জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি
জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি

নাটকে অভিনয় চাকরির মতো হয়ে গেছে

ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে জান্নাতুল সুমাইয়া হিমির একাধিক নাটক। ঈদের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে গাওয়া তাঁর গানও ট্রেন্ডিংয়ে আছে। চলছে ঈদুল আজহার নাটকের শুটিং। এসব নিয়েই তাঁর সঙ্গে কথা বললেন মনজুর কাদের

প্রশ্ন

আপনার অভিনীত নাটক তো প্রায়ই ট্রেন্ডিংয়ে থাকে, এবার আপনার গাওয়া গানও ট্রেন্ডিংয়ে। গানের বিষয়টা একটু বলবেন?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: ছোটবেলায় ছায়ানট ও কচিকাঁচায় গান শিখেছি, তাই গান নিয়ে আলাদা একটা নস্টালজিয়া কাজ করে। গান এবার মানুষ দেখেছে বা শুনেছে, ট্রেন্ডিংয়েও এসেছে, এটা অবশ্যই ভালো লেগেছে। নাটক হচ্ছে প্রতিদিন। নাটকে অভিনয় একটা চাকরির মতো হয়ে গেছে। গানও মানুষ এবার নাটকের মতোই গ্রহণ করেছে দেখলাম, এটা ভালো লেগেছে। আমার কাছে অনেক সারপ্রাইজিং ছিল। ভালো লাগার আরও কারণ, আমার সহশিল্পী, কাছের মানুষ ও ভক্তরা গানের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। তাই গানের বিষয়টা আলাদা করে গুরুত্ব বহন করে কি না, এখনই বলতে পারছি না। কত ভিউ হয়েছে, এটার চেয়ে আমার কাজগুলো আমার কাছে ভালো লাগছে কি না, সেটাই বিষয়। সেটাই গুরুত্বপর্ণ।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন

বেশ তো সাড়া পেলেন। নিয়মিত হবেন?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: নিয়মিত কতটুকু হতে পারব, জানি না। যদি এরপর মৌলিক কোনো গান গাওয়ার প্রস্তাব আসে, করব। আমার মনে হয়, একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে না থেকে যদি পারি বা মানুষ যদি গ্রহণ করে, আমার পছন্দের কাজ তো আমি করতেই পারি। গানে অত বেশি নিয়মিত না হলেও শখের বশে গান গাওয়া হবে।

প্রশ্ন

ভিউ নিয়ে আপনার দর্শন কী?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: ভিউ নিয়ে আমার আলাদা কোনো দর্শন নেই। মনে হয়, এটা যেকোনো প্রজেক্টের একটা অংশ। একটা প্রজেক্টের চিত্রনাট্য ভালো হতে হয়, এরপর লোকেশন, আর্টিস্ট ও পরিচালকের সমন্বয়ে কাজটা হয়। তাই ওই কাজ অবশ্যই চাই মানুষ দেখুক। এত কষ্ট করে আমরা কাজ করি, তাই যখন ভিউ হয়, ভালো লাগে। কারণ, মানুষ দেখছে বলেই ভিউ হচ্ছে। প্রশংসা করছে, আলোচনা–সমালোচনাও করছে। এটা তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ভিউর বিষয়টা সরাসরি জড়িত প্রযোজকদের জন্য, এখান থেকে টাকা উঠে আসার ব্যাপার থাকে। এখন আমার কাজ যদি না-ই দেখে, আমাকে নিয়ে প্রযোজক তো পরের প্রজেক্টে ভাববে না। তারা হয়তো বিকল্প সিদ্ধান্তে যাবে।

প্রশ্ন

অনেকের অভিযোগ, আপনার অভিনীত নাটক ও চরিত্রগুলো প্রায় কাছাকাছি।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: আমাদের তো গল্পের ক্ষেত্রে অনেক স্বল্পতা থাকে, অনেক চরিত্রই আমরা দেখাতে পারি না; ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হয়। তাই আবার কিছু কিছু গল্প ভিন্ন হলেও আমারই বয়সী একটা মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের চরিত্র করতে পারি না বা বিবাহিত নারীও করা যায় না। তবে আমরা চেষ্টা করি সব চরিত্র কাছাকাছি যেন না হয়। চেষ্টা করি ভিন্ন রকম গল্প ও ভিন্ন পটভূমিতে নিজেকে উপস্থাপন করতে। তবে হয়তো অনেক সময় সীমাবদ্ধতার কারণে সব ধরনের চরিত্র করতে পারি না। এটাও ঠিক, অনেকগুলো কাছাকাছি। একটু ঝগড়াটে চরিত্র, বয়ফ্রেন্ড–গার্লফ্রেন্ড টাইপ চরিত্র মানুষের চোখে যায় বেশি; তাই বেশির ভাগ কাছাকাছি মনে হয়। আমি কিন্তু চেষ্টা করি। গ্রামীণ পটভূমির, বাস্তবধর্মী গল্পেও কাজ করার চেষ্টা থাকে।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। ছবি: ফেসবুক
প্রশ্ন

