শালিকেরা থাকে তাঁর অপেক্ষায়

রোজ শত শত শালিককে খাওয়ানোর এই দৃশ্য দেখা যায় পাবনা শহরে। ছবি: হাসান মাহমুদ
রোজ শত শত শালিককে খাওয়ানোর এই দৃশ্য দেখা যায় পাবনা শহরে। ছবি: হাসান মাহমুদ

শিশিরভেজা ভোর। ঝাঁকে ঝাঁকে শালিক পাখি এসে বসছে বৈদ্যুতিক তারে। অপেক্ষা, কখন আসবেন তিনি, কখন খাবার দেবেন। সময়মতো বস্তাভর্তি চানাচুর নিয়ে হাজির হন সেই মানুষটা। শুরু হয় শালিককুলের ছুটোছুটি-হুড়োহুড়ি। কিচিরমিচির শব্দে পেট পুরে চানাচুর খেয়ে ছুটে যায় দিগ্বিদিক।
প্রতিদিন ভোরে শত শত শালিককে আপ্যায়নের এই দৃশ্য দেখা যায় পাবনা শহরের আবদুল হামিদ সড়কে। এআর কর্নার বিপণিবিতানের সামনে তিন বছর ধরে শালিকদের আপ্যায়নের কাজটি করছেন সমর কুমার ঘোষ। তিনি শ্যামল দই ভান্ডারের মালিক।
সমর কুমার ঘোষ পারিবারিক মিষ্টি ব্যবসায় উত্তরাধিকার সূত্রে অংশীদার। তিন ভাই মিলে পৈতৃক ব্যবসাটা দেখাশোনা করেন। দিনের প্রথম ভাগে দোকানের দায়িত্ব থাকে সমরের ওপর। ফলে খুব ভোরে তাঁকে দোকানে আসতে হয়। আর সে সুবাদেই শালিকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে বলে জানান সমর।
তবে দিনে দিনে এত শালিক জমবে, তা ভাবেননি কখনো। বছর তিন আগে খুব ভোরে তিন-চারটি শালিক এসে দোকানের সামনে খাবার খুঁজত। পড়ে থাকা খাবার খেয়ে আবার উড়ে যেত। একদিন খাবার না পেয়ে পাখিগুলো চেঁচামেচি করছিল। বিষয়টা কষ্ট দিয়েছিল সমরকে। তিনি দোকান থেকে কিছু চানাচুর নিয়ে পাখিগুলোকে খেতে দিয়েছিলেন। এরপর থেকে পাখিগুলো এসে তাঁর দিকে চেয়ে থাকত। তিনিও খাবার দিতেন আনন্দিত চিত্তে। সেই থেকে চার পাঁচ ছয় করে খাবারসন্ধানী শালিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

সমর কুমার ঘোষ

বর্তমানে পাখিদের এই সংখ্যা অগুনতি। ভোর হতেই হাজারখানেক, কখনো-বা আরও বেশি শালিক খাবার খেতে আসছে। দিন দিন সংখ্যাটা বাড়ছেই। দলে দলে পাখিরা এসে বসছে সমর কুমারের দোকানের সামনে। তিনিও সানন্দে চানাচুর দিয়ে আপ্যায়ন করছেন শালিকদের। প্রতিদিন তাঁকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার চানাচুর খাওয়াতে হচ্ছে। পাখিদের আপ্যায়ন করতে আনন্দ হয় সমর কুমারের। মানসিক তৃপ্তি জোগায়। তাই তিনি সারা জীবন এই কাজ করতে চান। সেভাবেই সবাইকে বলেছেন। তিনি দোকানে না থাকলে তাঁর ভাইয়েরা কাজটি করেন। দোকানের কর্মচারীরাও পাখিদের খাবার দেন। তাই শালিক পাখির দল খাবার খেতে আসতে ভোলে না কোনো দিন।
শহরে প্রতিদিন ভোরের এই দৃশ্য আনন্দ দেয় বহু পথচারীকে। অনেকে অবাক হয়ে দৃশ্যটি উপভোগ করেন। ধারণ করেন মুঠোফোনে। অনুপ্রাণিত হন পাখিদের ভালোবাসতে। প্রাতর্ভ্রমণ ও জরুরি কাজে ভোরে বাড়ি থেকে বের হওয়া এমন বেশ কিছু মানুষ প্রশংসা করেন সমর কুমারের এই পাখিপ্রেমকে।
শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার রাসেল রহমানের ভাষায়, ছোট ছোট এমন উদ্যোগ প্রকৃতি ও দেশের জন্য বড় প্রাপ্তি হতে পারে। তাই সবাই এমন সচেতন হতে পারলে সুফল বয়ে আনবে।
সম্প্রতি সমর কুমারের পাখি আপ্যায়নের একটি আলোকচিত্র প্রথম আলোয় প্রকাশ হওয়ায় সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। উত্তরাঞ্চলের পরিবেশবাদী সংগঠন স্বাধীন জীবনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সমর কুমারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রথম আলোতে তাঁর আলোকচিত্র প্রকাশ হওয়ার পর আমরা বিষয়টি বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানিয়েছিলাম। এতে তিনি সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন।’