গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব ধরনের অ্যালবাম বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে সেভেনটিন
গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব ধরনের অ্যালবাম বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে সেভেনটিন

এ যুগেও কেন কে–পপ সিডির রমরমা

২২ আগস্ট কার্মা অ্যালবাম প্রকাশ করে রীতিমতো আলোড়ন তোলে স্ট্রে কিডস। প্রথম সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩০ লাখ কপি বিক্রির রেকর্ড গড়ে জনপ্রিয় এই কে–পপ গ্রুপ। কোরিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রেও অ্যালবামটি সাড়া ফেলেছে, এক মাসে ৪ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে।

স্পটিফাই, ইউটিউব মিউজিকের রমরমা সময়ে বিশ্বজুড়েই সিডিতে অ্যালবাম বিক্রি তলানিতে নেমেছে। তবে কে–পপের চিত্রটা আলাদা, এখনো তাদের সিডি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন শ্রোতা। সংগীত নিয়ে ডেটা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান লুমিনেট জানিয়েছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া শীর্ষ ১০ অ্যালবামের ৭টিই ছিল কে–পপ অ্যালবাম। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন টেইলর সুইফট, তাঁর আলোচিত অ্যালবাম দ্য টর্চার্ড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট ১৫ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্ট্রে কিডসের অ্যালবাম এইট; যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালবামটির ৪ লাখ ৪২ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে কে–পপ গ্রুপটির আরেক অ্যালবাম হোপ, এটি বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কপি। তৃতীয় স্থানে থাকা কে–পপ গ্রুপ এনহাইপেনের স্টুডিও অ্যালবাম রোমান্স: আনটোল্ড ৩ লাখ ৬৩ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। তালিকায় থাকা বাকি কে–পপ গ্রুপগুলো হলো আটিজ, টুমরো অ্যান্ড টুগেদার ও টোয়াইস।

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্ট্রে কিডসের অ্যালবাম ‘এইট’

টিকে থাকার নেপথ্যে

কে–পপ সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ লিম হি-ইউন বলেন, ‘সব ধরনের গান যখন অনায়াসে অনলাইনে শোনা যায়, তখন ফিজিক্যাল অ্যালবাম কেনা যেন অস্বাভাবিক একটা কাজ।’ তাহলে শ্রোতারা কেন এখনো অ্যালবাম কিনছেন?তিনি জানান, কে–পপ তারকাদের সঙ্গে ভক্তদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, ফলে এখনো ভক্তদের মধ্যে তাঁদের অ্যালবামের আবেদন রয়েছে।

লিম হি-ইউনের ব্যাখ্যা, ‘কে–পপের ভক্তরা আলাদা। অনেক ভক্ত মনে করেন, প্রিয় শিল্পীর অ্যালবাম সংগ্রহ করা তাঁদের জন্য অপরিহার্য।’ কে–পপ কোম্পানিগুলোর কৌশলও এই সাফল্যে বড় ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, ‘কে–পপ অ্যালবামে ফটোবুক, ফটোকার্ড, ফ্যান ইভেন্টের টিকিটের মতো উপাদান যুক্ত করা হয়—ভক্তদের অ্যালবাম কেনার আগ্রহকে এগুলো আরও উসকে দেয়।’

তৃতীয় স্থানে থাকা কে–পপ গ্রুপ এনহাইপেনের স্টুডিও অ্যালবাম `রোমান্স: আনটোল্ড’

শীর্ষ গ্রুপ

গত পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় সব ধরনের অ্যালবাম বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে সেভেনটিন। গ্রুপটি এর মধ্যে এফএমএল, ফেস দ্য সানসহ বেশ কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। পাঁচ বছরে বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ মিলিয়নের মতো অ্যালবাম। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্ট্রে কিডসের ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। তৃতীয় স্থানে বিটিএস, চতুর্থ এনহাইপেন ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে টুমরো অ্যান্ড টুগেদার।

কে–পপের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই গ্রুপ বিটিএস ও ব্ল্যাকপিঙ্কের এমন হাল কেন? আসলে কয়েক বছর ধরে বিটিএস কার্যত গানে নেই, বিরতির মধ্যে নতুন কোনো অ্যালবাম আসেনি। ফলে তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে। ব্ল্যাকপিঙ্কও কয়েক বছর ধরে অ্যালবামে নেই। আর ব্ল্যাকপিঙ্কের সিডি অ্যালবামের তুলনায় স্ট্রিমিংয়েই উন্মাদনা বেশি।

বিটিএস

গত পাঁচ বছরে প্রায় ৫০ কোটি কে–পপ অ্যালবাম বিক্রি হয়েছে। ২০২১ সালে ছিল সাড়ে ৭ কোটির মতো , ধীরে ধীরে বিক্রি বেড়েছে। ২০২৪ সালে ১১ মাসে ১১ কোটি অ্যালবাম বিক্রিতে রেকর্ড হয়েছিল। এই বছরও অ্যালবাম বিক্রি ১০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

শীর্ষ অ্যালবাম

গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবামের মধ্যে সেভেনটিনের দুটি ও স্ট্রে কিডসের দুটি অ্যালবাম রয়েছে।

১. এফএমএল, সেভেনটিন (২০২৩)—৬২ লাখ কপি
২. ফাইভ স্টার, স্ট্রে কিডস (২০২৩)—৫৪ লাখ কপি
৩. সেভেনটিন্থ হেভেন, সেভেনটিন (২০২৩)—৫১ লাখ কপি
৪. প্রুফ, বিটিএস (২০২২)—৩৫ লাখ কপি
৫. কার্মা, স্ট্রে কিডস—৩৪ লাখ কপি

তথ্যসূত্র: দ্য কোরিয়া হেরাল্ড, লুমিনেট, সার্কেল চার্ট ও হান্টেও