে আমরা দল ধরে বিভিন্ন বাসার কাজিনরা ইত্যাদি দেখতাম। পুনঃপ্রচার দেখতাম। এবার সেই ইত্যাদি নস্টালজিয়ায় ফেলে দিয়েছিল। ইত্যাদির মতো দর্শকপ্রিয় আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভালো লেগেছে।
ঈদে ‘যত গুড় তত মিষ্টি’, ‘টেলিফোনে বিয়ে’ নাটকগুলো ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে...
হ্যাঁ, এই নাটকগুলো দর্শক দেখছে। এর সঙ্গে যুক্ত করব একান্নবর্তীকে। নাটকটি পারিবারিক গল্পের। এখানে শহর থেকে একটি মেয়ের গ্রামে গিয়ে ঈদ করার নানা অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। একটি পরিবারের কেউ ভালো, কেউ মন্দ। এসব নিয়ে কী কী সংকট তৈরি হয়, সেসব প্রাসঙ্গিক বিষয় এসেছে। গল্পটি নিয়ে দর্শক শৈশবের ঈদের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করতে পারছে।
আপনাকে বেশির ভাগ কমেডি নাটকে দেখা যায় কেন?
দর্শকদের পছন্দেরও গুরুত্ব দিতে হয়। সেখানে কমেডি হয়তো একটু বেশি। তবে এখন আমি নিজেই সতর্ক হয়েছি একই চরিত্রে বেশি অভিনয় না করতে। ঝগড়াঝাঁটি বেশি করে ফেলেছি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আর কত হব? ভিন্ন কাজগুলোও করা শুরু করেছি। চরিত্রপ্রধান চিত্রনাট্যগুলো এখন আসা শুরু করেছে।
কখনো মনে হয়েছে, নাটকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে?
আগে মনে হতো, অনেক বাছবিচার করে কাজ করা দরকার। কিন্তু এখন মনে হয়, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। এটা সব গল্প দিয়ে সম্ভব নয়। যে কারণে আমার কাজের সংখ্যা বেশি। করব না বললেও মাসে ২৪–২৫ দিন শুটিং করতে হয়। ক্যারিয়ারেও তো আপস অ্যান্ড ডাউনের বিষয় আছে। যে কারণে কখনো মনে হয়েছে, বেশি কাজ করছি। সেখান থেকে উপলব্ধি হয়েছে, আমার আরও ভালো কাজ করা দরকার।
ঈদে নিজের নাটক দেখেছেন?
অভিনয় করার পর নিজের নাটক দেখতে একটু ভয়ই লাগে। তারপরও দেখে শেখার চেষ্টা করি। একান্নবর্তী দেখে ভালোই লেগেছে। এখন একসঙ্গে প্রতিদিন দু–তিনটি নাটক রিলিজ হচ্ছে। এগুলো সব দেখা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্য অভিনয়শিল্পীদের নাটক দেখেন?
দেখি। কিন্তু এবার ঈদে দেখার সময় হয়নি। খুবই আগ্রহ নিয়ে আছি পরিচালক রাখির (হাসিব হোসাইন) মন দিওয়ানা দেখার জন্য। তৌসিফ ভাই আর তটিনী অভিনয় করেছে। অন্যদের আরও কিছু নাটক দেখব।
ঈদের সিনেমা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, দেখেছেন কোনটা?
আমার কপাল ভালো নয়। বাংলা সিনেমা দেখতে গিয়ে ইংরেজি সিনেমা দেখেছি। বাংলা সিনেমার টিকিট পাইনি। তবে বাংলা সিনেমা যে হাউসফুল, এটা আমার কাছে ভালোই লেগেছে। তা ছাড়া এবার নাটকের অনেক ডিরেক্টর সিনেমা বানিয়েছে, এটা ভালো লাগছে। সময় পেলে সব সিনেমাই দেখার ইচ্ছা রয়েছে।