চট্টগ্রামের ঐতিহ্য মেজবান। এতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় গরুর মাংসের নানা স্বাদের মজাদার পদ দিয়ে। তাই বলে বিশাল আয়োজন ছাড়া মেজবানি মাংসের স্বাদ কি নেওয়া যাবে না? যাবে। দেখে নিন জোবাইদা আশরাফের রেসিপি

মেজবানি মাংস
উপকরণ–১: গরুর মাংস চার কেজি, পেঁয়াজ (অর্ধেক বাটা, অর্ধেক কুঁচি) ২ কেজি, আদাবাটা ২০০ গ্রাম, রসুনবাটা ২০০ গ্রাম, সাদা সরিষাবাটা ৫০ গ্রাম, চিনাবাদামবাটা ৫০ গ্রাম, নারকেলবাটা ২০০ গ্রাম, ধনে গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, গরমমসলা পরিমাণ মতো, টমেটো ১ কেজি, সরিষার তেল আধা কেজি, ঘি ৩৫০ গ্রাম, কাঁচা মরিচ ১০টি ও লবণ পরিমাণমতো।
উপকরণ-২: জিরা ২০ গ্রাম, ধনে ১০ গ্রাম, রাঁধুনি ১৫ গ্রাম, শুকনা মরিচ ১০টি ও তেজপাতা ৮টি।
উপকরণ-৩: মুখ চেরা এলাচি ৬টি, দারুচিনি (২ ইঞ্চি) ৩টি, লবঙ্গ ৮টি, গোলমরিচ আধা টেবিল চামচ, মেথি ২ টেবিল চামচ, জায়ফল ১টি, জয়ত্রী ১ টেবিল চামচ, রাঁধুনি আধা টেবিল চামচ ও জৈন ১ চা-চামচ।
প্রণালি: মাংস টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। গরম পানি ও কাঁচা মরিচ ছাড়া ১ নম্বর উপকরণের সব মসলা ও ২৫০ গ্রাম ঘি দিয়ে মাংস মেখে একটি ভারী সসপ্যানে নিয়ে চুলায় বসাতে হবে। ২ কাপ পানি দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। ২ নম্বর উপকরণের মসলাগুলো ভেজে গুঁড়া করে মাংসে দিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে চুলায় মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিতে হবে। পানি শুকিয়ে এলে একটু পানি গরম করে দিতে হবে। বেশি দেওয়া যাবে না। মাখা মাখা ঝোল রাখতে হবে। এর মধ্যে ৩ নম্বর উপকরণের মসলা ভেজে গুঁড়া করে রাখতে হবে। মাংস সেদ্ধ হয়ে ওপরে তেল ভেসে উঠলে কাঁচা মরিচ, ৩ নম্বর উপকরণের গুঁড়া মসলা ও ১০০ গ্রাম ঘি দিয়ে নেড়ে নামাতে হবে। সার্ভিং ডিসে মেজবানি মাংস নিয়ে ওপরে বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করা যাবে।
কালো ভুনা
উপকরণ-১: গরুর মাংস চার কেজি, পেঁয়াজবাটা দুই কাপ, রসুনবাটা পৌনে এক কাপ, আদাবাটা আধা কাপ, বাদামবাটা সিকি কাপ, সাদা সরিষাবাটা আধা কাপ, মরিচ গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, টকদই ২ কাপ, সরিষার তেল ১ কাপ, লবণ ও গরমমসলা পরিমাণমতো।
উপকরণ-২: পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, সয়াবিন তেল ৩ কাপ, গরমমসলা টালা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচ টালা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, জায়ফল টালা গুঁড়া ১টি, জয়ত্রী টালা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ ও কাঁচা মরিচ ১০ থেকে ১২টি।
প্রণালি: ১ নম্বর উপকরণ মাংসের সঙ্গে মেখে চুলায় দিয়ে রান্না করতে হবে। সেদ্ধ হওয়ার পর জন্য প্রয়োজনে ১ কাপ গরম পানি দিতে হবে। মাংস সেদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে। অন্য সসপ্যানে ২ নম্বর উপকরণের তেল গরম করে মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে। এগুলো একটু বাদামি হলে গরুও মাংস ঢেলে দিতে হবে। তেলের ওপর অনেকক্ষণ কষিয়ে কালো হয়ে এলে ২ নম্বরের উপকরণগুলো দিয়ে আরেকটু নেড়ে নামিয়ে নিতে হবে। এরপর ভাত, খিচুড়ি বা পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন।
আখনি বিরিয়ানি
উপকরণ-১: চিনিগুঁড়া চাল ২ কেজি, গরুর মাংস ৪ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ২ কেজি, রসুনবাটা ২০০ গ্রাম, আদাবাটা ২০০ গ্রাম, সাদা সরিষা ৫০ গ্রাম, চিনাবাদাম ৫০ গ্রাম, নারকেল কুচি ২০০ গ্রাম, মরিচ গুঁড়া ৩ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, গরমমসলা পরিমাণমতো, টমেটো ১ কেজি, কাঁচা মরিচ ১০-১২টা, তেল ১ কাপ, ঘি ১ কাপ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, টকদই ২ কাপ, লবণ ও গরম পানি পরিমাণমতো।
