
কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে চলছে কাজী নওশাবা আহমেদ অভিনীত ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’। এর বাইরে সেখানকার আরেকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছেন এই অভিনেত্রী। বাংলাদেশেও একাধিক ছবিতে অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।
‘যত কাণ্ড কলকাতায়’ ছবির পটভূমি কী? ছবিতে আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলবেন?
কাজী নওশাবা আহমেদ : সাবা নামের একটি মেয়ে, যে কিনা বাংলাদেশের। মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, মায়ের শিকড়টা তার মা–ও জানেন না। এদিকে মায়ের শারীরিক যে অবস্থা, বয়স; তাতে মনে হয়, তার মা একধরনের চাপা ব্যথা নিয়ে গোলকধাঁধার মধ্যে জীবনটা পার করছেন। এই জীবন থেকে মাকে পরিত্রাণ দিতে চায় মেয়ে। এরপর মেয়েটা বেরিয়ে পড়ে শিকড়ের সন্ধানে। যাত্রা শুরু হয় কলকাতা শহরে। কলকাতার অলিগলিতে পথ চলতে গিয়ে একটি পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়। গল্প এগোতে থাকে। মেয়েটাও ধাঁধার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর মেয়েটার দেখা হয় তোপসের (আবীর চ্যাটার্জি) সঙ্গে। গল্প মোড় নেয় অন্যদিকে। আদতে সাবা (কাজী নওশাবা আহমেদ) শিকড়ের সন্ধান খুঁজে পায় কি না, মায়ের যে একধরনের চাপা সন্দেহ নিয়ে বেড়ে উঠেছে, সেটার সমাধান করতে পারে কি না, সেটাই এ ছবির গল্প।
ছবির শুটিং কবে করেছেন?
কাজী নওশাবা আহমেদ : ২০২৩ সালে শুটিং করেছি। দুই দফায় ছবির কাজ করেছি। অভিজ্ঞতা খুবই মজার। কারণ, কলকাতায় সিনেমার কাজ, সেখানকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। যদিও আমি ‘একেনবাবু’ সিরিজে কাজ করেছি। আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও কাজ করেছি। কিন্তু এত বড় ক্যানভাসে আগে কাজ করা হয়নি। আর ছবির গল্প যেহেতু আমাকে ঘিরেই এগোতে থাকে, অনেক দিন ধরে সেখানে আমার থাকা হয়েছে। এতে একধরনের আত্মিক সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে দারুণ অভিজ্ঞতা। আমি ব্যক্তি নওশাবা হিসেবে একভাবে কলকাতাকে দেখেছি, আবার সাবা চরিত্র হয়ে আরেকভাবে দেখেছি। আমার নিজের যেহেতু ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালো লাগে, আমি যেহেতু ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়া মানুষ, তাই আমি দুইভাবে খুবই উপভোগ করেছি।
যত দূর জানি, আপনার সঙ্গে আবীর চ্যাটার্জির এটি প্রথম কাজ। প্রথম পরিচয়টা কীভাবে হয়েছিল এবং শুটিং সেটে আপনাদের দুজনের বোঝাপড়া কেমন ছিল?
কাজী নওশাবা আহমেদ : এটা আবীরদার সঙ্গে আমার প্রথম কাজ। প্রথমে চিত্রনাট্য পড়ার জন্য আমাকে বসতে হয়েছিল। সে সময় পরিচালক অনীক দত্ত ছিলেন, বেণী বসুও ছিলেন। আমরা এখানে যেভাবে শুটিং করি, সেখানে একটু আলাদা। তাঁরা শুটিংয়ের আগে চিত্রনাট্য পড়ার সেশনকে খুবই গুরুত্ব দেন। যদিও আমি সাবা চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলাম, তারপরও সবাই মিলে চিত্রনাট্য পড়ার সেশনে আবীরদাকে দারুণভাবে বুঝতে পারি। সৃজনশীল বিষয়ে অনেক বেশি আলোচনা হতো। শুরুতে অভিনয়ের প্রশিক্ষক ছিলেন বেণী বসু, পরে সোহাগ সেন। বেণী বসু, সোহাগ সেন ও আবীর চট্টোপধ্যায়—সবার সঙ্গে একটা চমৎকার ভ্রমণ হয়েছে। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
হলে ছবিটা দেখা হয়েছে? কলকাতার দর্শক ও সহশিল্পীদের প্রতিক্রিয়া কী?
