অফিস

অফিসে গাছ

ছায়াবান্ধব ও কম পরিচর্যাতেই বাঁচে এমন গাছগুলো রাখতে পারেন অফিসে। ছবি: নকশা
ছায়াবান্ধব ও কম পরিচর্যাতেই বাঁচে এমন গাছগুলো রাখতে পারেন অফিসে। ছবি: নকশা

অফিসের কম্পিউটারে একটানা তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথা ধরে গেছে? চোখ সরালেই এক টুকরা সবুজ। মনিটরের পাশেই রাখা ছোট্ট একটা গাছ। অফিসের অন্দরসাজে গাছ রাখার চল এখন বেশ। তবে যেকোনো গাছই অফিসে রাখা যায় না। এর যত্নআত্তিও কিছুটা ভিন্ন। বেশির ভাগ অফিসই শীতাতপনিয়ন্ত্রিত থাকে। প্রাকৃতিক আলো-হাওয়াও প্রবেশ করে না তেমন। এ রকম পরিবেশ কোনো গাছ উপযোগী হবে আর সেসবের যত্ন কীভাবে নেবেন, তা জেনে নিন। এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আহসান রনি।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত গ্রিন সেভারস নার্সারির প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
অফিসে কোন গাছ
আকারে ছোট, কিছুটা লতানো আর দেখতে বাহারি—এ রকম গাছগুলোই সাধারণত অফিসে রাখা হয়। এ ধরনের কিছু গাছ হলো হার্টলিফ ফিলোডেনড্রন, পিস লিলি, লাকি ব্যাম্বু, অ্যারেকা পাম, পেপেরোমিয়া, অ্যান্থুরিয়াম ইত্যাদি। এ ছাড়া নানা রকম ক্যাকটাসও রাখা হয়। বনসাইও এখন বেশ জনপ্রিয়।
হার্টলিফ ফিলোডেনড্রন লিকলিকে লতা, লম্বায় ৪ ফুট বা তার বেশিও হয়। অত্যধিক অন্ধকার সহ্য করার ক্ষমতা এর আছে। শুধু টবের মাটিতেই নয়, বোতলের পানিতেও দিব্যি টিকে থাকে দিনের পর দিন। চার-পাঁচ দিন অন্তর বোতলের পানি বদলে দিলেই হলো। অতিরিক্ত লম্বা লতা ও মরা পাতা ছেঁটে ফেলতে হয়।
গায়ে কাঁটা থাকলেও ক্যাকটাসের আছে চোখজুড়ানো সৌন্দর্য। গ্রীষ্মে আবার ফুলও ফোটে। দীর্ঘদিন অফিস ছুটিতে থাকলেও এতে পানি দেওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটি খরা সইতে পারে।

পিস লিলিতে ফুলও ফোটে। গ্রীষ্মের শুরুতে ফুল ফোটে এবং এক সপ্তাহ থাকে। ফুল বিবর্ণ হয়ে এলে বৃন্তসহ ফুল কেটে ফেলতে হয়। যদি ফুল না ফোটে, তবে কিছুটা উজ্জ্বল আলোতে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সরাসরি সূর্যালোকে নয়। পাতা চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। গাছটি কিছুটা বিষাক্ত, তাই ফুল বা পাতা ছাঁটাইয়ের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
অনেকের ধারণা, লাকি ব্যাম্বু সৌভাগ্য আনে, তাই এমন নাম। এর জন্য মাটি খোঁজার প্রয়োজন নেই। পানিভর্তি পাত্র বা বোতল হলেই হলো। এবার পাত্রে বা বোতলে গাছটা দাঁড় করিয়ে রাখতে পানিতে নুড়িপাথর ঢালুন। নুড়িপাথর পাবেন অ্যাকুরিয়াম বিক্রির দোকানে, কেজিপ্রতি ২০ টাকা। নতুন চারা দরকার? মাতৃ গাছের বাড়তি কাণ্ড কেটে পানিতে রাখুন। সপ্তাহ না যেতেই শিকড় গজাবে তাতে।
ডেস্ক, টেবিল, স্তম্ভের পাশে ও সিঁড়ির গোড়ায় দারুণ মানায় অ্যারেকা পাম। আকারে প্রায় সাত ফুট লম্বা হয়, তবে গাছের আকার ছোট রাখতে চাইলে শুধু টবের আকারটা ছোট হলেই চলবে। সপ্তাহে একবার পানি দিলেই যথেষ্ট।
পেপেরোমিয়ার পাতা বেশ উজ্জ্বল। পাতার বেগুনি, সবুজ, লাল রঙের কিনারা, তরমুজের মতো ডোরাকাটা দাগ আর ঢেউখেলানো আকার দেখতে ভালো লাগে।
সাদা, লাল, কমলা, গোলাপি বা বেগুনি রঙের ফুল উপহার দেবে অ্যান্থুরিয়াম। অতি শুষ্ক বা অতি আর্দ্র কোনোটাই এর পছন্দ নয়—চাই এ দুয়ের মাঝামাঝি।
এ ছাড়া আছে নানা ধরনের অর্কিড, স্পাইডার প্ল্যান্ট, ফাইকাস, ড্রাসিনা, রেড পাম, ইংলিশ আইভিসহ নানাবিধ পাতাবাহার উদ্ভিদ। পাবেন যেকোনো নার্সারিতে।

যত্ন
* সরাসরি সূর্যালোক সহ্য করতে পারে না বলেই এরা ছায়াবান্ধব উদ্ভিদ। তবে ৭-১০ দিন পরপর চার-পাঁচ ঘণ্টার জন্য রোদে দেওয়া উচিত।
* গাছে পানি দেওয়ার বেলায় সতর্ক থাকতে হবে। একে তো সূর্যালোক নেই, আবার গাছ তার নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি পানি শোষণ করতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত পানিতে শিকড়ে পচন ধরে ও গাছটি মারা যায়।
* টবের তলায় প্রথমে কিছু ইটের খোয়া, নারকেলের ছোবড়া, তুলা বা সুতি কাপড় দিয়ে নেওয়া ভালো।
* টবের মাটির সঙ্গে কাঠের গুঁড়া ও বালির মিশ্রণ দেওয়া যায়।
* টবের ভেতরে-বাইরে রং করা ভালো। তাতে দেখতে উজ্জ্বল লাগবে, আবার পানির ছোঁয়ায় টবের গায়ে ছত্রাক ও শৈবাল জন্মাতে পারবে না।
* টবের নিচে টবের চেয়ে বড় ব্যাসার্ধের একটি ট্রে রাখুন, তাতে ডেস্ক অপরিষ্কার হবে না।
* পোকামাকড়ের আক্রমণ ঠেকাতে টবের ওপর অংশের মাটির সঙ্গে কীটনাশক পাউডার মিশিয়ে দিতে পারেন।
* বোতলের পানি তিন-চার দিন পরপর বদলে দিলেই হলো, সার না হলেও চলে।
* ধুলো-বালু পড়ে পাতা মলিন দেখাতে পারে। পাতায় পানি স্প্রে করুন, টিস্যু বা সুতি কাপড়ে নারিকেল তেল নিয়ে পাতা মুছে চকচকে আকর্ষণীয় ভাব ফিরিয়ে আনুন।
* মরা পাতা ও অতিরিক্ত ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।
* অফিস টানা কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও ছায়াবান্ধব গাছের কোনো সমস্যা হয় না। অফিস বন্ধ ও খোলার দিন গাছের গোড়ায় পরিমিত পানি দিলেই হলো।