Thank you for trying Sticky AMP!!

দারুণ চমকে শুরু ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২০

ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনারদের উপস্থিতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ডিজাইনারদের চমৎকৃত উপস্থাপনায় বৃহস্পতিবার শুরু হলো ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২০। দ্বিতীয় আসরের প্রথম সন্ধ্যার শুরুটা ছিল প্রথম আসরের মতোই ট্রেসেমে কিউ দিয়ে। রূপ বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীনের সাজ আর কেশসজ্জায় মঞ্চে পা মেলান সংগীতশিল্পী জেফার, ফুটবলার মৌসুমী, অভিনয়শিল্পী ও উপস্থাপক নাবিলা, সংবাদপাঠক তরি, পাইলট মালিহা, নৃত্যশিল্পী হৃদি শেখ, অভিনয়শিল্পী সুনেহরা ও চিকিৎসক তানজিনা ইয়াসমিন। 

অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় ট্রেসেমের #ডুইটফরইউ বক্তব্য। কারণ ট্রেসেমের উদ্দেশ্যই হলো একজন নারীর স্বকীয়তাকে প্রতীয়মান করা। তাই তো স্বনামখ্যাত নারীরা হেঁটেছেন সগর্বে রানওয়ে অব লাইফে। মনোগ্রাহী কথামালার ছন্দময় উচ্চারণের মাঝে মঞ্চ আলো করেন তাঁরা; যাদেরকে বিশ্বাস করে ট্রেসেমে, তাদের জন্যই তো ছিল এই আয়োজন।

ফ্যাশন শোয়ের মূল পর্বে যাওয়ার আগে বক্তব্য রাখেন ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশের (এফডিসিবি) প্রেসিডেন্ট মাহিন খান। এবারের আসরের নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের ডিজাইনারদের জন্য এই আসর যে কার্যকর একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে তা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি বৈশ্বিক বাস্তবতায় সময়োপযোগী টেকসই ফ্যাশন গুরুত্ব পাওয়ার বিষয়টিও জানিয়ে রাখেন।

ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২০-এ ফ্যাশন শোতে অংশ নেন মডেলরা। ছবি: প্রথম আলো

এরপর সূচনা হয় কাপড় ক্যানভাসে নকশা আয়োজনের উদ্‌যাপন। শুরু হয় বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনার নওশিন খায়েরকে দিয়ে আর পর্দা নামে ভারতীয় ফ্যাশন ডিজাইনার রিধি জৈনের উপস্থাপনায়। এর মাঝে একে একে নিজেদের সংগ্রহ তুলে ধরেন রিমা নাজ, তেনজিং চাকমা, অনুজ শর্মা রিফাত রহমান, তাসফিয়া আহমেদ, অজয় গুরুং, সাদিয়া হোসেন মিশু, আফসানা ফেরদৌসী ও রিধি জৈন।

কাকতালীয় হলেও আজকের রানওয়ে জুড়েই ছিল নীলের ছড়াছড়ি। শুরুতে নওশিন খায়েরের টাইডাই আর সবশেষে রিধির শিবোরি ছাড়াও নীল যেন আজকের আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিল। এর মধ্যে সাদিয়া হোসেনের ব্লু ডেনিম আর অনুজের হৃদয়স্পর্শী নীল যেমন ছিল, তেমনি রিফাতের নীলও ছিল নজর কাড়ার জন্য যথেষ্ট। আবার অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা ছিল তেনজিংয়ে নীল। অন্যদিকে জমিনে নীল না থাকলেও জমিন অলংকরণে নীল ছুঁয়ে গেছেন আফসানা ফেরদৌসি।

জামদানি আর কাঁথার ফোঁড় নিয়েই কাজ করেছেন নওশিন। রীমা নাজের বিষয় ছিল গয়না। বাঘের ডুরে আর ক্রস স্টিচ ছিল তাসফিয়ার বিশেষত্ব। ডেনিমের জমিনে বন্যতাকে প্রতীয়মান করেছেন সাদিয়া।

অন্যদিকে সুন্দরবনকে পোশাক আর উপস্থাপনায় তুলে ধরেন আফসানা। তাঁর কাজে বরাবরের মতো প্রাধান্য পেয়েছে বাংলাদেশের সূচিশিল্পের ঋদ্ধ ঐতিহ্য। গত কয়েকটি শোয়ের ধারাবাহিকতায় এবারও তাঁর কাপড় ক্যানভাস হয়ে উঠেছে সমাজ সচেতনতার মাধ্যম। সুন্দরবন আর জীববৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের সচেতন করতে চেয়েছেন তিনি।

