দেশের প্রথম সারির মডেলদের একজন আজিম উদ্দৌলা। দেশে তো বটেই, যুক্তরাজ্য, ভারতের অনেক ফ্যাশন শো ও ফটোশুটে অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি কানে অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে পেয়েছেন পুরস্কার। তরুণদের অনেকেই অনুসরণ করেন আজিমের স্টাইল, আজিমের ফ্যাশন। ছেলেদের জন্য নিজেই গড়ে তুলেছেন এ জেড নামের ব্র্যান্ড। জানিয়েছেন তাঁর ফিটনেস, ডায়েট, ফ্যাশন, স্টাইলের কথা।
ফ্রান্সের কান থেকে আজিমের কাছে যখন ইন্টেগ্রিটি ম্যাগাজিনের একটি আয়োজনে যাওয়ার আমন্ত্রণ এল, তখন হাতে সময় ছিল না বেশি। করোনা পরিস্থিতির কারণে ভিসাসংক্রান্ত জটিলতায় কানযাত্রায় ইতি টানতে হয়। তবে সেই আয়োজনে ‘ইন্টারন্যাশনাল মডেল অ্যাওয়ার্ড’ জেতেন আজিম। আর পুরস্কার নেওয়ার জন্য নিজে যেতে না পারার আফসোসে পুড়েছেন।
বিখ্যাত ডিজাইনার গ্রেস মুনের একটি শোতে হাঁটার কথা ছিল কানে ইন্টেগ্রিটির সেই আয়োজনে। একাধিক পণ্যের ফটোশুটেও অংশ নেওয়ার কথাও ছিল, যেতে না পেরে তাই মনটা খারাপই ছিল। তবে ইন্টেগ্রিটি ম্যাগাজিনের জুলাই সংখ্যার প্রচ্ছদের জন্য নিজের ছবি তুলে পাঠিয়েছিলেন তাদের চাহিদামতো। প্রচ্ছদে আজিমের সেই ছবি ছাপাও হয়েছিল।
এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশের ফ্যাশনজগতে মডেল হিসেবে কাজ করছেন আজিম উদ্দৌলা। এখনো নিজেকে একই রকম ফিট রেখেছেন। কীভাবে সম্ভব দিনের পর দিন ফিট থাকা? জবাবে আজিম কঠিন সংগ্রমের কথা বলেছেন ভাবলে ভুল করবেন। বরং তাঁর সহজ টোটকা শুনলে আপনারও নিজেকে ফিট রাখতে ইচ্ছা করবে।
‘খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করি, ঘুমাতে যাইও আগেভাগে। করোনাকালে দীর্ঘদিনের সেই রুটিন কিছুটা এলোমেলো হয়েছে, তবে পুরোপুরি না। এই যেমন এখনো আমি রাতের খাবার আটটার মধ্যেই সেরে ফেলি। খাবার ও শরীরচর্চা দুটোই করি আনন্দ নিয়ে।’ এই ছিল আজিমের জবাব।
একজন মডেলের এই খাবারের অভ্যাস তো টিকিয়ে রাখা কঠিন। কারণ, সাধারণত ফ্যাশন শোর মৌসুমে অনুষ্ঠানগুলো শুরুই হয় সন্ধ্যার পরে, চলে অনেক রাত পর্যন্ত। সেই সময়ে কীভাবে খাবারের নিয়ম মেনে চলেন? আজিম বলেন, ‘আমার যখন শো চলে খাওয়ার সময় ঠিক রাখতে আমি অনলাইনে অর্ডার করে খাবার নিয়ে যাই অনুষ্ঠানস্থলে। ব্যবসায়িক মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকলে বা বিদেশে গেলেও এই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করি।’
সকালের নাশতায় ফলমূল, ডিম, টোস্ট করা রুটি খেতে ভালোবাসেন আজিম। তবে সকালে যদি দুধ পান করতে হয় তখন দুধের মধ্যে কলা, রুটির টুকরা, নানা রকম বাদাম মিশিয়ে একটা স্মুদি করে নেন নিজেই। সকালের চা-ও নিজের হাতেই বানান। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের রান্না করেন আজিম। করোনাকালে রান্নার হাত আরও পেকেছে।
দুপুরে থাকে ভাতের সঙ্গে নানা পদের সবজি। থাকে মাছ বা মাংস আর ডাল। রাতের খাবার যেদিন সাতটার মধ্যে খেতে পারেন, সেদিন মেন্যুতে ভাত রাখেন। তবে একটু দেরি হলে ভাত বাদে বাকি খাবার দিয়ে সেরে নেন। অন্যদের মতো এই মডেলও মাঝেমধ্যে বেশি খেয়ে ফেলেন। সেটা নানা কারণেই হতে পারে। বেশি খেলে পুষিয়ে নেন পরের বেলা কম খেয়ে। এ ছাড়া পরপর দুই বেলা বেশি খেলে দৌড়ে, হেঁটে বা ব্যায়াম করে বাড়তি ক্যালরি খরচ করে ফেলেন। ভাজাপোড়া, কোমল পানীয় আর চিনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
