সম্প্রতি ক্যাটারিংয়ের খাবার খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর খবরটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং বড় একটি সতর্কবার্তা। আমরা প্রায়ই উৎসব-অনুষ্ঠানে বাইরের খাবার খাই, কখনো বাইরের খাবার অর্ডার করে বাড়িতে আনা হয়, কিন্তু সামান্য অসতর্কতা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। খাবার থেকে বিষক্রিয়া বা ‘ফুড পয়জনিং’ আমাদের অসচেতনতার কারণেই বেশি ঘটে। এর নিরিখে কিছু জরুরি বিষয় জেনে রাখা উচিত।
সব খাবার সমান সময় ভালো থাকে না। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়। এ ছাড়া রান্না করা ডাল বা শাকসবজি গরমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। ক্যাটারিংয়ের খাবারে অনেক সময় তেল-মসলা বেশি থাকায় পচন ধরাটা খালি চোখে বোঝা যায় না, যা সবচেয়ে বিপজ্জনক।
আমরা অনেকেই বেঁচে যাওয়া খাবার পরের দিন গরম করে খাই। তবে মনে রাখবেন, খাবার বারবার গরম করা উচিত নয়। এতে পুষ্টিগুণ কমে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ পায়। ফ্রিজ থেকে বের করা খাবার সরাসরি চুলায় না দিয়ে কিছুক্ষণ সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে তারপর খুব ভালোমতো (যাতে ধোঁয়া ওঠে) গরম করতে হবে।
মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করার সময় ওভেনপ্রুফ পাত্রে ঢাকনা দিয়ে গরম করতে হবে। বেশি খাবার একসঙ্গে না দিয়ে একটা সিঙ্গেল স্তরে খাবার বিছিয়ে দিলে ভালো গরম হয়। অতিরিক্ত তাপে না দিয়ে বরং মাঝারি তাপে বেশি সময় ধরে গরম করা ভালো। ভালো করে গরম হওয়ার জন্য মাঝে একবার চামচ দিয়ে নেড়ে দেওয়া যায়। খাবার এমনভাবে গরম করতে হবে যেন এর মধ্যকার তাপমাত্রা ১৬৫ ডিগ্রি ফারেহাইটে পৌঁছায়।
রান্না করা খাবার দুই ঘণ্টার বেশি সময় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা ঠিক নয়। ফ্রিজে রাখার সময় অবশ্যই ঢাকনা দিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে রাখতে হবে। কাঁচা মাছ-মাংস এবং রান্না করা খাবার ফ্রিজের আলাদা আলাদা তাকে প্যাকেট বা বক্সে রাখা জরুরি যেন কাঁচা খাবারের জীবাণু রান্না করা খাবারে না ছড়ায়।
যেকোনো অনুষ্ঠান বা হোটেল থেকে খাবার কেনার আগে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত হোন। যদি খাবার থেকে টক গন্ধ আসে, আঠালো হয়ে যায় বা স্বাদ বদলে যায়, তবে বিন্দুমাত্র ঝুঁকিও নেবেন না। এমন খাবার খাবেন না। শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের চেয়ে কম, তাই তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
আমাদের একটু সচেতনতাই এমন করুণ মৃত্যু রুখে দিতে পারে। খাবার সামনে এলে শুধু স্বাদ নয়, তার মান ও বিশুদ্ধতা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।
ডা. কাকলী হালদার, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