তাড়া খেয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে মায়াবী এই নীলগাই

ভুট্টাখেতে আহত নীলগাই
ছবি: ফিরোজ আল সাবাহ

প্রায়ই পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের সীমান্ত অঞ্চলে চলে আসে নীলগাই। ধাওয়া খেয়ে মাঝেমধ্যে মানুষের হাতে প্রাণও হারায় অসাধারণ সুন্দর এই প্রাণী। বন্য প্রাণীর ছবি তোলার সুবাদে এমন কয়েকটি ঘটনার আমি নিজেই সাক্ষী।

গতকাল একেবারে আমার বাড়ির কাছেই এসে হাজির একটি নীলগাই। নিরীহ এই প্রাণীটি বাড়ির পাশের ভুট্টাখেতে আশ্রয় নিয়েছিল। মাথায় তখন আঘাতের দগদগে ক্ষত। মানুষের ধাওয়া খেয়ে দিগ্‌বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছিল। পুরো দুপুর খোঁজার পর দেখলাম, একটা ভুট্টাখেতের মধ্যে লুকিয়ে আছে। মাথায় রক্ত। চারদিকে শত শত উৎসুক জনতা। প্রাণীটি সম্পর্কে সবাইকে বুঝিয়ে বললাম। এলাকার মানুষ বুঝলেনও। তবে অনেকে আবার বদমতলবও যে করেননি, সেটা ভাবার কারণ নেই। স্থানীয় উৎসুক লোকজনকে শান্ত করে দ্রুত সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করলাম।

ভয়ে ভুট্টাখেতে আশ্রয় নিয়েছে নীলগাই

ভুট্টাখেতে পাহারা বসালাম, কেউ যেন নীলগাইটিকে আবার তাড়া না করেন। এখান থেকে দৌড়ে বের হলে সে অন্য এলাকায় চলে যাবে। সামনেই হাইওয়ে, গেলেই মারা পড়ার আশঙ্কা আছে। পাহারা দিতে দিতে এলাকার মানুষজনকে নীলগাই সম্পর্কে গল্প শোনালাম। গল্প শুনে সবাই খুব সংযত আচরণ করলেন। অবাক হলেন। এখন সবাই তাকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর। এরই মধ্যে একজনের আচরণে খেপে গেল জনতা। সব এলোমেলো হয়ে গেল। তবে আমি হাল ছাড়িনি। দুপুরের পর থেকে প্রাণীটির সঙ্গে লেগে থেকেছি। সন্ধ্যার দিকে প্রাণীটি পঞ্চগড়–ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্তবর্তী একটি ভুট্টাখেতে আশ্রয় নিল। রাত হয়ে যাওয়ায় আমরাও সেখান থেকে ফিরে এসেছি।

নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী

এশিয়ার অ্যান্টিলোপ–জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহদাকৃতির প্রাণী নীলগাই। দেখতে গরু, হরিণ, ঘোড়ার মত বলে অনেকে হরিণ ও ঘোড়া মনে করে ভুল করেন। নীলগাই বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি বন্য প্রাণী। গাই হিসেবে পরিচিত হলেও নীলগাই কিন্তু গরু না। বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হরিণবিশেষ। বৈজ্ঞানিক নাম boselaphus tragocamelus। প্রায় শত বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যেত নীলগাই। তারপর ১৯৪০ সালের দিকে পঞ্চগড়ে নীলগাই দেখা গিয়েছিল। এরপর কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঠাকুরগাঁও ও নওগাঁ থেকে দুটি নীলগাই উদ্ধার করে রাখা হয় রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায়।

লেখক: প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীবিষয়ক আলোকচিত্রী