অনেক অভিনয়শিল্পীই ক্যারিয়ারের একটা পর্যায়ে এসে নিজের ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় কাজ করেছেন।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: প্রত্যেক মানুষই তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। নিজে থেকে না বদলালেও বদল হয়ে যায়। একধরনের কাজ করতে করতে একঘেয়েমি চলে এলে হয়তো ভিন্ন ধারায় কাজ করতে হবে। আমি যদি ফিল্মেও যাই, আমাকে কিন্তু অভিনয়টাই করতে হবে। ওটিটিতে গেলেও তা–ই। আমার মনে হয় না পুরোপুরি ধারা কেউ বদলায়। সময়ের সঙ্গে হয়তো নতুন কিছু সংযুক্ত করে। কখনো নিরীক্ষা করে। একেকজনের একেক সময়ে সেই উপলব্ধি আসে। অন্য কোনো ধারায় আমি কাজ করব, সে রকম চিন্তা মাথায় আসেনি।

প্রশ্ন

ঈদের সিনেমা নিয়ে তো অনেক আলোচনা হচ্ছে। আপনি কোনটা দেখেছেন, কোনটা কেমন লাগল?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: ঈদের সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম, কিন্তু টিকিট পাইনি। তাই ‘ফ্লাইট রিস্ক’ নামের একটা ইংরেজি চলচ্চিত্র দেখে চলে এসেছি। এটা খুব সুন্দর একটা মুভি। কিন্তু আমার পছন্দের তালিকায় ছিল বাংলা সিনেমা। তবে বাংলা ছবি দেখার জন্য এত ভিড়, এত মানুষের আগ্রহ দেখে ভালো লেগেছে।

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

ছোট পর্দার নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীরা বড় পর্দায় সাফল্য পাচ্ছেন। সিনেমা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: আসলে একজন অভিনয়শিল্পী কোনো পরিকল্পনা করে তো খুব একটা এগোতে পারে না। কারণ, আমাদের কাজগুলোর সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে খুব একটা থাকে না। ধরেন, অমুক কাজে আমাকে প্রথমে তো কাস্টিং করতে হবে। যতই আমি পরিকল্পনা করি সিনেমা করব, সিনেমার প্রস্তাবও তো আসতে হবে। আমার কাছে তা–ই মনে হয়। এখনো ওই রকম সিনেমার প্রস্তাব আসেনি আমার কাছে, যেমনটা আমি করতে চাই। এখনো আমি অনেক বেশি নাটকের স্ক্রিপ্ট পাই। তাই নাটক নিয়ে ব্যস্ত আছি। সব সময় নাটক নিয়েই আলোচনা হয়। সামনে একটা সময় যদি মনে হয় সিনেমা করব, নিয়মিত হব, একটা সময়ে গিয়ে হয়তো সিনেমা নিয়ে আমার এমন ভাবনা হতেও পারে।

জান্নাতুল হিমি। অভিনেত্রীর সৌজন্যে
প্রশ্ন

ঈদের জন্য কী কী কাজ করছেন?

জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি: ঈদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঈদের এক-দুই দিন আগপর্যন্তও হয়তো শুটিং চলবে। কী কী কাজ আসবে, তা এখনো নিশ্চিত নই। এখন পর্যন্ত যে কয়টি কাজ করেছি, সেসবের মধ্যে আছে গ্রামের নাটক, সিরিয়াস গল্প, পারিবারিক গল্পও। কমেডি কনটেন্ট তো নিয়মিত হিসেবে থাকছে। আজ (সোমবার) শুটিং করছি মুসাফির রনির পরিচালনায় সিরিয়াস গল্পের কাজ। একটি বস্তিতে শুটিং করছি। এবার ঈদে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের গল্পেও পাওয়া যাবে। সব ধরনের গল্পের একটা সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছি।