বাংলাদেশের অভিজাত শাড়ি জামদানির শত শত নকশা। এসব নকশার বয়নকৌশল থাকে শুধুই বয়নশিল্পীদের মাথায়। ওস্তাদের মাধ্যমে শাগরেদ (অভিজ্ঞ তাঁতির কাছ থেকে নবীন তাঁতি) বছরের পর বছর সেই নকশা মুখস্থ করে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলেন। আজ ১৬ নভেম্বর অভিনেত্রী জয়া আহসান ফেসবুকে তিনটি ছবি শেয়ার করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, তাঁর পরনের জামদানি শাড়িটির নকশা হয়তো আর কোথাও মিলবে না। কারণ, এই নকশা যে তাঁতশিল্পী করতেন, তিনি মারা গেছেন গতকাল ১৫ নভেম্বর। জয়া আহসানের লেখাটি পড়ুন এখানে।

‘জামদানি শাড়ি আমার কাছে আমার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি অংশ। জামদানি শাড়ির প্রতিটি সুতা, প্রতিটি নকশা আমাকে নিজের পরিচয় জানান দেয়। আমি অনুভব করি এটি আমার আবেগের ভাষা, যা আমাকে সংযুক্ত করে আমার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাথে।
‘ছবিতে আমি যে সাদা রঙের অপূর্ব শাড়িটি পরে আছি, এটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের একজন তাঁতশিল্পী—ওস্তাদ আলী আকবর (৮৩) ভাই। যিনি (গত)কাল সকালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আমরা আসলেই একজন রত্ন হারিয়েছি; কারণ, এই জামদানি শাড়িটি ডিজাইন উনি ছাড়া আর কেউই করতে পারতেন না, আর হয়তো পারবেনও না।’
‘জামদানি শাড়ি তৈরি করা, নকশা করা, একটি ধৈর্য এবং পরিশ্রমের কাজ, যার তুলনায় আসলে আয়টা সে রকমভাবে হয় না। যে কারণে তাঁতিদের নেক্সট জেনারেশন আর এই কাজটি করতে উদ্বুদ্ধ হন না। আমরা যদি তাঁতিদেরকে পর্যাপ্ত সাম্মানিক এবং তাঁদের পাওনাটা দিতে পারি, তাহলে হয়তো এই শিল্পটা আজকে এই মানুষটা চলে যাওয়ার মতো করে হারিয়ে যেত না।
যেমন এই মোটিফটি শুধু উনি তৈরি করতে পারতেন। আর কোনো কারিগর পারতেন না। এই গুণটি আজ তাঁর শরীর নিভে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে গেল। একজন পরিশ্রমী, সত্যিকারের শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল। আপনারা সবাই আমাদের এই ওস্তাদ তাঁতিকে আন্তরিক প্রার্থনায় রাখুন।’