Thank you for trying Sticky AMP!!

আমি আর তোরে কত দিন বাঁচামু, কাদেরের শেষ ডায়ালগ

আবদুল কাদের প্রায় ২৫ বছর ধরে ‘ইত্যাদি’র জনপ্রিয় পর্ব ‘মামা-ভাগনে’র ‘মামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন

সদ্য প্রয়াত অভিনেতা আবদুল কাদের প্রায় ২৫ বছর ধরে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র জনপ্রিয় পর্ব ‘মামা-ভাগনে’র ‘মামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বছরের পর বছর দর্শকদের কাছেও প্রিয় ছিল এই ‘মামা’ চরিত্রটি। প্রয়াত অভিনেতা আবদুল কাদের শেষ অভিনয় ‘ইত্যাদি’তেই। এটি প্রচারিত হয় গত ২৯ অক্টোবর।
‘ইত্যাদি’র নির্মাতা হানিফ সংকেত জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয়েছিল গত ২২ সেপ্টেম্বর। ফেসবুকে হানিফ সংকেত লিখেছেন, সেদিনও কাদের ভাই বেশ অসুস্থ ছিলেন। তারপরও ‘ইত্যাদি’র প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি অভিনয় করেছেন এবং এটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ অভিনয়। অনুষ্ঠানটির ধারণের সময়ই কাদের ভাইকে কিছুটা অসুস্থ ও মলিন দেখাচ্ছিল। আগের সেই উচ্ছ্বাস ছিল না। ধারণ শেষে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। দোয়া চাইলেন।

আবদুল কাদের প্রায় ২৫ বছর ধরে ‘ইত্যাদি’র জনপ্রিয় পর্ব ‘মামা-ভাগনে’র ‘মামা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন

‘ইত্যাদি’র বিনোদনের অপরিহার্য অংশ মামা–ভাগনের উপস্থিতি। মামা চরিত্রের অভিনেতা আবদুল কাদের ভাগনের বিভিন্ন দোষ ধরিয়ে দিতেন। সেসব দেখে দর্শক শিক্ষার পাশাপাশি আনন্দ পেতেন।

অনুষ্ঠানে আবদুল কাদেরে ভাগনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফজাল শরীফ। তিনিও জানান, শেষ ‘ইত্যাদি’তে তাঁর একটা ডায়ালগ ছিল। সেখানে তিনি মামাকে বলেন, ‘মামা, তুমি আমারে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম দুই নম্বরি কাজ থেকে বাঁচাইছ।’ তার উত্তরে মামা বলেছিলেন, ‘আমি আর তোরে কত দিন বাঁচামু...’—এ কথা অভিনেতা আফজাল শরীফ ভুলতে পারছেন না।

আফজাল শরীফ, হানিফ সংকেত ও আবদুল কাদের ইত্যাদির শুটিং দৃশ্যের আগে

এমনিতে দুই অভিনেতার পারিবারিক যোগাযোগ আছে। আফজাল শরীফ আর আবদুল কাদেরের সম্পর্ক শালা–দুলাভাইয়ের। তাঁকে খুব স্নেহ করতেন দুলাভাই আবদুল কাদের। সর্বশেষ শুটিংয়ে এই অভিনেতাকে কিছুটা বিমর্ষ, চিন্তিত ও শুকিয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখেছিলেন। সে সময় আবদুল কাদের তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি সব টেস্ট করিয়েছেন, কিছুই ধরা পড়েনি। আফজাল শরীফ বলেন, ‘কাদের ভাই যে চেন্নাই গিয়েছিলেন, সেটা আমি পরে জেনেছি। শুনেই মন খারাপ হয়েছিল। পরে চেন্নাই থেকে ঢাকা ফেরার সময় চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ভাই আমাকে ফোন দেন। তখন হাউমাউ করে কাঁদছিলেন কাদের ভাই। বলছিলেন, “দোয়া কইরো, আফজাল। সবার সঙ্গে যেন দেখা করে মরতে করতে পারি।” তার কান্না শুনেই আমার মনটা ভেঙে গিয়েছিল।’

ঢাকায় ফেরার পরেই আবদুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন আফজাল শরীফ। কিন্তু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া এই অভিনেতার শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরে সেই ইচ্ছাটা আর পূরণ হয়নি। তিনি আশা করেছিলেন ‘ইত্যাদি’র মামার সঙ্গে শেষ দেখা করবেন। কিন্তু তা আর হলো না। আফজাল জানালেন, কদিন আগেই তিনি ‘বহুব্রীহি’র মামাকে হারিয়েছেন। তারপর হারালেন ‘ইত্যাদি’র মামাকে। দুই মামাকে হারিয়ে অসহায় বোধ করছেন এই অভিনেতা। ‘মানুষ হিসেবে কাদের ভাইয়ের তুলনা হয় না। দুই দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক। অথচ কখনো তাঁর কাছ থেকে বাজে কোনো কথা, ব্যবহার বা অন্যের সমালোচনা শুনিনি। আফসোস আমার যে “ইত্যাদি”র মামার সঙ্গে শেষ দেখা হলো না। এটাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।’

অভিনেতা আবদুল কাদের

গত শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন অভিনেতা আবদুল কাদের। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। ওই দিন রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মরদেহে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সেখান থেকে বিকেলে বনানীতে দাফন করা হয় বর্ষীয়ান অভিনেতা আবদুল কাদেরকে।