ভালো থাকুন

সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ কেন হয়

আমাদের মস্তিষ্কে জালের মতো বিস্তৃত রক্তনালিগুলো মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। রক্তনালি ভাগ হয়ে দুটি শাখায় পরিণত হয়। রক্ত চলাচলের সময় এই ভাগ হওয়া অংশে রক্তের চাপ পড়ে বেশি। ফলে রক্তনালির এই অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। চাপ বেড়ে গেলে এই দুর্বল অংশ ফুলে যায়, যাকে বলে অ্যানিউরিজম। চাপে একসময় অ্যানিউরিজম ফেটে যেতে পারে। ফেটে যাওয়া অংশ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে মস্তিষ্কের আবরণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। একেই বলে ‘সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ’। এমন হলে দ্রুত বিশেষায়িত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

লক্ষণ কী

হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। কখনো কখনো রক্তক্ষরণের আগে রোগী মাথায় হালকা ব্যথা অনুভব করেন। পরে সেটি প্রচণ্ড রূপ নেয়। রোগের অন্যান্য উপসর্গ হলো ঘাড়ব্যথা, শরীরে অসাড়তা অনুভব, কাঁধে ব্যথা, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি ও বিভ্রান্তি, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি। সাব–অ্যারাকনয়েড হেমোরেজের লক্ষণগুলো আকস্মিকই দেখা দেয় এবং রোগী দ্রুত জ্ঞান হারাতে পারেন।

কারা ঝুঁকিতে

সাব–অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তনালি ছিঁড়ে হতে পারে, আবার মাথায় আঘাতের কারণে ঘটতে পারে। যদি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তবে এটি মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজমের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা মস্তিষ্কের ধমনির একধরনের অস্বাভাবিকতা। অ্যানিউরিজম বিস্ফোরিত হলে দ্রুত রক্তপাত হয়, জমাট রক্ত তৈরি করে। নারীদের, বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, যেসব নারী-পুরুষ ধূমপান করেন, তাঁরা ঝুঁকিতে আছেন। কখনো মস্তিষ্কে আঘাতের কারণেও এ সমস্যা হতে পারে। রক্ত পাতলা করার ওষুধের ব্যবহার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ক্রীড়াবিদ ও শ্রমিকদের যাঁরা মাথার আঘাতের ঝুঁকিতে, তাঁরা বেশি আক্রান্ত হতে পারেন।

রোগনির্ণয়

রোগনির্ণয়ে দ্রুত মাথার সিটিস্ক্যান করা প্রয়োজন। তবে রক্তক্ষরণ কম হলে সিটিস্ক্যানে এই রোগ না-ও ধরা পড়তে পারে। এমনটি হলে নিউরোলজিস্টরা মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্যকার রস নিয়ে পরীক্ষা করে এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন। অ্যানিউরিজম নির্ণয় করতে কন্ট্রাস্ট বা ডাই দিয়ে সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করতে হয়। আরও নিশ্চিত হতে মস্তিষ্কের এনজিওগ্রাম করতে হয়, যেটিকে বলা হয় ‘ডিজিটাল সাবট্রাকশন এনজিওগ্রাম’ বা সংক্ষেপে ‘ডিএসএ’।

চিকিৎসা কী

‘কয়েল অ্যাম্বোলাইজেশন’ একধরনের মিনিমাল ইনভেসিভ সার্জারি, যা রোগের আধুনিক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত। এই অস্ত্রোপচারে কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না। ক্যানুলার মাধ্যমে ক্যাথেটার ও তারের সাহায্যে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে প্রবেশ করা হয়। এরপর অ্যানিউরিজমে প্রবেশ করে কয়েল বা বিশেষ ধরনের তার বসিয়ে রক্তপাত বন্ধ করা হয়। ফলে অ্যানিউরিজম ফেটে আর রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে না। দেশেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। ঝুঁকি খুব কম। আরেকটি পদ্ধতি হলো অস্ত্রোপচার। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের মাধ্যমে অ্যানিউরিজম খুঁজে বের করে ক্লিপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

  • অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা।