শীত এলেই স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলে ত্বক। ঠান্ডা বাতাস, কম আর্দ্রতা, গরম পানি দিয়ে গোসল আর পানিশূন্যতার কারণে এ সময়ে ত্বক হয়ে ওঠে সবচেয়ে শুষ্ক। অনেকেই শীতে ত্বক টানটান লাগা, খসখসে ভাব বা চুলকানিকে ‘স্বাভাবিক’ বলে এড়িয়ে যান; কিন্তু সত্যি বলতে, এটি ত্বকের অযত্নের একটি স্পষ্ট সংকেত। এর জন্য সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে শরীরে লোশন ব্যবহার করতে হবে।

শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়, ফলে ধীরে ধীরে আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা শুষে নেয় বাতাস। গরম পানি দিয়ে গোসল আরও দুর্বল করে ত্বকের ওপরের সুরক্ষাবলয়। ফলাফল—ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক, রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ। এ অবস্থায় একবার লোশন লাগালেই পুরো দিন চলে যাবে—এমন ভাবাটা পুরোপুরি ভুল।
হারমনি স্পা অ্যান্ড বিউটি স্যালনের কর্ণধার রাহিমা সুলতানা বলেন, অনেকেই সকালে গোসলের পর একবার লোশন লাগিয়ে সারা দিন নিশ্চিন্ত থাকেন; কিন্তু শীতে বারবার আর্দ্রতা হারায় ত্বক। কাপড়ের ঘর্ষণ, ঠান্ডা বাতাস আর শুষ্ক পরিবেশে ত্বকের ওপর লাগানো লোশনও ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারায়। ফলে একবার লোশন ব্যবহার শীতের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।
রাহিমা সুলতানা জানান, শীতকালে গুনে গুনে নয়; বরং যতবার ত্বকে পানি লাগানো হবে, ততবারই লোশন লাগানো জরুরি। কেবল গোসলের পরই নয়, হাত-মুখ ধুলেও হালকা করে পুরো হাতে লোশন লাগিয়ে নিতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও হাত-মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে বেশি করে লোশন লাগিয়ে নিন।
সারা রাতে প্রায় সাত-আট ঘণ্টার জন্য যেহেতু শরীরে কোনো ময়েশ্চারাইজার লাগানো হবে না, তাই লোশনের মোটা স্তর এই সময়টায় আপনার ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে। শুধু তা–ই নয়, লোশনে থাকা উপকারী উপাদান রাতজুড়েই ত্বক সুগঠনে কাজ করবে।
যাঁদের ত্বক খুব বেশি শুষ্ক, তাঁরা লোশন ও গ্লিসারিন একত্রে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক ফেটে যাওয়া বা খসখসে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হবে না। এ ছাড়া শহরাঞ্চলের পানিতে থাকা ক্লোরিনও ত্বককে শুষ্ক করে। এ জন্য নিয়ম মেনে দিনে বেশ কয়েকবার লোশন ব্যবহার জরুরি।
শরীরে ত্বকের সব অংশের চাহিদা এক নয়। শীতে সবচেয়ে বেশি শুষ্ক হয় হাত, পা, কনুই, গোড়ালি ও হাঁটু। এই জায়গাগুলোতে প্রয়োজনে বারবার লোশন বা ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। অন্যদিকে বুক বা পিঠে তুলনামূলকভাবে হালকা লোশনের ব্যবহারই যথেষ্ট হতে পারে, যেহেতু শরীরের এই অংশের ত্বকে সরাসরি সংস্পর্শ কম হয়।
শীতকালে হালকা লোশনের বদলে একটু ঘন টেক্সচারের বডি লোশন বা বডি ক্রিম বেশি কার্যকর। শিয়া বাটার, গ্লিসারিন, সেরামাইড বা প্রাকৃতিক তেলযুক্ত লোশন ত্বকে দীর্ঘসময় শরীরে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে খুব বেশি সুগন্ধিযুক্ত লোশন এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, এতে ত্বক আরও শুষ্ক বা সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে।
রাহিমা সুলতানা পরামর্শ দিলেন, ত্বক হালকা ভেজা অবস্থায় লোশন দেওয়া অধিক কার্যকর। কারণ, এতে ত্বকে থাকা ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা লক হয়ে যায়। লোশনের মূল কাজই হলো ত্বককে বাহ্যিক পরিবেশের সংস্পর্শে না এনে এর ভেতরের আর্দ্রতা বজায় রাখা। তাই হালকা ভেজা বা টাওয়েলড্রাই ত্বকে লোশন লাগালে তা কাজে আসবে বহুগুণ। তাই গুনে গুনে এক বা দুইবার নয়; বরং এখন যতবার পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করবেন, ততবারই লাগাবেন লোশন।