
চোখ ছলছল, হাতে ফুল—মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন শিল্পী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ।
ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১০টায় মারা গেছেন ফরিদা পারভীন। তাঁর মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শোক জানান।
আজ বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ফরিদা পারভীনের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। শেষশ্রদ্ধার আয়োজন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সংস্থা (জাসাস)।
এই আয়োজনে এক ভিডিও কলে অংশ নেন সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা; ফরিদা পারভীনের প্রতি শেষশ্রদ্ধা জানান তিনি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমানসহ আরও অনেকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপির সংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক চিত্রনায়ক উজ্জ্বল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একজন লেজেন্ডারি (কিংবদন্তি) শিল্পীকে হারিয়েছি। এ দুঃখটা আমাদের সবার মধ্যে রয়েছে। এ শূন্যটা পূরণ হওয়ার নয়।’
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম সাংবাদিকদের বললেন, ‘ফরিদা পারভীন দেশাত্মবোধক গান করেছেন, পরবর্তী সময়ে লালনের গান করেছেন। তাঁর গায়কিকে মিডলক্লাস ভঙ্গি আছে। এর মধ্য দিয়ে লালনের গানের শিল্পী হিসেবে তিনি এমন এক উচ্চতায় গিয়েছিলেন, তাঁর তুলনা নেই। তিনি লালনের সাধনার দিকেও ক্রমান্বয়ে গেছেন।’
মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘শেষের দশকগুলোতে তিনি একজন লালন সাধক হিসেবেই জীবন যাপন করেছেন। ফলে দুটি (শিল্পী ও সাধক) দিক তাঁর মধ্যে একাকার হয়েছে। একজন শিল্পী বিশেষ কাল্ট তৈরি করতে পারেন, কালচারের অন্য একটা মাত্রা তৈরি করতে পারেন—এই উদাহরণ যেকোনো সংস্কৃতিতে কম পাওয়া যাবে। ফরিদা পারভীন সে রকমই একটা উদাহরণ, একাই কাজটা করেছেন।’
লালনের গানকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই শিল্পী। ভারী বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ফরিদা পারভীনের শেষ শ্রদ্ধায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
শিল্পীকে শেষবারের মতো দেখতে কেরানীগঞ্জ থেকে ছুটে এসেছেন তাওহীদের পাঠশালা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খাদেম আলী আরিফ আকবর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (ফরিদা পারভীন) লালনের বাণীকে সহজ করে নাগরিক জীবনে প্রচার করেছেন। লালনের গানকে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন, সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বাউলবাদের গানগুলোকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন।’
ফরিদা পারভীনের স্বামী, বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম বলেন, ‘আপনারা যাঁরা ফরিদা পারভীনকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এসেছেন, তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়েছে। ফরিদা পারভীনের মরদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা রওনা হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। বাদ মাগরিব তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হবে।