‘এলিন: কুইন অব দ্য সিরিয়াল কিলার’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স
‘এলিন: কুইন অব দ্য সিরিয়াল কিলার’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সিরিয়াল কিলার, তথ্যচিত্রে সেই সত্যি ঘটনা

১৯৮৯ থেকে ১৯৯০—মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সাতজন পুরুষকে হত্যা করেছিলেন তিনি। ২০০২ সালে প্রাণঘাতী ইনজেকশনে যাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়, এলিন উয়ারনস—যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ–ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত নারী খুনিদের একজন। তাঁর জীবনের গল্প বহুবার সিনেমা–টিভিতে এসেছে। শার্লিজ থেরন তাঁর চরিত্রে অভিনয় করে অস্কারও জিতেছিলেন।
এবার নেটফ্লিক্স এনেছে নতুন প্রামাণ্যচিত্র ‘এলিন: কুইন অব দ্য সিরিয়াল কিলার’, যেখানে উঠে এসেছে উয়ারনসের অপরাধ, তাঁর মানসিক অবস্থা এবং নিজের মুখে দেওয়া বিরল সাক্ষাৎকার, যা ১৯৯৭ সালে শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্যাসমিন হার্স্ট কারাগারে বসে ধারণ করেছিলেন। হার্স্ট আর উয়ারনস সে সময় নিয়মিত একে অন্যকে চিঠি লিখতেন।

তথ্যচিত্রটির মূল উপাদান এ দীর্ঘ আলাপচারিতাই। পাশাপাশি পরিচালক এমিলি টার্নার যুক্ত করেছেন পুলিশ, তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এবং উয়ারনসের ঘনিষ্ঠজনদের সাম্প্রতিক অডিও বয়ান।

‘এলিন: কুইন অব দ্য সিরিয়াল কিলার’–এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

এলিন উয়ারনস: নিজের মুখে নিজের গল্প
সাক্ষাৎকারজুড়ে উয়ারনস নিজেকে তুলে ধরেন এক ‘বেঁচে থাকার লড়াইয়ে থাকা’ নারী হিসেবে। কঠোর, ধর্মান্ধ দাদা–দাদির কাছে বড় হওয়া, যা তাঁর ভাষায় ‘দমবন্ধ সময়’।
১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। পরের পাঁচ বছর কাটে রাস্তায়—হিচহাইকিং, সেতুর নিচে বা খোলা মাঠে রাত কাটানো। এ সময় বহুবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার দাবি করেন তিনি।
শৈশবের বান্ধবী ডন বটকিনসের মতে, উয়ারনস যৌন পেশায় নামেন মূলত তাঁর ভাইয়ের জন্য কিছু টাকা জোগাড় করতে, যে তখন একই কঠোর পরিবারেই বড় হচ্ছিলেন।

১৯৮৯ সালে রিচার্ড ম্যালোরিকে হত্যা করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হলেও উয়ারনস তাঁর সাক্ষাৎকারে নতুন দাবি করেন, তিনি খুনটি করেননি।
উয়ারনস জানান, পুলিশের সামনে ভুল করে কিছু বলে ফেলেছিলেন এবং পরে ‘মত পালটে ফেলতে’ পারেননি। কারণ, তখন নিজের ও ধর্ষণের শিকার হওয়া অন্য নারীদের অভিজ্ঞতার কথাও মাথায় ঘুরছিল।
‘সেই মিথ্যাটা ধরে রাখতে হয়েছিল আদালতজুড়ে—অতটাই বিরক্তিকর ছিল,’ উয়ারনস বলেন।

‘এলিন: কুইন অব দ্য সিরিয়াল কিলার’–এর পোস্টার। নেটফ্লিক্স

নিজেকে ‘সিরিয়াল কিলার’ শব্দে সংজ্ঞায়িত করতে নারাজ উয়ারনস। তাঁর দাবি, ‘মদ আমাকে বদলে দিয়েছিল। আমি খুনি হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার আসল সত্তা সেটা ছিল না।’

কী ছিল তাঁর উদ্দেশ্য
নিজেকে সিরিয়াল কিলার হিসেবে না মানলেও ভয়ংকর খুনের সঙ্গে নিজের নাম জড়ানোর প্রতি একধরনের আগ্রহ দেখা যায় উয়ারনসের মধ্যে। ক্যামেরার সামনে হার্স্টকে তিনি আত্মগর্ব বলেন, ‘তোমরা তো এর থেকে লাখ লাখ ডলার কামাবে।’
পরিচালক এমিলি টার্নার বলেন, একটি সম্ভাব্য তত্ত্ব হলো, উয়ারনস এতটাই নির্যাতিত জীবন কাটিয়েছিলেন যে তাঁর প্রতিশোধস্পৃহা তৈরি হয়েছিল। যখন তিনি সাতজন পুরুষকে হত্যা করেন, তখন তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল টিরিয়া মুর নামের এক নারীর সঙ্গে। ম্যালোরিকে হত্যার কথা সেই সঙ্গীকেও জানিয়েছিলেন উয়ারনস।
‘তিনি যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন কেবল অর্থ জোগার করে বেঁচে থাকার জন্য’, বলেন টার্নার।
এলিন উয়ারনস সত্যিই ক্রমিক খুনি ছিলেন কি না, শেষ পর্যন্ত সেটি পুরোপুরি জানা যাবে না। এ প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘আসলে কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছানো মুশকিল। দর্শক যেন নিজেরাই সিদ্ধান্তে পৌঁছান—আমি সেটা চাই।’
টাইম অবলম্বনে