
শনিবার দিন মেয়েটা আড়ংয়ে আসবে। বিকেলে। আমি বলেছিলাম গোধূলি বেলায়। তা–ই হলো। তুবা তাতেই রাজি হলো। শুধু বলার চেষ্টা করছিল ফিরতে রাত হয়ে যাবে যে।
‘তাতে কী, আমি তোমাকে পৌঁছে দেব।’
আমি নির্দিষ্ট সময়ের ২০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেলাম। তুবাও এসে পৌঁছে গেছে।
আমাদের প্রথম দেখা হচ্ছে আজ। ছয় মাস আগে আমাদের ফেসবুকে পরিচয়। তার প্রোফাইল পিকচারে একটি চুড়িভরা হাতের ছবি। তাই তুবার চেহারা আমার জানা নেই। দেখা হয়নি তাকে।
নীল শাড়ি পরে এসেছে সে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। খুঁজছে আমাকেই। আমার গায়ে পলো টি-শার্ট ও জিনস। আমি তাকে এমনটাই বলেছিলাম।
দুজন দুজনের দিকে বার কয়েক তাকালাম। কেউ সাহস করে বলছি না, তুমি কি তুবা? অথবা তুমি কি আশিক?
এখানে বলে রাখা ভালো, আমি যেমনটি কল্পনা করেছিলাম তেমনটি তুবা নয়। কী করে কাট মারব, সেই বুদ্ধি আটছিলাম। সত্যি বলতে কি তুবাকে আমার পছন্দ হয়নি। কেমন একটা অপরাধ বোধও কাজ করছে। ছয় মাস পরে বলছি, তুবাকে আমার পছন্দ হয়নি!
এর মাঝে ২০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তুবা আমার দিকে এগিয়ে এল। ‘তুমি কি আশিক?’
‘সরি আপনি ভুল করছেন। আমি আশিক নই।’
আমার এ কথায় তুবার মুখটা শুকিয়ে গেল যেন। আমি তাড়াতাড়ি আড়ং থেকে বের হয়ে পড়লাম।
আসাদগেট থেকে হাঁটতে হাঁটতে কলাবাগানের বাসায় চলে এলাম। অপরাধ বোধটা আরও বেশি বেশি হচ্ছে। ফেসবুকে এমন সব কথা হতো আমরা পরস্পরকে ছাড়তে পারব না। আমাদের সম্পর্ক বিয়েতে গড়াবে।
তুবা বার কয়েক ফোন করল আমাকে। আমি তার ফোনও ধরলাম না। সন্ধ্যার দিকে এসএমএস পাঠাল তুবা। ‘তুমি অস্বীকার করলেও আমি তোমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছি। তুমি একটা মিথ্যুক। তুমি তোমার যা বর্ণনা দিয়েছিলে তার সবই মিথ্যা। তবুও ভদ্রতার খাতিরে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ছিঃ, তুমি এমনটা করতে পারলে? তোমার নাম জিজ্ঞেস করার পরপরই তুমি সিঁড়ির দিকে গেলে। ঠিক সেই সময়ই একটি ছেলে তোমাকে পেছন থেকে ডাকল আশিক আশিক বলে। তুমি ফিরেও তাকালে না। আমি তাতেই পরিষ্কার হলাম তুমি আশিক।’
এসএমএস পড়তে পড়তে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। নিজেকে কেমন ছোট মনে হচ্ছে। মেয়েটা আমাকে অপছন্দ করছে! এত বড় সাহস! আমার পৌরুষে আঘাত পেলাম।
আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করলাম। কিন্তু তুবার এসএমএসের কোনো উত্তর লিখতে পারলাম না।