Thank you for trying Sticky AMP!!

বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চরকির নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ নাইট’-এর আয়োজন করা হয়

বুসানে স্মরণীয় ‘চরকি বাংলাদেশ নাইট’

বুসানে এমন আয়োজন এবারই প্রথম। বলা যায়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য গতকাল সোমবার ছিল এক ঐতিহাসিক রাত, যা স্মরণীয় হয়ে থাকবে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টদের কাছে। গতকাল বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চরকির নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ নাইট’-এর আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই সাফল্য উদ্‌যাপনের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক ন্যাম ডং চুল। ছিলেন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রোগ্রামার, আন্তর্জাতিক নির্মাতা, প্রযোজক, ফিল্ম ক্রিটিক, বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকসহ অনেকে।
প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নানা দেশ নিজেদের চলচ্চিত্রের সাফল্য উদ্‌যাপন করার জন্য এ রকম আয়োজন করে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে চলছে এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের ২৮তম আসর। সেই বুসানে বাংলাদেশ সময় ৯ অক্টোবর রাত ৮টায় বুসানের লাভি ডি অ্যাটলান হোটেলের গ্যাটসবি রুফটপে বসেছিল এই মিলনমেলা।
এ কথা হয়তো সবারই জানা হয়ে গেছে, এই প্রথমবার বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একই আসরের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তিনটি চলচ্চিত্রের স্থান পেয়েছে। ‘কিম জিসোক’ প্রতিযোগিতা বিভাগ আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত চরকি অরিজিনাল সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ বা ‘অটোবায়োগ্রাফি’।

নিউ কারেন্টস বিভাগে স্থান পেয়েছে ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’ ও বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’। এ ছাড়া এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে আছে বাংলাদেশের একটি চিত্রনাট্য। সব মিলিয়ে বুসান এবার দুহাত ভরে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এই সাফল্য উদ্‌যাপনের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক ন্যাম ডং চুল

চরকি বাংলাদেশ নাইটের শুরু হয় চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনির স্বাগত বক্তব্য দিয়ে। ‘বাংলাদেশ নাইট’ সঞ্চালনা করেন তিনিই। উপস্থাপনায় তাঁকে সঙ্গ দেন ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র চিত্রনাট্যকার ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পর্দায় দেখানো হয় একটি ভিডিও চিত্র, যেখানে ছিল কান, টরন্টো, বুসান, রটারড্যামসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত বাংলাদেশি ছবির ইতিহাস। এর মধ্যে ছিল তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, গোলাম রব্বানী বিপ্লবের ‘স্বপ্নডানায়’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ও ‘টেলিভিশন’, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এবং নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’ ও ‘পেট কাটা ষ’।

ছিল ২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জিসোক বিভাগে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ এবং নিউ কারেন্টস বিভাগে নির্বাচিত ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’ ও বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’ ছবির কথা

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ছবির প্রতিনিধিত্ব করা রুবাইয়াত হোসেন, কামার আহমাদ সাইমন, আবু শাহেদ ইমন, বিজন ইমতিয়াজ ও আরিফুর রহমানের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরা হয়।

ভিডিও চিত্রের শেষ অংশে ছিল ২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জিসোক বিভাগে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ এবং নিউ কারেন্টস বিভাগে নির্বাচিত ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’ ও বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’ ছবির কথা। আর ছিল বাংলা সিনেমার যাত্রায় চরকি নিজেকে যেভাবে অংশী করে তুলেছে, তার কিছু বর্ণনা।

অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও অভিনেতা নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি

ভিডিও চিত্রের পর বক্তব্য দেন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক ন্যাম ডং চুল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য রাতটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বুসানে এবারের আসরে বাংলাদেশের তিনটি ছবি দুই প্রতিযোগিতায় ও একটি স্ক্রিপ্ট আছে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালকদের অভিনন্দন জানাই। ছবিগুলো সত্যিই দারুণ! দর্শকদেরও এই তিনটি চলচ্চিত্র দেখে ভালো লেগেছে। বাংলাদেশের সিনেমার গত ১০ থেকে ১২ বছরে জার্নি দেখে আমরা খুবই আনন্দিত।’
ন্যাম ডং চুলের বক্তব্য শেষে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ইকবাল হোসাইন চৌধুরী ও বিপ্লব সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মঞ্চে। তাঁদের কথা বলা শেষে বাংলাদেশের সব পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী ‘বাংলাদেশ নাইট’কে স্মরণীয় করে রাখতে এক ফ্রেমে বন্দী হন।

ছবি তোলা শেষে উপস্থিত অতিথিরা নিজেদের মতো করে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন। বাংলাদেশ থেকে আসা অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতাদের সঙ্গে পরিচিত হন সবাই।
‘বাংলাদেশ নাইট’-এ বিভিন্ন দেশের অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রোগ্রামার পার্ক সুন ইয়াং, ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির সহপ্রযোজক জেরেমি চুয়া, ভ্যারাইটির এশিয়া ব্যুরো চিফ পেট্রিক ফেটার, ভ্যারাইটির আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি নমন রামাচন্দ্রন, সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর নাশেন মুডলি, ফ্রিবুক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর থিওরি জবিন, ভেসুল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ডিরেক্টর মার্টিন থিওরানে ও জানে মার্ক থিওরানে, টোকিও ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সিনিয়র প্রোগ্রামার কেন জি। এ ছাড়া ছিলেন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ সাউথ এশিয়ান দেশগুলোর পরিচালক, প্রযোজকসহ আরও অনেকে।

চরকি বাংলাদেশ নাইটের শুরু হয় চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনির স্বাগত বক্তব্য দিয়ে

এ আয়োজনে বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন ‘বলী’র পরিচালকের পাশাপাশি প্রযোজক পিপলু আর খান, নাসির উদ্দিন খান, ‘আগন্তুক’-এর অভিনেত্রী সাহানা রহমান সুমি, শিশুশিল্পী সালমান রহমান রাফসান ও প্রযোজক তাজুল হক, এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে স্থান পাওয়া ‘সুরাইয়া’র পরিচালক রবিউল আলম রবি, লেখক শিবব্রত বর্মণ, প্রযোজক ফজলে হাসান শিশির এবং বুসান এশিয়ান ফিল্ম একাডেমির ফেলো হিসেবে আসা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’র চিত্রগ্রাহক এজাজ মেহেদি।