রোববার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ শীর্ষক কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়
রোববার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ শীর্ষক কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ শীর্ষক কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দৃশ্যমাধ্যম সমাজ। আগামী ২ আগস্ট রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এই কর্মসূচি রয়েছে।

রোববার সকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। গত বছর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ১ আগস্ট ফার্মগেটে বিক্ষোভ সমাবেশে ব্যানার হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন দৃশ্যমাধ্যম সমাজের শিল্পীরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নির্মাতা আকরাম খান, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, জাহিন ফারুক আমিন, অভিনেত্রী ফারিহা শামস সেওতিসহ অনেকে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচিত হয়েছিল—যেখানে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ নতুন পথ দেখিয়েছিল গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের অভিযাত্রায়। সেই ঐতিহাসিক জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা এক বিশেষ কর্মসূচি আয়োজন করতে যাচ্ছি। যেখানে দৃশ্যমাধ্যম সমাজের সচেতন, সৃজনশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল সদস্যরা অংশগ্রহণ করবেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখতে “কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ” শিরোনামে দৃশ্যমাধ্যম সমাজের সাংস্কৃতিক সম্মিলনের ঘোষণা করা হচ্ছে।’

বক্তব্য রাখছেন সামিনা লুৎফা

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক ও থিয়েটারকর্মী সামিনা লুৎফা বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীদের পক্ষ থেকে ১৯ জুলাই যখন সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিলাম, তখনো ইন্টারনেট ছিল। কর্মসূচির আগের দিন ইন্টারনেট চলে যায়। আদৌ কর্মসূচিতে লোকজন হবে কি না, তা নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত ছিলাম। আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, সেদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে অন্তত দুই শ থেকে তিন শ মানুষ দাঁড়ালেন। বাধা উপেক্ষা করেই এক ঘণ্টার মতো অবস্থান নিয়েছিলাম। হামলা হয়েছে, মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরই থিয়েটারকর্মীরা পরিবেশনা করেছেন।’

সামিনা লুৎফার ভাষ্য, ‘গত এক বছরে এসে যদি আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বাস্তবতা মেলাতে যাই, তাহলে অনেক কিছুই মিলবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা যে আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নটা পেয়েছিলাম, সেই আকাঙ্ক্ষা তৈরির দায়িত্ব কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা সরকার নেবে না। নাগরিক হিসেবে ওই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য আমাদেরই কাজ করতে হবে। সরকারে যে–ই থাকুক, তাঁকে প্রেশারের (চাপ) মধ্যে রাখতে হবে। যেন কখনোই স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় যেতে না পারে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে হয়ে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ছিলাম। যে যেই ব্যানারেই দাঁড়াক না কেন, সবাই দাঁড়িয়েছিলাম, তখন অন্যায়, গণহত্যা, গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছিল; সেটা দেখে দেখে বাসায় বসে থাকার মতো অবস্থা কারোরই ছিল না। আমরা সেই তাড়না থেকেই আমরা একসঙ্গে হয়েছিলাম।’ বাঁধন বলেন, ‘এটা সত্যি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছে। বর্তমানে আমাদের যে সার্বিক পরিস্থিতি, সেটাও আসলে খুব বেশি আশাব্যঞ্জক কিছু না। আশপাশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা নিয়ে আমি হতাশ। তারপরও আমি আশাবাদী একজন মানুষ। আমি একটা ভিন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। সেই বাংলাদেশ হওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে এবং সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

বক্তব্য রাখছেন আজমেরী হক বাঁধন

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘কইলজ্যা কাঁপানো ৩৬ দিন: জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও সাংস্কৃতিক নির্মাণ’ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য হলো—১. জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে পটভূমি, প্রেক্ষাপট ও ফলাফলকে স্মরণ এবং বিশ্লেষণ করা। ২. জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের দৃশ্যমাধ্যম সমাজের ভূমিকা তুলে ধরা ও দৃশ্যমাধ্যম সমাজকর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা। ৩. ভবিষ্যতের জন্য সাংস্কৃতিক সংগ্রামের রূপরেখা তুলে ধরা।
দৃশ্যমাধ্যম সমাজকর্মীদের এই সম্মিলনে থাকবে শহীদি মিছিল, লাইফ গ্রাফিতি, আলোচনা সভা, থিয়েটার পারফরম্যান্স, গান, কবিতা, ফ্যাসিবাদবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসব, গণ–অভ্যুত্থানের ছবি, পোস্টার ও মিম প্রদর্শনী।

সংবাদ সম্মেলনে নির্মাতা আকরাম খান, সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকলি ইসলাম, নির্মাতা তানিম নূর, তানহা জাফরীন, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, জাহিন ফারুক আমিন, ধ্রুব হাসান, প্রযোজক মুশফিকুর রহমান, অভিনেত্রী ফারিহা শামস সেওতি, আনান সিদ্দিকা, মডেল আসাদুজ্জামান আসাদসহ অনেকে বক্তব্য দেন।

আয়োজনটি উপস্থাপনা করেছেন আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার।