Thank you for trying Sticky AMP!!

গাঁজা খেলে কী কী ক্ষতি হয়?

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভা। করোনাকালে এ সভা চলছে অনলাইনে। গত ২৪ আগস্ট ও ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে দুটি মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটা থেকে আধা ঘণ্টার এই আয়োজনে অনলাইনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভায় ২৪ আগস্ট পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল । ১৪ সেপ্টেম্বর পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল। সভা দুটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের নানা রকম প্রশ্ন থেকে নির্বাচিত কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর প্রকাশিত হচ্ছে এখানে।

অনলাইনে মাদক পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছেন ডা.মোহিত কামাল
প্রশ্ন

ধূমপান ত্যাগ করব কীভাবে?

ধূমপান ত্যাগের জন্য সবচেয়ে জরুরি নিজের ইচ্ছাশক্তি। ধূমপান ছাড়ার জন্য নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনি যত দৃঢ় থাকবেন, ততই সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে। ধূমপান আপনার নিজের এবং কাছের মানুষ বা আপনার শিশুসন্তানের জন্য পরোক্ষভাবে কী ক্ষতি ডেকে আনছে, তা জানুন। প্রয়োজনে কুফলগুলো নিজ হাতে কাগজে লিখে ফেলুন, কাগজটি সঙ্গে রাখুন এবং যখন ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে, তখন কাগজটি বের করে পড়ুন।

ধূমপান ত্যাগের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক করুন। তার আগের দিন বাসায় থাকা সিগারেট, অ্যাশট্রে ও লাইটার ফেলে দিন। পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের সহযোগিতা নিন। তাঁদের জানিয়ে রাখুন ধূমপান ত্যাগের তারিখটি। তাঁরা যেন আপনাকে ধূমপানের আহ্বান না জানান। কিংবা আপনার আশপাশে কেউ ধূমপান করলে আপনি সেখান থেকে সরে যান।

ধূমপান ত্যাগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কারণ, দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে এর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা গড়ে ওঠে। তবে ধীরে ধীরে এ সমস্যাগুলো কেটে যায়।

মুখে ‘কী যেন নেই’ ধরনের অস্বস্তি কাটাতে চিনিমুক্ত চুইংগাম, মিন্ট বা ক্যান্ডি খেতে পারেন। হাত বা আঙুলের অস্বস্তি কাটাতে মাঝেমধ্যে দুই আঙুলের ফাঁকে পেনসিল বা পেপার ক্লিপ, হাতে ছোট আকারের বল রাখতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খান। মনকে ব্যস্ত রাখুন। ম্যাগাজিন ও গল্পের বই পড়ুন, পছন্দের গান শুনুন, সুস্থ বিনোদনে অংশ নিন। প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। ধূমপায়ীদের সঙ্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আনিসুল হকের উপস্থাপনায় অনলাইনে মাদক পরামর্শ সহায়তা দিচ্ছেন ডা. আহমেদ হেলাল
প্রশ্ন

গাঁজা খেলে কী কী ক্ষতি হয়?

গাঁজা সেবনের কারণে মানসিক ও শারীরিক সব ধরনের ক্ষতি হয়। সামাজিক দক্ষতা কমে যায়। দীর্ঘদিন গাঁজা খেলে এর ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। দিন দিন গাঁজা খাওয়ার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। গাঁজা সেবনকারীরা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়। কখনো অতি আনন্দে আত্মহারা থাকে। আবার কখনো মনমরা থাকে। অনেক সময় কোনো কিছু মনে রাখাতে পারে না। অর্থহীন কথাবার্তা বলে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। চোখ লাল হয়ে যায়। প্রথম দিকে খাওয়াদাওয়া বেশি করে। ধীরে ধীরে খাওয়ার রুচি একেবারে কমে যায়। রক্তচাপ কমে যায়। বুক ধড়ফড় করে। ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে আনন্দ হারায়। নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রাখে। ঘুমের নিয়ম বলে কিছু থাকে না। মানসম্মান ও ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়। তখন অন্যকে আঘাত করে। অনেক সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। বিনা কারণে অন্যকে সন্দেহ করে। স্বাস্থ্য ভাঙতে ভাঙতে দুর্বল হয়ে পড়ে। হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একপর্যায়ে যৌনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

প্রশ্ন

গাঁজা থেকে মুক্তি চাই, কীভাবে সম্ভব?

গাঁজার নেশা থেকে মুক্তি পেতে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। কেউ যাতে গাঁজা খেতে না পারে, সে জন্য পরিবারে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশে গাঁজা সহজলভ্য, এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, কখন ফিরছে—এসব ব্যাপারে মা–বাবাকে খোঁজখবর রাখতে হবে।

সন্তানকে গুণগত সময় (কোয়ালিটি টাইম) দিতে হবে। সন্তানের বন্ধু হতে হবে। তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে। বন্ধু হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। ক্ষতিকর দিকগুলো ভালোভাবে বোঝাতে হবে। যদি কারও মধ্যে হঠাৎ করে আচরণের পরিবর্তন দেখা যায় যেমন রাত জাগে, দিনে ঘুমায়। কারণে-অকারণে মিথ্যা কথা বলে। ঠিকমতো স্কুলে যায় না, দেরি করে বাড়ি ফেরে, নতুন বন্ধুবান্ধব তৈরি হয়। অকারণে টাকা চায়। খারাপ আচরণ করে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।

গাঁজায় আসক্তির চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। এর জন্য রোগী ও তার স্বজনদের ধৈর্য ধরতে হয়। এ সমস্যার দ্রুত কোনো সমাধান নেই। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশমতো ওষুধ খেতে হবে।

গ্রন্থনা : ফেরদৌস ফয়সাল