আপনার বয়স কত—এই প্রশ্ন করার অধিকার সবাই রাখে না। জনসম্মুখে বয়স নিয়ে আলোচনায়ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না মানুষ। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতেই ফেসবুকে সবাই নিজের বয়স শেয়ার করছে। বন্ধুমহলেও চলছে আলোচনা, ‘আমার বয়স তো ৬০, তোরটা কত?’ ডিসেম্বর–জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জন্মদিন আর বয়স নিয়ে একটা আলোচনা ওঠে বটে, তবে এবারের আলোচনা দৈহিক কিংবা মনের বয়স নয়, আলোচনা হচ্ছে গানের শ্রোতা হিসেবে আপনার বয়স কত, সেটা নিয়ে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অডিও স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান স্পটিফাই তার গ্রাহকদের জন্য বছর শেষের উপহার হিসেবে দেয় ‘স্পটিফাই র্যাপড’। আর সেই র্যাপডেই এবার যুক্ত হয়েছে নতুন পর্ব—‘লিসেনিং এজ’। শ্রোতাদের গান শোনার মজা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে স্পটিফাইয়ের এই আয়োজন।
গানের স্বাদ অনুযায়ী নিজেদের বয়স আবিষ্কার করে অনেকেই অবাক—‘স্পটিফাই কি আমার বয়স বাড়িয়ে দিল?’ আবার প্রকৃত বয়সের চেয়ে ‘লিসেনিং এজ’ কম এসেছে কারও কারও। তাঁরা বেশ আগ্রহ নিয়ে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করছেন সেই বয়সের তথ্য। অনেকে আবার মজা করে লিখেছেন, ‘স্পটিফাই বয়স এত বাড়িয়েছে, লজ্জায় শেয়ার করতে পারছি না।’
গান শোনার অ্যাপ স্পটিফাই ব্যবহার করে আপনি সারা বছর যেসব গান শুনেছেন, সেসবেরই একটা চিত্র তুলে ধরে স্পটিফাই র্যাপড। বছরজুড়ে আপনি মোট কয় ঘণ্টা গান শুনেছেন, সবচেয়ে বেশি শুনেছেন কোন শিল্পীর গান, কোন ধারার গান স্থান পেয়েছে আপনার প্লেলিস্টে—এসব তথ্য চমৎকার গ্রাফিকসের মাধ্যমে প্রকাশ করে স্পটিফাই।
২০১৬ সাল থেকে চালু হওয়া র্যাপড দেখলেই শ্রোতারা বুঝতে পারেন, বছরজুড়ে তাঁদের গান শোনার খতিয়ান। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময়কে ধরে র্যাপড তৈরি করে স্পটিফাই।
সুইডিশ এই অডিও স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান মাস ধরে ধরে পর্যালোনা করে আপনার গান শোনার ধরন। র্যাপডে আপনি দেখতে পাবেন কোন মাসে কী ধরনের গান শুনেছেন। ফিরে যেতে পারবেন সেই সময়ের স্মৃতিতে।
র্যাপডের গ্রাফিকস বা অ্যানিমেশনগুলো সহজেই শেয়ার করতে পারবেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফলে কয়েক দিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অসংখ্যা ‘নেগেটিভিটি’কে কিছুটা হলেও পাশ কাটাতে পারেন সংগীতপ্রেমীরা।
গান নিয়ে চলে আলোচনা। শ্রোতারা যেমন পান নতুন গানের খোঁজ, তেমনি নিজেদের পছন্দের গানের কথা জানাতে পারেন বন্ধুদের। চাইলে প্রিয় গানগুলো শুনে নিতে পারেন আরও একবার। সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের শুরুতে স্পটিফাই র্যাপডের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন সংগীতপ্রেমীরা।
স্পটিফাইয়ের জন্য কাজটা একেবারেই সহজ—পুরোটাই ডেটার খেলা। আপনি যেসব গান শোনেন, সেসব কবে মুক্তি পেয়েছিল, সেটা বিশ্লেষণ করেই আপনার লিসেনিং এজ ঠিক করে স্পটিফাই।
সারা বছর আপনি যত গান শুনেছেন, সবই বিশ্লেষণ করে গানবিশ্বের সবচেয়ে বড় অডিও স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠানটি। তারপর স্পটিফাই ধরে নেয় বছরের এমন একটা টাইমলাইন, যে সময়ে গানের প্রতি অন্য শ্রোতাদের তুলনায় আপনার আগ্রহ বেশি।
