চলতি রস

তাহাদের ঈদ শপিং

বাংলা সাহিত্যের কিছু পরিচিত চরিত্র ঈদ শপিংয়ে গেলে কেমন হতো? কল্পনায় তাদের অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছেন মাহবুব আলম, এঁকেছেন নাইমুর রহমান

চরিত্র: মকবুল বুড়ো
উপন্যাস: হাজার বছর ধরে
লেখক: জহির রায়হান
এমনিতেই ট্যাকাটুকা নাই, তার উপর আবার ঈদের শপিংয়ের মামলা আইসা পড়ল ঘাড়ে! আবুইল্যার বউ ১০ হাজার টাকা দামের শাড়ি চাইছে দেইখা সে ভয়ে দুই দিন বাড়িতে আসে নাই। আমার তো আবার তিনটা বউ! কে জানে, ঈদের শপিং মামলায় আমারে না জানি কয় দিনের জন্য দেশান্তরি হইতে হয়! ছোটটারে একটা শাড়ি দিতে মন চায় কিন্তু পরক্ষণেই বড় দুজনের চোখ রাঙানি মনে ভাসে! বহুবিবাহ যে আমারে বহুদিন ঘরের বাইরে রাখব, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

চরিত্র: গফুর
গল্প: মহেশ
লেখক: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঈদ আসিতেছে। আর মোবাইল ফোনে আসিতেছে হাজারো মেসেজ। অধিকাংশই আবার ঈদকেন্দ্রিক। সেই মেসেজের ভিড়ে একটিতে চোখ আটকাইয়া গেল। এইটাতে লেখা, ‘একখানা শাড়ি কিনিলে ১০ পার্সেন্ট ক্যাশব্যাক!’ মা মরা আমিনাকে বলিতে গেলে কিছুই দেই না। তাই ওকে চমকাইয়া দেওয়ার জন্য একখানা শাড়ি আনিয়া দিতেই চেঁচাইয়া পাড়া মাথায় তুলিল সে! বলিল, ‘বাবা, বাহুবলী-২ জামা না কিনিয়া তুমি শাড়ি কিনিয়াছ? তুই দেখি সেই খ্যাতই রহিয়া গেলে!’

চরিত্র: হোসেন মিয়া
উপন্যাস: পদ্মা নদীর মাঝি
লেখক: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঈদের শপিং নিয়া আর কী বলব, বলেন! শপিং বেশ ভালোই চলতেছে, তবে আমার না, কাস্টমারদের। ময়নাদ্বীপে আমি আবার একটা শপিং মল দিছি। নাম হইল-দ্য আইল্যান্ড শপিং মল। আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালোই চলতেছে। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানি, ওয়েস্টার্ন ড্রেসের ব্যাপক চাহিদা! সাপ্লাই দিয়া কুলাইতে পারতেছি না। সেদিন আবার দেখলাম, কুবেরও আসছে, সঙ্গে কপিলা। আমারে দেইখা দৌড়াইয়া লিফট ধইরা উপরে উইঠা গেল।

চরিত্র: ফটিক
গল্প: ছুটি
লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাটাপ্পা ড্রেসখানা টু গুড! ট্রেন্ডি এই ড্রেসখানা না হইলে বন্ধুদের সহিত ‘চিল’ করিতে যাইব কী করিয়া? মাকে অনেক অনুনয় করিয়া সেদিন মার্কেটে গেলাম। পছন্দ করিয়া কাটাপ্পা ড্রেসখানা কিনিয়াও ফেলিলাম। কিন্তু বাড়িতে আসিয়াই বাধিল গন্ডগোল। আমার ড্রেসখানা না পাইলে মাখন নাকি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টই হ্যাক করিবে! এই সব দুষ্কর্মে সে আবার সিদ্ধহস্ত। বিধায় সাধের ড্রেসখানা বিসর্জন দিতে হইল। পাঁচটি নয় দশটি নয় বদের হাড্ডি হইলে একটি ভাইই যথেষ্ট!

চরিত্র: হিমু
উপন্যাস: হিমু সিরিজ
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
সেদিন একটা ফ্যাশন হাউসে গিয়ে রূপা বলল, ‘পাঞ্জাবি পছন্দ করো।’ বলা বাহুল্য, একটাও পছন্দ হলো না। সব কটা পাঞ্জাবিরই পকেট আছে। সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘পকেট ছাড়া পাঞ্জাবি হবে?’ সে ‘হবে’ বলে মেয়েদের একটা জামা এনে দিল। কত বড় বেয়াদব! ওখান থেকে চলে এলাম। রূপা নিয়ে গেল জুতার দোকানে। বলল, ‘এক জোড়া জুতা অন্তত নাও।’ আমি বললাম, ‘তাহলে আগে একটা গরু কিনে দাও। তারপর তুমি ওটাকে মেরে জুতা দান কোরো!’ আমার বুদ্ধি শুনে রূপা গটগট করে হেঁটে চলে গেল। এই তো আমার ঈদ শপিং।

চরিত্র: নন্দলাল
কবিতা: নন্দলাল
লেখক: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ঈদ উপলক্ষে প্রচুর শপিং করিব ভাবিয়াছিলাম; কিন্তু কিছুই কেনা হয় নাই। এমনিতে সবাই বলাবলি করিতেছে, জিনিসপত্রের অনেক দাম, বাজারে নাকি আগুন লাগিয়া গিয়াছে! তাই ভাবিলাম, কী দরকার আর কেনাকাটা করিতে গিয়া আগুনের মধ্যে পড়িবার! দেখি, ঘরে বসিয়া অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করিতে পারি কি না। ইহার ফলে অন্তত আগুনে মরিবার কোনো আশঙ্কা আর থাকিতেছে না। আমি বাঁচিয়া না থাকিলে এই দেশের কী হইবে, একটিবার ভাবুন তো!