৫ টাকার কয়েনে প্যাড!

আমাদের সময়ের প্রতিধ্বনি ফাউন্ডেশন–এর একটি আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ডলি আক্তার মহিলা কলেজে পড়াশোনা করেন প্রায় ৪০০ নারী। দেশের প্রত্যন্ত এই কলেজে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই নিরাপদ পানির কল। প্রয়োজনের সময় তাঁরা পুকুরের পানি ব্যবহার করেন। এই নারীদের জন্য পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই বিষয় মাথায় রেখেই ৩ ডিসেম্বর এই কলেজে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে সানজিদা হকের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘আমাদের সময়ের প্রতিধ্বনি ফাউন্ডেশন’। যেখানে ৫ টাকার কয়েনের মাধ্যমে পাওয়া যাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন। একটা ভেন্ডিং মেশিনে ৪০টি স্যানিটারি ন্যাপকিন থাকে। শেষ হয়ে গেলে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলেই তারা আবার রিফিল করে দিয়ে যায়।

সানজিদা হকের এই উদ্যোগ নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে। জানতে চাইলাম, এই প্যাডগুলো কি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য? বললেন, ‘পুনরায় ব্যবহারের জন্য কাপড়ের তৈরি প্যাডটি ভালো করে সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই এলাকায় তো পানিরই সংকট।’ মেনস্ট্রুয়াল কাপের সঙ্গে কেন পরিচিত করালেন না? ‘ওরা এমন একটা অঞ্চলে বাস করে, যেখানে পিরিয়ড নিয়ে কথা বলাই একটা ট্যাবু। আর মেনস্ট্রুয়াল কাপ ধারণাটা আমাদের দেশের জন্যই নতুন। ওদের এ বিষয়ে জানিয়ে ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ আমাদের সময়ের প্রতিধ্বনি ফাউন্ডেশন থেকে চলতি মাসেই ভেন্ডিং মেশিনটি লাগানো হয়েছে। আর রানি স্যানিটারি ন্যাপকিন নামের একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করছে প্যাড। প্রতিটি প্যাড উৎপাদন করতে তাদের ৫ টাকাই খরচ হয় বলে জানানো হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। তারা কোনো লাভ রাখছে না। দশমিনার পর রাজধানীর বাসাবোর কদমতলী হাইস্কুলেও ভেন্ডিং মেশিন লাগানো হয়েছে। শিগগিরই কড়াইল বস্তিতে লাগানো হবে আরেকটি ভেন্ডিং মেশিন। ২০২৩ সালের ভেতর সানজিদা অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে চান স্যানিটারি ন্যাপকিনের এই ভেন্ডিং মেশিন। তবে কয়েন ছাড়া কিন্তু ৫ টাকার নোটে পাওয়া যাবে না প্যাড।

নিজের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোগটি নিয়েছেন সানজিদা হক

সানজিদা হক পারিবারিক সূত্রে তায়রুন্নেসা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নার্সিং কলেজের পরিচালক। সেই সুবাদে অনেক চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর জানাশোনা। করোনাকালে পরিচিত চিকিৎসকের নিয়ে শুরু করেন ফেসবুক লাইভ। সেখান থেকেই আসে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল বাসের আইডিয়া। নাম দেন ‘স্বাস্থ্যচাকা’। এই স্বাস্থ্যচাকা ঘুরেছে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি স্বাস্থ্যসুবিধাবঞ্চিত অঞ্চল। এ ছাড়া ঢাকার ভেতরেও কড়াইল বস্তি, বসিলা, তেজগাঁও উড়ালসেতুর নিচের বস্তি ও মালিবাগ রেলগেটের বস্তি এলাকায় গেছে এই ‘স্বাস্থ্যচাকা’। এই ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল বাস কী ধরনের সেবা দেয়? উত্তরে সানজিদা বলেন, ‘আমরা যেদিন যে এলাকায় যাব, আগেই সেখানকার কোনো এক স্থানীয় প্রতিনিধিকে জানিয়ে রাখা হয়। সেই প্রতিনিধি সব ব্যবস্থা করে রাখেন। মেডিকেল বাস গিয়ে আগে থেকেই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্যসেবাপ্রত্যাশীদের প্রেশার মাপা, রক্তের গ্রুপ ও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে প্রাথমিক ওষুধ ও পরামর্শ দেয়। কোথায়, কীভাবে চিকিৎসক দেখাতে হবে, তা জানায়। মাঝেমধ্যে দেখা যায় ডায়াবেটিসের পয়েন্ট ২০ বা ২৫, অথচ উনি জানতেনই না!’ এবার সানজিদা চান ‘শিক্ষাচাকা’ নামে একটি ভ্রাম্যমাণ স্কুল করতে, যাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বাংলা ও ইংরেজি পড়তে, যোগ-বিয়োগের মতো সাধারণ বিষয়গুলো শিখতে পারে।