তারা ধরে নেয়, ওই টাইমলাইনে আপনার বয়স ১৬ থেকে ২১। সে অনুয়ায়ী ২০২৫ সালে আপনার বয়স যত হবে, সেটাই আপনার লিসেনিং এজ হিসেবে দেখায় স্পটিফাই।
বড় হয়ে উঠতে উঠতে আমরা যে বই পড়ি বা যেসব গান শুনি, সেসব আমাদের মনে গেঁথে থাকে দীর্ঘদিন। বড় হওয়ার পর আমাদের শৈশব, কৈশোর বা তারুণ্যের স্মৃতিই থাকে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে। বিশেষ করে যাঁদের বয়স ৪০–এর ওপরে, তাঁরা জীবনের অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ৩০ বছরের স্মৃতি ভালোভাবে মনে রাখতে পারেন।
মনের এই অদ্ভুত ব্যাপারটিকে গবেষকেরা বলেন ‘রেমিনিসেন্স বাম্প’। আর এর ওপর ভিত্তি করেই তৈরি স্পটিফাই লিসেনিং এজের ধারণা। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নিজের যৌবন বা কৈশোরে শোনা গানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি একাত্ম বোধ করেন।
আর এত কিছুর একটাই কারণ—বছর শেষে গান নিয়ে মেতে থাকার একটা উপলক্ষ তৈরি। যেটা প্রতিবছর ভালোভাবেই করে আসছে স্পটিফাই।
আমাদের কখন কোন গান ভালো লাগে, তার কি ঠিক আছে? হয়তো চল্লিশোর্ধ কোনো ব্যাংক কর্মকর্তা বাসায় ফেরার সময় শোনেন ড্রেকের গান। ফলে তাঁর বয়স ৪০ হলেও স্পটিফাই লিসেনিং এজ হতেই পারে ৩০ কিংবা ২৫।
আবার কোনো স্কুলপড়ুয়া কিশোর হয়তো সারা দিন ডুবে থাকে পিংক ফ্লয়েড, জুডাস প্রিস্ট, আয়রন মেইডেন কিংবা বিটলসের গানে। সে ক্ষেত্রে তার লিসেনিং এজ ৬০ কিংবা ৭০ বছরও হয়ে যেতে পারে। স্পটিফাই তো আর আপনার বয়স জানে না।
অফিসের মানবসম্পদ বিভাগ যেমন আপনার সারা বছরের পর্যালোচনা করে, র্যাপডও তা–ই। পার্থক্য একটাই, অফিস আপনার ভালো লাগে না, কিন্তু গান শুনতে ভালো লাগে। র্যাপড আপনার গান শোনার বার্ষিক প্রতিবেদন।
এখানে থাকে আপনার পছন্দের সেরা পাঁচ শিল্পী, সবচেয়ে বেশি শোনা পাঁচ গানের নাম, কোন মাসে কাদের গান বেশি শুনেছেন, কতজন শিল্পীর গান শুনেছেন বছরজুড়ে, কতবার বেজেছে আপনার প্রিয় গানটি, কোন কোন জনরার গান আবিষ্কার করেছে আপনার দুই কান—এমন অনেক পরিসংখ্যান।
ধরুন, টেইলর সুইফট আপনার পছন্দের শিল্পী। বছরজুড়ে আপনি শোনেন তাঁর গান। টেইলর সুইফটের কাছ থেকে কোনো কথা শুনতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে আপনার। স্পটিফাই র্যাপডে আছে সেই আয়োজনও।
যে শিল্পী বা ব্যান্ডের গান আপনি সবচেয়ে বেশি শুনেছেন বছরজুড়ে, তাঁদের পক্ষ থেকে একটা ছোট ভিডিও বার্তা পাবেন র্যাপডের শেষ পর্যায়ে। প্রিয় শিল্পীর ভিডিও বার্তা যেকোনো ভক্তের কাছেই বিশেষ কিছু। হোক না সেটা আগে থেকে রেকর্ড করা।
স্পটিফাইয়ের এই আয়োজন নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে ব্যাপাক আলোচনা। র্যাপড কিংবা লিসেনিং এজ নিয়ে মাতামাতি তো হয়েছেই, সঙ্গে তৈরি হয়েছে প্রচুর মিম ও রিল।
বাংলাদেশে যাঁরা স্পটিফাইয়ের গ্রাহক, তাঁরাও মেতেছেন এই উৎসবে। সংগীতপ্রেমীরা নিজেদের র্যাপড শেয়ার করছেন, অন্যরাও কমেন্টে জানাচ্ছেন তাঁদের লিসেনিং এজ।
আবার যাঁরা স্পটিফাইয়ের গ্রাহক নন, তাঁরাও পিছিয়ে নেই। ‘আজ স্পটিফাই নাই বলে র্যাপড শেয়ার দিতে পারছি না’–টাইপের ট্রল করতেও ভোলেননি অনেকে।