
অনেক সময় আমরা এমন সময়ের মুখোমুখি হই, যখন সব হারিয়ে ফেলি। জীবন অনেক সময় আমাদের সব কেড়ে নেয়। আর এরপর যখন আমরা সেই নিকষ অন্ধকার সুড়ঙ্গ পাড়ি দিই; সব যখন স্থির, শান্ত, স্বাভাবিক হতে শুরু করে; জীবনে নতুন করে আলো আসে, কেবল তখনই আমরা জীবনের সত্যিকারের মানে উপলব্ধি করি। ভয়াবহ দুঃসময়ে আমরা সাতটি জিনিস আবিষ্কার করি। কী সেসব?
তীব্র বেদনা, হতাশা, বিষণ্নতা আমাদের ভেতর থেকে চুরমার করে দেয়। সেই সঙ্গে নিজেকে নতুন করে চিনতেও শেখায়। বেঁচে থাকার সংগ্রাম আপনার নিজেরই এমন এক সংস্করণের মুখোমুখি দাঁড় করায়, যাকে আপনি চিনতেন না।
আপনার ভেতরে যে সেই সত্তা সুপ্ত ছিল, আপনি কখনো জানতেন না। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে থাকার লড়াইয়ে আপনি কখনো জানতেন না—এই তুমুল স্রোতের বিপরীতে আপনি এভাবেও প্রতিরোধ গড়ে টিকে থাকতে পারতেন।
এটাই খারাপ সময়ের সৌন্দর্য, নিজের ভেতরের শক্তি বের করে আনে। আপনার সঙ্গে যখন আপনার পদ, পদবি, সম্পদ, সম্পর্ক, স্বস্তি—কিছুই থাকে না, তখন আপনি সত্যিকারের ‘আমার আমি’র মুখোমুখি হন।
নিজের সঙ্গে আপনার নিজের বোঝাপড়া দৃঢ় হয়। এ জন্যই বলা হয়—‘লুজ এভ্রিথিং টু ফাইন্ড ইয়োরসেলফ’। আপনি কি সব হারিয়ে নিজেকে পাওয়ার জন্য প্রস্তুত?
আপনি যখন চূড়ান্ত বিপদে পড়েন, তখন আপনার সঙ্গে একমাত্র যে থাকে, সে আপনি নিজে। আপনি মনের গহিনে, মাথার ভেতরে যে অন্ধকার সুড়ঙ্গ পার করেন, সেখানে কেউ আপনার সঙ্গী হয় না।
সেই যাত্রার একমাত্র যাত্রী আপনি নিজে। আর আপনি নিজেই নিজেকে উদ্ধার করেন। আপনজন বা বন্ধুবান্ধব আপনাকে ওই সুড়ঙ্গ থেকে বের হতে সাহায্য করেন; তবে নিজেকে বের করে নিয়ে আসেন আপনি নিজেই।
একবার সবকিছু হারিয়ে ফেলার পর আপনার কাছে বস্তুবাচক জিনিস আর মুখ্য থাকে না। তখন আপনার মানসিক শান্তি, নিরাপত্তা আর স্থিতিশীলতাই জরুরি হয়ে ওঠে। আপনি ‘আরও চাই’ থেকে ‘যা আছে তা-ই যথেষ্ট’–তে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
আপনি যখন জীবনের খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যান, আপনার ফোন খুব কমই বেজে ওঠে। সে সময়েও যেসব মানুষ আপনার খোঁজখবর নেন, পাশে থাকেন, ভালো অনুভব করান, কেবল তাঁদেরই জীবনে রাখুন।
একবার যখন আপনি জীবনে সব হারিয়ে ফেলেন, তখনই আপনি বোঝেন, মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য আদতে খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। কিছুই না থেকে আপনি আবার নতুন করে যা কিছু পাওয়া শুরু করেন, আপনি সেসবের জন্য কৃতজ্ঞতার চর্চা করতে ভোলেন না।
সব হারিয়ে আপনি ‘যেতে দেওয়া’ শেখেন। সেটা হতে পারে ভালোবাসার মানুষ, আপনজন, সম্পর্ক, কোনো সুযোগ, চাকরি, অর্থ-সম্পদ বা প্রত্যাশা।
আপনি যখনই কোনো কিছুকে ‘চলে যেতে দেন’, সেই মুহূর্ত থেকে আপনি সেরে উঠতে শুরু করেন। নতুন করে বাঁচতে শেখেন। আপনি শেখেন, চরম ব্যর্থতা আপনাকে যেভাবে শিখিয়েছে, চূড়ান্ত সফলতা তার এক ভাগও পারে না।
আপনি আরও শেখেন, শেষ হয়ে যাওয়া মানেই শেষ হয়ে যাওয়া নয়, সেটা এক নতুন উপলব্ধির সঙ্গে নতুন সূচনারও অবকাশ এনে দেয়।
একবার সব হারানোর পর আপনি বুঝে যান, জীবনে কেবল দুটি জিনিস মূল্যবান—ভালোবাসা আর সময়। আপনি নতুন করে জীবনকে ভালোবাসতে শেখেন আগের চেয়েও তীব্রভাবে।
অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পর আপনি সময়ের মূল্যায়ন করেন, উপভোগ করেন যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও গভীরভাবে।
সূত্র: লাইফ চেঞ্জিং গাইড