ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এটি এক আবেগঘন সন্ধ্যা। প্রিয় মুখ, পুরোনো দিন আর মন ছুঁয়ে যাওয়া গান—সব মিলিয়ে সিডনির গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল ভেন্যু যেন ১০ মে শনিবার পরিণত হয়েছিল এক টুকরো ক্যাম্পাসে।
অস্ট্রেলিয়ায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ডিইউএএএ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫’। অনুষ্ঠানে সাড়ে তিন শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবার-পরিজনের অংশগ্রহণে তৈরি হয় এক প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর পরিবেশ।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী আগুন। ‘তোমার জন্য’, ‘বেদনার পূজা’ কিংবা ‘এই জন্ম তোমার জন্য’—এমন সব চেনা গানে দর্শক-শ্রোতা মুহূর্তেই ফিরে যান কৈশোর-যৌবনের দিনগুলোতে। গিটারের ছড়ে ছড়ে যখন আগুন বলেন, ‘প্রবাসে এমন শ্রোতা আর ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যিই আপ্লুত,’ তখন হলজুড়ে বাজে করতালি।
পরে প্রথম আলোকে আগুন বলেন, ‘এটা আমার সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেগটাই আলাদা। মঞ্চে উঠেই সেটা অনুভব করেছি।’
আগুনের আগে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী সিঁথি সাহা। তাঁর সুরেলা কণ্ঠে মন ভিজে যায় উপস্থিত সবার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন লাবণ্য আর শুদ্ধ নৃত্যে নজর কাড়েন সিডনিপ্রবাসী নৃত্যশিল্পী অর্পিতা সোমচৌধুরী। শিশুদের পরিবেশনাতেও ছিল প্রাণের ছোঁয়া—ঈষিকা ও তারার নাচে মঞ্চ যেন হয়ে ওঠে ঘরের উঠোন।
সংগীত পরিবেশন করেন ঢাবি অ্যালামনাই সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা—মাসুদ মিঠুন, তামিমা শাহরিনসহ অনেকে। আর অনুষ্ঠানে বিশেষ মাত্রা যোগ করেন সরোদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় তানিম হায়াৎ খান।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে। নতুন প্রজন্মের সোমাইতা, নোরা ও নাঈফা এই পরিবেশনায় অংশ নেয়, সঙ্গে ছিলেন অ্যালামনাই দলের সদস্যরাও। আয়োজনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান হাফিদ আবিয়ান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নার্গিস বানু।
ডিইউএএএর সভাপতি কামরুল মান্নান বলেন, ‘নবীন-প্রবীণ অ্যালামনাইদের একত্রে এই মিলন শুধু স্মৃতির পরশই নয়, এটি আমাদের শক্তি। আমরা চাই তরুণেরা আরও বেশি যুক্ত হোক এই উদ্যোগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে প্রবাসে ছড়িয়ে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু প্রাক্তনদের মাঝে মিলনই ঘটেনি, প্রবাসে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রদর্শনীও হয়ে উঠেছে ‘গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন’। এমনটাই মনে করেন প্রাক্তন ঢাবি শিক্ষার্থী, বর্তমানে এএনজেড ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপক জাহিদ মাহমুদ।
আর ডিইউএএএর সাধারণ সম্পাদক লিঙ্কন শাফিউল্লাহ বললেন, ‘পুরোনো ও নতুন প্রজন্মের এমন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আরও গভীর হবে বলেই আমরা আশাবাদী।’