
দূরশিক্ষণের ভাবনা দৃশ্যমান হয় ১৭২৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন গ্যাজেট পত্রিকায় ছাপা হওয়া একটি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, প্রতি সপ্তাহে চিঠির মাধ্যমে ‘শর্টহ্যান্ড’ শেখানো হবে।
তত দিনে ডাক বিভাগ গড়ে উঠেছে। ব্রিটেনে স্যার আইজ্যাক পিটম্যান চিঠি ব্যবহার করে তাঁর বিখ্যাত শর্টহ্যান্ড পদ্ধতি শেখাতে শুরু করেন। পিটম্যানের শর্টহ্যান্ড পদ্ধতি এখনো প্রচলিত।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ‘এক্সটার্নাল প্রোগ্রাম’–এর মাধ্যমে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে ডিগ্রি দেওয়া শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরশিক্ষণকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়। সে সময় তারা কোর্সের বিষয়বস্তু ও লেকচার ফোনোগ্রাফে রেকর্ড করে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দিত।
১৯২২
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি রেডিওতে ক্লাস সম্প্রচার শুরু করে। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে স্বল্প সময়ে এবং আরও কার্যকরভাবে কোর্সের পড়ালেখাগুলো পৌঁছে যায়।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা দেশব্যাপী দূরশিক্ষণ প্রকল্প চালু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসন পুরো রাজ্যে টেলিফোনভিত্তিক পড়ালেখা চালু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ‘স্ট্যানফোর্ড ইনস্ট্রাকশনাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক’ স্থাপন করে। এর মাধ্যমে টেলিভিশনে প্রকৌশলের খণ্ডকালীন শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া হতো।
যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন ওপেন ইউনিভার্সিটি (উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন। বলা হয়, এটিই প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে শুধু দূরশিক্ষণই চালু ছিল। রেডিও ও টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো।
অস্ট্রিয়ার লেখক ইভান ইলিচের লেখা ডিস্কুলিং সোসাইটি নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। যেখানে তিনি ওয়েবের মাধ্যমে পড়ালেখার ধারণা তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড লার্নিং সেন্টার (সিএলএলসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের পাঠদান করা হতো।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী ই-শিক্ষা ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২ হাজার ডলারের বাজার তৈরি হবে।
কোভিড–১৯–এর কারণে সারা বিশ্বে প্রায় ১২৭ কোটি শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে যেতে পারছে না। এর একটা বড় অংশই অনলাইন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত মে মাসে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জনপ্রিয় অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম কোর্সেরায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭০ হাজার।
যাত্রা শুরু করে অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম—খান একাডেমি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষাবিদ সালমান খানের প্রতিষ্ঠিত খান একাডেমিতে মানসম্পন্ন শিক্ষা পাওয়া যায় স্বল্প খরচে, তাই অনলাইন শিক্ষা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
ওপেনকোর্সওয়্যার নামে একটি প্রকল্প চালু করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, যেখানে বিনা মূল্যে বিভিন্ন কোর্স ম্যাটেরিয়াল (বিষয়বস্তু) পাওয়া যায়।
ব্ল্যাকবোর্ড, ইকলেজসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যারের যাত্রা শুরু হয়, যারা পড়ালেখার ধারণা বদলে দিতে থাকে।
অধ্যাপক মাইকেল গেগ ও আর্নল্ড পাইজার ওয়েবওয়ার্ক নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, যার মাধ্যমে গণিত ও বিজ্ঞানবিষয়ক বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) দেওয়া-নেওয়া সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের সিএএলসি রূপান্তরিত হয় ক্যালক্যাম্পাস নামে। তারা প্রথম একটি পরিপূর্ণ অনলাইন পাঠ্যক্রম চালু করে, যেখানে অনলাইনে তাৎক্ষণিক পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের মতামত জানার সুযোগ ছিল।
বিআইডিইর সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)। সেই থেকে বাউবি রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে পাঠদান করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্য ইউনিভার্সিটি অব ফোয়েনিক্স পুরোদমে একটি অনলাইন কলেজ প্রোগ্রাম চালু করে, যার মাধ্যমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হতো।
সালটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরই প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিসট্যান্স এডুকেশন (বিআইডিই)। অডিও-ভিজ্যুয়াল বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) তৈরি করা ছাড়াও এ প্রকল্পের অধীনে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষায় স্নাতক (বিএড) করার সুযোগ ছিল।
গ্রন্থনা: মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: ইলার্নিংইন্ডাস্ট্রি ডট কম, অনলাইনস্কুলস ডট ওআরজি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম