দুই বোনকে বিয়ে করে এক পরিবারের জামাই হব

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়—শিক্ষাজীবনের একেকটা ধাপ। নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়। তবে একই বন্ধুর সঙ্গে জীবনের এই তিন গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করার অভিজ্ঞতাও কারও কারও আছে। তাঁদের বন্ধুত্বটা কেমন? এই বিষয়েই পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। আজ আগস্ট মাসের প্রথম রোববার, বন্ধু দিবসে পাঠকের লেখা নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

মোস্তাইন ও তৌফিক
ছবি: সংগৃহীত

গ্রামের একটা সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কোমর নই পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমরা পড়েছি। খুব কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ায় ক্লাসের সবাইকে বড় মনে হতো। কয়েকজন বেশ চঞ্চলও ছিল। সব সময় তাই একটু ভয়ে ভয়ে থাকতাম। কারও সঙ্গে কথা বলা হয়ে উঠত না। সারাক্ষণ ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকতাম।

কয়েক দিন ক্লাস করার পর হঠাৎ লক্ষ করলাম আমার কয়েক সিট পরে একটা ছেলে বসে আছে। আচার-আচরণ আমারই মতো অনেকটা। সে-ও কারও সঙ্গে কথা বলে না। পরের দিন তার পাশে গিয়ে বসলাম। পাশাপাশি বসার কারণে কিছু কথাও হলো। এরপর কীভাবে যেন সে আমার বন্ধু হয়ে গেল! বলছি আমার জীবনের প্রথম বন্ধু, তৌফিকের কথা। বন্ধুত্ব হওয়ার পর জানতে পারলাম, তৌফিক আর আমার বাসাও একই এলাকায়।

এরপর একসঙ্গে প্রাইমারিতে যাতায়াত। মাঝেমধ্যে মারামারি, ঝগড়া হতো; কিন্তু সব সময় আমরা একসঙ্গেই থাকতাম। আমাদের রোলও ছিল পাশাপাশি—১ আর ২। তাই স্কুলের সব শিক্ষক আমাদের দুজনকে আলাদা নজরে দেখতেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে সব সময় খুব আদর পেয়েছি।

ভাগ্যক্রমে একই হাইস্কুলে চান্স পেয়ে গেলাম। দুজনই ভর্তি হলাম গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। সাইকেলে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করতাম। বিকেলে একসঙ্গে ক্রিকেট, ফুটবল। বয়ঃসন্ধির ঝাঁজও পেয়েছি তখন। মারামারি বাধলে একসঙ্গে মারামারি করতাম। কাউকে ভালো লেগে গেলে একে অপরকে সবার আগে বলতাম।

এরপর উচ্চমাধ্যমিকেও একই কলেজে চান্স পেয়ে গেলাম। দুজন প্রাইভেটও পড়তাম একই জায়গায়। একসঙ্গে বকা খেতাম খুব। কারণ, দুজনই পড়ায় অমনোযোগী হয়ে গিয়েছিলাম তখন। কখনো কখনো প্রাইভেট কিংবা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে একসঙ্গে ঘুরতে চলে যেতাম।

এরপর এল বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। আমি ভর্তির সুযোগ পেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তৌফিকের দুই জায়গায় সুযোগ হলো—ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুরুতে তৌফিক বলেছিল বিইউপিতে ভর্তি হবে। পরে কেন যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি থেকে গেল। শুরু হলো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে যাত্রা। থেকেছি একই মেসে, পাশাপাশি রুমে। জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তগুলো কেটেছে তখন। একসঙ্গে নতুন পরিবেশ দেখা, নতুন জীবন মোকাবিলা করা।

আমরা নিজেদের খুবই ভাগ্যবান মনে করি। মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করে বলি, ভবিষ্যতে দুই বোনকে বিয়ে করে আমরা একই পরিবারের জামাই হয়ে যাব। আমরা দুজনই এখন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। চাকরিজীবনেও একসঙ্গে দুজনের ঠাঁই হবে কি না, কে জানে!