
সমাজের কঠিন সমস্যাগুলো সমাধানেরও হাতিয়ার হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গ্রামীণফোন আয়োজিত প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এআই–ভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতা ফিউচারমেকার্সে দেখা গেল সেই সম্ভাবনারই কিছু ঝলক। সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। জমা পড়া ৭৮২টি প্রকল্প থেকে ১০টি চূড়ান্ত দল নিয়ে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল।
এআই শুধু ভাষা বুঝতে পারে না, ভাষা বোঝাতেও পারে। প্রতিযোগিতায় ‘ইশারা: বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর’ তৈরি করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফিরোজা মেহজাবিনের ‘টিম ওয়াটারমেলন’।
কথা বলতে পারে না, এমন মানুষদের ইশারা ভাষাকে বাংলায় রূপান্তর করবে এআই। ফিরোজা জানান, ‘যাঁরা শুনতে বা কথা বলতে পারেন না, প্রযুক্তিনির্ভর অনেক সেবা থেকেই তাঁরা বঞ্চিত। এআই ব্যবহার করে ইশারা ভাষাকে সাধারণ মানুষের বোধগম্য লেখা ও বাক্যে রূপান্তর করা সম্ভব।
একইভাবে এটি সাধারণ মানুষের বাক্যকে ইশারা ভাষায় রূপান্তর করে যোগাযোগের পথ তৈরি করবে। এতে করে হাসপাতাল বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকসেবা দেওয়া সহজতর হবে।’
সামাজিক মাধ্যম মানেই এখন যেন ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি। সেই ভুয়া খবর রোধে এআই ব্যবহার করে প্রথম রানার্সআপ হয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের দুই শিক্ষার্থী রিদওয়ান সাকিব ও ওয়াসিক ইউশার ‘টিম অপিয়ন’।
সাকিব বলেন, ‘আমাদের “এআই ড্রিভেন নিউজ ক্রেডিবিলিটি প্ল্যাটফর্ম” ব্যবহার করে কোনো সংবাদ বা তথ্যের উৎস, প্যাটার্ন এবং বিষয়বস্তুর সত্যতা বিশ্লেষণ করা যাবে। ব্যবহারকারীরা দ্রুত জানতে পারবে কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিমূলক। এতে করে সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের বিস্তার যেমন কমানো যাবে, তেমনি নির্ভুল সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে দুটি দল। একটি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তিন শিক্ষার্থী নুজহাত ইসলাম, রোহান অর্পন ও অঙ্কন আহমেদের ‘টিম সিন্যাপজ’।
এআই ব্যবহার করে কীভাবে প্রতিবন্ধীরা দ্রুত শিখতে পারে এবং চাকরির বাজারে সুবিধা করতে পারে, সেটাই দেখিয়েছে তাঁদের প্রকল্প।
নুজহাত ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে একটি চাকরির মেলায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিলাম। সেখানে অনেক মানুষ ছিলেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও পক্ষাঘাতগ্রসস্ত। তাঁদের কথা বিবেচনা করেই আমরা তৈরি করেছি “এআই ইনক্লুশন ফর ডিফারেন্টলি-অ্যাবলড লার্নারস”। প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে চাকরির বাজারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা দ্রুত শিখতে পারবেন।’
দ্বিতীয় রানার্সআপ হওয়া আরেকটি দল ‘টিম লাস্তা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর তিন সদস্য তানিশা তারান্নুম, বাসমাহ্ জোরা ও মাহী আল মোবাশ্বেরীনের দলটি তৈরি করেছে ‘দিশা: ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন থ্রু এআই’।
এটি অর্থনৈতিক সেবা প্রদান করবে। তানিশা তারান্নুম জানান, সমাজের একটি বড় অংশ প্রচলিত আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে থাকেন। তাঁদের আর্থিক ব্যবস্থার কোনো হিসাব থাকে না কারও কাছে।
এআইচালিত প্ল্যাটফর্মটি ব্যাংকগুলোকে তথ্য সরবরাহ করে ব্যাংকবিহীন, জামানতবিহীন ও আর্থিক ইতিহাসবিহীন মানুষকে ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেবে। এতে করে আর্থিক ব্যবস্থায় যাঁরা কখনোই প্রবেশ করেননি, তাঁদের কার্যকরভাবে আর্থিক সেবায় আনা যাবে।
আমরা যখন এআইনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন তরুণ প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে হবে। তাদের জন্যই এবারের এই আয়োজন। বিজয়ীরা পুরস্কারের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের প্রতিভা উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।ইয়াসির আজমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গ্রামীণফোন