নানা রঙের পোশাক পরে ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়া মডেলরা। ছবি: প্রথম আলো

এদের মধ্যে অন্যরকম সংগ্রহ উপস্থাপনা ছিল নেপালের অজয় গুরুংয়ের। আদ্যন্ত পশ্চিমা পোশাক। কোট প্যান্ট। সেখানে অনুপস্থিতি ছিল শেকড়ের সৌরভ। 

তবে বাটন মাসালা দিয়ে রানওয়ে মাত করেছেন ভারতীয় ডিজাইনার অনুজ শর্মা। আহমেদাবাদের ছেলে অনুজের এই কালেকশন ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়। বিশ্বের দশটি টেকসই কালেকশনের একটি হিসাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। বোতাম আর রাবার ব্যান্ড দিয়ে একটি পোশাককে কোনো মাত্রায় নিয়ে যাওয়া যায় তার উদাহরণ অনুজের সৃষ্টি। প্রতিটি পোশাকের প্যাটার্নও অনবদ্য আর বহুমাত্রিক। ফলে একটি পোশাক নানাভাবে পরা সম্ভব। অনুজের বাটন মাসালার শুরু কোরা রঙের কপড় দিয়ে। এরপর ঠিক যেন পরতে পরতে উন্মোচন করেছেন চোখ আর মন মাতানো সব রং। অনেকটা পাপড়ি মেলার মতোই। সেই প্যালেটে কি নেই? কমলা, গেরুয়া, নীল, সবুজ। এর মধ্যে আবার চেকও আছে; সাদাকালোটা বাদ দিলেও প্রাইম ডনা যেন গামছা চেক। চোখে লেগে থাকে।

বলতে দ্বিধা নেই সন্ধ্যার সেরা চমক অবশ্যই ছিল তেনজিং চাকমার টয় সোলজার প্রাণিত সংগ্রহে। একের পর এক পোশাকে তিনি বুলিয়ে গেছেন মুগ্ধতার পরশ। সৃজনের অনিন্দ্য মুনশিয়ানায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘আমরাও পারি’।

তাঁর মূল প্রেরণা ছিল কাঠখোদাই নকশা। যদিও তাঁর পোশাকের প্রেরণা হয়েছে ‘টয় সোলজার’ মুভি। এর সঙ্গে তিনি অসাধারণ দক্ষতা আর শিল্পনৈপূণ্যে যোগ করেন কাঠখোদাই নকশার এমব্রয়ডারি। যথার্থই এ যেন ‘পূর্ব মিলিছে পশ্চিমে’র উদাহরণ। সেটা আরও স্পষ্ট হয় এই কালেকশনে অন্য পোশাকের সঙ্গে শাড়ির দুরন্ত গাঁটছড়ায়। কাট আর প্যাটার্নের পরিমিতির সঙ্গে লাল, নীল, সবুজ, কালো, মেরুনের মেলবন্ধন পুরো সংগ্রহকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। তাঁর নিখুঁত কাজে শেকড়ের স্পর্শ রাখতেও কিন্তু ভোলেন তিনি। বরং ছোট ছোট সুচিকর্মে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। দর্শক তথা ফ্যাশনপ্রিয়দের দেখার অনাবিল আনন্দের সঙ্গে যোটক হয়েছে অনন্য অভিজ্ঞতা।

ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২০-এর দ্বিতীয় আসরের প্রথম সন্ধ্যায় ফ্যাশন শোতে মডেলরা। ছবি: প্রথম আলো

প্রথম দিন শেষে দর্শকেরা পরিমল আনন্দ নিয়েই ফিরেছেন। তবে প্রত্যাশার পারা হয়তো চড়ছে। কারণ দ্বিতীয় দিন রয়েছে শীর্ষ সারির ডিজাইনারদের উপস্থাপনা। দেশি ডিজাইনারদের তালিকায় আছেন শৈবাল সাহা, ফারাহ আনজুম বারী, মাহিন খান, এমদাদ হক, মারিয়া সুলতানা মুমু, রুপো শামস ও শাহরুখ আমীন। আর বিদেশিরা হলেন ভারতের অন্তর-অগ্নি ও সৌমিত্র মণ্ডল আর শ্রীলঙ্কার সোনালি মেরি ফার্নান্দো। দ্বিতীয় দিন ট্রেসেমে কিউর বিউটি এক্সপার্ট ফারজানা শাকিল। তিনি ফুটিয়ে তুলবেন পার্টি লুক।