উপকরণ-২: মুখ চেরা এলাচি ১০টি, দারুচিনি (২ ইঞ্চি) ৪ টুকরা, লবঙ্গ ১০টি, জায়ফল ১টি, জয়ত্রী ২ টেবিল চামচ, শাহি জিরা ২ চা চামচ, কেওড়া ২ টেবিল চামচ ও গোলাপজল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: চাল ও মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। গরম পানি ছাড়া মাংসে ১ নম্বর উপকরণের মসলা, তেল ও ঘি মেখে চুলায় বসাতে হবে। মাঝারি আঁচে মাংস রান্না করতে হবে। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিতে হবে। সেদ্ধ হলে চাল মাংসে ঢেলে দিয়ে পাঁচ মিনিট কষাতে হবে। এবার পরিমাণমতো গরম পানি দিতে হবে। অন্য দিকে উপকরণ–২–এর মসলা তাওয়ায় ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে। চাল ও মাংসের পানি শুকিয়ে এলে গুঁড়া মসলা দিয়ে দমে বসাতে হবে। চাল ফুটে উঠলে কেওড়া ও গোলাপজল দিতে হবে। কিছুক্ষণ দমে দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। বড় পাত্রে আখনি বিরিয়ানি নিয়ে বেরেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে।
মেজবানি বুটের ডাল
উপকরণ: বুটের ডাল ১ কেজি, গরুর মাংস (হাড়সহ) ২ কেজি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, সাদা সরিষাবাটা ১ টেবিল চামচ, নারিকেল-সরিষা পেস্ট ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, গরমমসলা পরিমাণমতো, সয়াবিন তেল ১ কাপ এবং লবণ, কাঁচা মরিচ ও টমেটো পরিমাণমতো।
প্রণালি: ডাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে নিতে হবে। গরুর মাংস হাড়সহ ধুয়ে নিতে হবে। সসপ্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে। একে একে সব মসলা দিয়ে তারপর মাংস ঢেলে ভাজতে হবে। মাংস ভালো করে কষানো হলে এবং সেদ্ধ হলে জ্বাল একটু বাড়িয়ে দিতে হবে। আরেকটু কষিয়ে গরম পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। এরপর কাঁচা মরিচ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে। নামিয়ে পরোটা বা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন।
নেহারি বা নলা হাঁজি
উপকরণ-১: গরুর পায়া (নলা) ৪টি, আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ কাপ, চিনাবাদামবাটা আধা কাপ, সাদা সরিষাবাটা ২ টেবিল চামচ, পোস্তবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া এক টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ এবং গরমমসলা ও লবণ পরিমাণমতো।
টকের জন্য: জলপাই, আমড়া বা তেঁতুল স্বাদমতো, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি ও টমেটো ১ কেজি।
উপকরণ-২: গরমমসলা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ ও রসুন কুচি ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালি: গরুর পায়া টুকরা করে ভালোভাবে ধুয়ে ১ নম্বর উপকরণের সব মসলা মেখে নিতে হবে। তারপর ডুবো পানি দিয়ে কয়েক ঘণ্টা সেদ্ধ করতে হবে। পায়ায় লাগানো মাংস ভালো করে সেদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে দিতে হবে। পানি কমে এলে আবার পানি দিতে হবে। এরপর টক, কাঁচা মরিচ ও টমেটো দিতে হবে। অন্যদিকে, আরেকটা সসপ্যানে ২ নম্বর উপকরণের তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি ভাজতে হবে। এবার পেঁয়াজ, রসুনসহ তেল পায়ার ঝোলে ঢেলে দিতে হবে। গরমমসলার গুঁড়া দেওয়ার পর ঢাকনা দিয়ে পায়া আবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করে নামিয়ে নিতে হবে।