কাজী নওশাবা আহমেদ : মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। আমি যেতে পারিনি। তবে আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানানো হয়েছে, যে চারটি সিনেমা এই সময়ে মুক্তি পেয়েছে, ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’ হিট। এটা আমার জন্য বড় বিষয়, দায়িত্বেরও। আমি ভেবেছিলাম, শুধু সিনেমার লোকজনই কথা বলবেন, কিন্তু খুবই অবাক হয়েছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি শ্রীলেখা মিত্র, আকাশ সেনসহ ওখানকার বেশ কয়েকজন ভালো অভিনেতা যাঁরা থিয়েটার করেন, তাঁদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনায়। তাঁরা বলেছেন, আমার অভিনয় খুবই সাবলীল ছিল। এ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি। আমার পরিচালকও খুশি হয়ে বারবার বলছিলেন, আমি পারফেক্ট কাস্টিং করেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। অভিনয়ের জোরে আমি এত দূর এসেছি। অভিনয় দিয়েই যেন এগিয়ে যেতে পারি, দেশের মুখ যেন উজ্জ্বল করতে পারি।
কাজ করতে গিয়ে আবীর চ্যাটার্জির সঙ্গে আপনার আলাপ–পরিচয়। তার আগে নিশ্চয় এই অভিনেতার কাজ দেখা হয়েছে? এসবের পরিপ্রেক্ষিতে যদি জানতে চাই, নওশাবার দৃষ্টিতে আবীর, তাহলে কী বলবেন?
কাজী নওশাবা আহমেদ : আবীরদার অনেক কাজ দেখেছি। আমার মায়ের ভীষণ পছন্দের অভিনেতা। শুধু আমার মায়ের নন, আমার মেয়ের, আমার বন্ধুদেরও প্রিয় অভিনেতা। সহশিল্পীদেরও প্রিয়। তিনি খুবই ভার্সেটাইল অভিনেতা। তিনি খুবই কনফিডেন্ট একজন অভিনয়শিল্পী। পুরো টিমকে অসাধারণভাবে এগিয়ে নিয়ে যান। কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, তা তিনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন। শুটিংয়ের বাইরে আমি যেহেতু একটু চুপচাপ স্বভাবের, তিনি খুবই অসাধারণভাবে আমাকে সহজ করে নিয়েছিলেন। আবীরদার পুরো টিম আমাকে আপন করে নিয়েছিল। শুটিং শেষে ফেরার আগে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়েছিল। তিনি ভীষণ ভালো মানুষ, ভীষণ ভালো বাবা, খুবই ডাউন টু আর্থ।
ভবিষ্যতে টালিউডে বা যৌথ প্রযোজনায় কাজের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে কি? কলকাতার নির্মাতাদের সঙ্গে আপনার কাজের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়েছে?
কাজী নওশাবা আহমেদ : কিউ নামের একজন পরিচালক আছেন, তাঁর ‘দেশলাই’ সিনেমায় অভিনয় করেছি। ২০২৩ সালে শুটিং করেছি। এ ছবিতে মজার চরিত্রে কাজ করেছি। আমার জীবনে যতটা চরিত্র করেছি, এর মধ্যে কোনো দিন হিউমার পার্ট এক্সপ্লোর হয়নি। ‘দেশলাই’ সিনেমায় সে সুযোগ পেয়েছি। ছবিটার গল্প দুর্দান্ত। আমার বিশ্বাস ভালো কিছু হচ্ছে। একটা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, পরিচালক অন্নপূর্ণা বসু। বাংলাদেশেও কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ের কথাবার্তা চলছে।
আপনি তো চারুকলা থেকে পাস করেছেন। আঁকাআঁকির জীবন থেকে কি নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছেন, নাকি কাজের ফাঁকে চলছে?
কাজী নওশাবা আহমেদ : আমার এখন মনোযোগ অভিনয় ও নির্মাণে। তাই নিজে ছবি আঁকছি না। তবে নিজে যেটা ভাবছি, সেটা বন্ধুকে বলছি, সে তা আঁকছে। হয়তো নিজের জন্য আবার আঁকা শুরু করব। এ মুহূর্তে আমার কাছে ম্যাটার করে কমিউনিটি ওয়ার্ক, সেটা শিল্পের মাধ্যমে করতে চাই।