‘শরীরচর্চা করার সময় যদি আপনি আনন্দ খুঁজে না পান, তাহলে সেটা দিনের পর দিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন’ বলে মনে করেন আজিম। মডেল হওয়ার আগে থেকেই বেশ ফিট ছিলেন। বন্ধুরা তো জানতে চাইতেন ‘তুই কোন জিমে যাস?’ তখনো আজিমের ফিটনেস ঠিক রাখার একমাত্র কারণ ছিল, প্রতিদিন ক্রিকেট খেলা। তিনি বলেন, ‘আমি জিমের দরজায়ও যাইনি তখনো।’
শরীরচর্চার জন্য যে জিমে যেতেই হবে, এমনটা মনে করেন না আজিম। বাসায় নিজের কাজ নিজে করেও ব্যায়ামের সুফল পাওয়া যায়। তবে একটা সময় পর ফিট থাকতে সঠিকভাবে ব্যায়াম করা জরুরি। এই মডেল বলেন, ‘জিমে যাওয়া মানে শুধু শরীর গঠন, পেশি বাড়ানো নয়। যে কারও একটা মেদহীন ঝরঝরে শরীর থাকা ভালো। এতে অনেক রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকা যায়। তার জন্য প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়ামের নিয়মগুলো শিখে নিলেই হলো। এরপর জিম ছেড়ে বাড়িতে নিজের মতো করে সেগুলো চালিয়ে নেওয়া যায়।’
নিজের শরীরের কোন জায়গার উন্নতি দরকার, সেটা সেই মানুষই ভালো বুঝবে। আর সেভাবেই চর্চা চালিয়ে গেলে ভালো ফল মিলবে। আজিম নিজে ব্যায়ামের সময় অ্যাবস, কাঁধ ও পা নিয়ে সচেতন থাকেন বেশি। তাঁর মতে, এই জায়গাগুলো ঠিক না থাকলে একজন মডেলের পরা পোশাকটাও ভালো লাগবে না। ইন্সট্রুমেন্টাল জিম ছাড়াও দৌড় বা সাঁতারের মতো ব্যায়াম করতে ভালোবাসেন।
নিজে মডেল, তাই পোশাক নিয়ে সচেতন থাকতে হয়। কোনো কফিশপ বা বন্ধুদের আড্ডায় যেমন ট্রেইনার, টি-শার্ট বা জগার পরে বেরিয়ে পড়েন। এই পোশাক সবচেয়ে আরামদায়ক বলে মনে করেন আজিম। পারিবারিক কোনো দাওয়াতে গেলে ক্যাজুয়াল-ফরমাল পোশাকে থাকেন। মাঝে মাঝে পাঞ্জাবিও পরেন। কোনো ফরমাল অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে পুরোদস্তুর স্যুট-বুট পরেই যেতে চেষ্টা করেন। আজিম বলেন, ‘একজন মানুষ সম্পর্কে প্রথম ধারণা তৈরি হয় তার পোশাক দেখে। তাই কোন পোশাকে কোথায় যাচ্ছি, সেটা নিজের ভাবনায় থাকা ভালো।’
ব্যায়ামের সময় আজিম শর্টস, হাতাকাটা ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নেন। এমনিতে চোখে পরেন রোদচশমা, কোমরে একটা ফ্যাশনেবল ব্যাগে রাখেন মোবাইল ফোন, মানিব্যাগের মতো অনুষঙ্গ। ঘড়ি ও জুতার প্রতি নিজের বেশি ঝোঁক। তাই সুযোগ পেলেই সেসব কেনেন। নিজের ফ্যাশন–রুচি তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চালু করেছেন এ জেড ফ্যাশন হাউস। ঢাকার বনানীতে এর শোরুম। িনজের ব্র্যান্ড নিয়ে কাটে আজিমের বড় একটা সময়।
দেশের বড় বড় সব ফ্যাশন হাউসের সঙ্গেই নিয়মিত কাজ করেন আজিম। কখনো মৌসুমি পোশাকের ফটোশুট, কখনো চুক্তিবদ্ধ মডেল হিসেবে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ভারতের রাজস্থান, মুম্বাইয়ের বিভিন্ন ফ্যাশন শোতে হেঁটেছেন ও ফটোশুটের কাজ করেছেন সেসব দেশের ফ্যাশন আলোকচিত্রীদের সঙ্গে। তবে করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থেকে কানে যাওয়ার যে সুযোগ পেয়েছিলেন, সেটা পূরণ না হওয়ার খেদ আছে। একই সঙ্গে মনে করেন, এটাই শেষ সুযোগ নয়। কে জানে সামনের দিনে আরও বড় কিছু অপেক্ষা করছে কি না!