তারুণ্য

তারুণ্যের রং

তারুণ্য মানেই তো কত রং। মডেল: স্পৃহা ও রনি। ছবি: অধুনা
তারুণ্য মানেই তো কত রং। মডেল:  স্পৃহা ও রনি। ছবি: অধুনা

আনন্দ, সুখ, দুঃখ, ভালোবাসা, ঘৃণা অতি সহজেই প্রকাশ করা যায় রঙের মাধ্যমে। এই রং দিয়েই চিনে নেওয়া যায় মানুষকে। কার প্রিয় রং কোনটি, তা জানিয়ে দেয় ব্যক্তির পরিচয়। তরুণদের মধ্যে যাঁরা গোলাপি পছন্দ করেন, তাঁরা রোমান্টিক ও উদার মনের। যাঁরা সাদা রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন তাঁরা মূলত সরল স্বভাবের হয়ে থাকেন। তাঁরা এক দিক থেকে যেমন অনেক বেশি সুশৃঙ্খল তেমনি আরেক দিক থেকে অনেক খুঁতখুঁতে। যাঁরা কালো কাপড় পছন্দ করে তাঁরা অনেক বেশি মুডি হন। তাঁরা বাস্তবধর্মীও বটে। তরুণদের মন, তরুণদের অভ্যাস নিয়ে করা বিভিন্ন গবেষণা এবং পরিসংখ্যানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
ছবি আঁকার ক্ষেত্রে রঙের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তরুণদের মধ্যে রঙের প্রভাবও অনেক। তরুণেরা রং বিষয়ে সচেতনও বলতে হবে। ভালোবাসার দিনে তাঁরা যেমন লাল রঙের পোশাক পরেন তেমনি শোকের দিনে পরেন কালো পোশাক। বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র রাসেল রহমান। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শারমীন জামান আবার বললেন উল্টো কথা। তাঁর মতে, বর্তমান সময়ের তরুণেরা চারপাশে যা দেখেন তাঁরা সেই রঙের কাপড় পরেন। রঙের ক্ষেত্রে তাঁদের সচেতনতা কম। অভ্যাসের ফলেই বর্তমান তরুণেরা নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট রংকে পছন্দ করছেন। তবে যেভাবেই হোক রঙের প্রভাব তিনি সবার মধ্যে দেখতে পান। পছন্দের রং দেখে মানুষ চেনা যায় কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিকা তাবাসসুম। আনিকা মনে করেন, রং দেখে হয়তো মানুষের দু-একটা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা যেতে পারে কিন্তু তাঁদের চেনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। পোশাকের ক্ষেত্রে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি খেয়াল করেছি এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণেরা ফরমাল জায়গায় হালকা রঙের কাপড় পরে আর কোনো অনুষ্ঠানে গেলে একটু চকমকে ধরনের কাপড় পরার চেষ্টা করে। রং সম্পর্কে সবার মধ্যে সচেতনতা লক্ষ করেছেন আনিকাও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবাইয়াত ইসলামের প্রিয় গাঢ় রং। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রায়হান বাশারের প্রিয় লাল রং। এই রং দেখলেই তাঁর মন ভালো হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে ব্যক্তি লাল পছন্দ করেন তিনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী। নতুন কিছু করার ক্ষুধা থাকে তাঁর, জীবনটাকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ করতে চান। তবে অনেক সময় তিনি আগ্রাসী, আবেগপ্রবণ এবং খুব দ্রুত নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে দিতে পারেন। সেই ব্যক্তির কাছে জীবন মানেই সুখ, আর যখন তিনি সুখ পান না তখন বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আর যাঁদের কমলা রং পছন্দ তাঁরা ভদ্র স্বভাবের, সবার পছন্দনীয়, সামাজিক হন। কম কথায় এবং সরল হাসিতে তাঁরা যে কাউকে বন্ধু বানিয়ে নিতে পারেন। এই রং পছন্দকারী মানুষেরা তাঁদের পেশাগত জীবনে অনেক ভালো করেন। কারণ তাঁরা গ্রুপে অনেকজনের সঙ্গে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারেন। আর যাঁরা হলুদ পছন্দ করেন তাঁদের জীবনের কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকে এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করে তাঁরা জীবনে আত্মতৃপ্তি পেতে চান। যেকোনো কাজে নির্লিপ্ত হলেও তাঁরা লাজুক নন। ফলে যে কাজটি তাঁরা আসলেই করতে চান ঠিকমতো করে ফেলতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের উপপরিচালক মো. আশরাফুজ্জামানজানান, বাংলাদেশের তারুণ্যের উজ্জ্বল রঙের প্রতি ঝোঁক দেখা যায়। বিভিন্ন উৎসবে দেখা যায় রঙের ছড়াছড়ি। তবে এখন অনেক তরুণ এক রঙের জিনিস পছন্দ করেন। একই জিনিসে অনেক রঙের আধিক্য অনেক সময় তাঁরা পছন্দ করেন না।

যাঁরা সবুজ পছন্দ করেন তাঁরা নিজের পথে লেগে থাকতে পারেন, তাঁরা অধ্যবসায়ী, বিচক্ষণ ও কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এঁরা স্বাধীনতা পছন্দ করেন কিন্তু নিজেদের পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব নিয়ে নানা সামাজিকতায় আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করেন। যাঁরা নীল পছন্দ করেন তাঁরা ঝামেলাবিহীন জীবন চান। কালো পছন্দকারী ব্যক্তিরা মানসিক দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হন, গম্ভীরতা তাঁদের একান্ত বৈশিষ্ট্য।

একটু খোলামেলা, একটু বেশি সাহসী, উদার, বাচাল, অন্যদের থেকে একটু চটপটে হয়ে থাকেন তাঁরাই, যাঁদের পছন্দ হালকা রং। অন্যদিকে যাঁরা একটু গাঢ় রং পছন্দ করেন তাঁরা হন শান্তশিষ্ট এবং কম কথার মানুষ। তাঁরা ‘কথা কম কাজ বেশি’ মন্ত্রে বিশ্বাসী। তাঁরা অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টা চালাতে পারেন যা তাঁদের সফলতা এনে দেয়।